ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে দৃশ্যমান হতে শুরু করছে রাজনৈতিক হিসাব-নিকাশ। নির্বাচনে নিজেদের অবস্থান সুদৃঢ় করতে আগাম প্রস্তুতি হিসাবে ডান-বাম ও ইসলামি দলগুলোকে কাছে টানতে তৎপর দেশের অন্যতম বড় দল বিএনপি। অন্য দলগুলোর ভোট একই বাক্সে নিতে রীতিমতো টানাটানি শুরু করেছে বিএনপি ও জামায়াত। তবে নির্বাচনের তফশিল ঘোষণার পর জোট না মঞ্চ, নাকি সমঝোতা-সে বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবে দলগুলো। সংশ্লিষ্ট দলগুলোর শীর্ষ নীতিনির্ধারকদের সঙ্গে আলাপ করে জানা গেছে এসব তথ্য।
তবে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন ১৪ দল ও বিগত দিনে ওই সরকারে যুক্ত রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে জোট বা সমাঝোতার কোনো চিন্তা নেই বিএনপি ও জামায়াতের। এ দুদল ফ্যাসিবাদবিরোধী আন্দোলনে যুক্ত রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে সম্পর্ক বাড়িয়েছে। এদিকে ছাত্র নেতৃত্বের সংগঠন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন এবং জাতীয় নাগরিক কমিটির রাজনৈতিক দল ফেব্রুয়ারিতে আত্মপ্রকাশ করতে পারে। নতুন এই দল নিয়েও রাজনৈতিক মাঠে নানা আলোচনা চলছে। ছাত্রনেতাদের সঙ্গে জামায়াতের ভালো সম্পর্ক রয়েছে। আবার বিএনপির সঙ্গেও ছাত্রনেতাদের যোগাযোগ রয়েছে এবং তা আরও বাড়াতে চায় বলে জানা গেছে। বিএনপি ও জামায়াতের একাধিক নেতা জানান, আগামী নির্বাচনে জোট গঠন নিয়েই তারা বিভিন্ন দলের সঙ্গে আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছেন। জোট বা মঞ্চ যে নামেই তা গঠন হতে পারে। সেক্ষেত্রে জামায়াত চেষ্টা করছে একটি আসনে ইসলামি দলগুলোর একজন প্রার্থী থাকবে। আবার বিএনপির তৎপরতা আছে, ২০১৮ সালের স্টাইলে মিত্রদের ‘ধানের শীষ’ প্রতীক নিয়ে ভোটে অংশ নেওয়া। অর্থাৎ দুদলই ভোটের মাঠে ‘এক বাক্স’ থাকার বিষয়ে বেশ তৎপর। তবে রাজনীতিতে শেষ বলে কিছু নেই জানিয়ে দলগুলোর নেতারা বলেন, এখন যে যার মতো তৎপরতা চালাচ্ছেন। নির্বাচনের তফশিল ঘোষণা হলে অনেক চিত্রই পালটে যাবে। এমনও হতে পারে-বিএনপি-জামায়াত-ছাত্রনেতাদের নতুন দলসহ মিত্ররা একসঙ্গে থাকবে। সবকিছু নির্ভর করবে আওয়ামী লীগের ভোটে আসা না আসার ওপর।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করেন, নির্বাচনকে সামনে রেখে রাজনীতিতে একটি নতুন সমীকরণ হচ্ছে। আওয়ামী লীগ নির্বাচন করতে পারবে কিনা তা নিয়ে এখনো ধোঁয়াশা রয়েছে। সেক্ষেত্রে বিএনপি দেশের এখন অন্যতম বড় রাজনৈতিক দল। এই দলটি ইতোমধ্যে ঘোষণা দিয়েছে আগামীতে সরকার গঠন করতে পারলে ‘জাতীয় সরকার’ হবে। সেখানে ফ্যাসিবাদবিরোধী আন্দোলনসহ বিগত আন্দোলনে যেসব দল রাজপথে ছিল, তাদের সবাইকে এই জাতীয় সরকারে নেওয়া হবে। এক্ষেত্রে অন্য রাজনৈতিক দলগুলো চাইবে বিএনপির সঙ্গে থাকতে। আবার জামায়াতে ইসলামীও মাঠে বেশ সক্রিয়। কিন্তু বিগত নির্বাচনগুলো পর্যালোচনা করলে দেখা যায় জামায়াতের ভোট কিন্তু তেমন বাড়েনি। তবে বর্তমান বাস্তবতায় দলটির ভোট হয়তো বেড়েছে। মতাদর্শিক দূরত্বের কারণে অন্য ইসলামি দলগুলোর সঙ্গে জোট বা সমঝোতা হবে কিনা তাও একটা বিষয়। তবে ছাত্রদের নতুন দল হলে এবং তাদের সঙ্গে যদি জামায়াত জোট করতে পারে তাহলে ভোট বাড়বে বলে মনে করেন বিশ্লেষকরা।
জানতে চাইলে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর যুগান্তরকে বলেন, ন্যূনতম সংস্কার শেষে অতি দ্রুত একটি নির্বাচনের ব্যবস্থা করে বাংলাদেশের মানুষকে সংকট থেকে মুক্ত করতে হবে। ফ্যাসিবাদবিরোধী সব রাজনৈতিক দলের সঙ্গেই বিএনপির সুসম্পর্ক রয়েছে। আগামী নির্বাচন একক নাকি জোটগতভাবে-এটা এ মুহূর্তে বলা সম্ভব নয়। নির্বাচন এলে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে আলোচনা হয়, তারপর সিদ্ধান্ত হয়।
রাজনৈতিক বিশ্লেষক ও সিনিয়র সাংবাদিক মাসুদ কামাল যুগান্তরকে বলেন, ‘আমি মনে করি সামনে নির্বাচনকে ঘিরে দুই ধরনের মেরুকরণ থাকবে। একটি বিএনপির নেতৃত্বে মধ্যপন্থি যে রাজনৈতিক দলগুলো আছে; আর অনেকটা ধর্মভিত্তিক দল নয় সেগুলো একদিকে থাকবে। অপরদিকে ধর্মভিত্তিক দল যেগুলো আছে, সেগুলো একদিকে হওয়ার চেষ্টা করবে। কিন্তু আমার কাছে মনে হয় একদিকে হতে পারাটা হলো পৃথিবীর সবচেয়ে কঠিনতম কাজ। কারণ বিরোধটা যদি ধর্মকে কেন্দ্র করে হয়, সেটাকে মেটানোও খুব কঠিন। তারপরও সেই চেষ্টা চলছে। শেষ পর্যন্ত এমন কিছু হতে পারে, বিএনপির ইতোমধ্যে মিত্র অনেক দল আছে, এসব দল মিলে জোট হতে পারে। আরেকটা জামায়াতে ইসলামী, বিভিন্ন ধর্মভিত্তিক দল এবং সামনে নতুন একটি দল মিলিয়ে আরেকটা মেরুতে থাকতে পারে।’