ঢাকাই সিনেমার আলোচিত নায়িকা পরীমনি কাজের চেয়ে ব্যক্তিগত জীবন নিয়েই বেশি আলোচনায় থাকেন। সম্প্রতি গৃহকর্মীকে মারধরের ঘটনায় আবারও খবরের শিরোনাম হয়েছেন তিনি। পিংকী আক্তার নামের পরীমনির সেই গৃহকর্মী নায়িকার বিরুদ্ধে থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেছেন। পিংকীর অভিযোগ, পরীমনির এক বছরের দত্তক কন্যাসন্তানকে খাবার খাওয়ানোকে কেন্দ্র করে তাকে মারধর করা হয়েছে।
পরে পিংকী গণমাধ্যমে বিভিন্ন বক্তব্য দেন, যেখানে তিনি পরীমনির ব্যক্তিগত জীবন নিয়ে বেশ কিছু স্পর্শকাতর মন্তব্য করেন। এছাড়া তরুণ সংগীতশিল্পী শেখ সাদীর নামও টেনে আনেন তিনি এবং পরীমনির সঙ্গে তাকে জড়িয়ে নানা কথা বলেন।
এ ঘটনায় ক্ষোভ প্রকাশ করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে একটি দীর্ঘ পোস্ট দিয়েছেন শেখ সাদী। এতে তিনি সাংবাদিকদের ওপর বিরক্তি প্রকাশ করে লেখেন, তাদের দায়িত্বজ্ঞানহীন রিপোর্টিং অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতির জন্ম দিচ্ছে। একইসঙ্গে তিনি পরীমনির পাশে থাকার বার্তাও দিয়েছেন।
শেখ সাদী ফেসবুকে লিখেছেন, একটু ভাবেন তো, অনলাইনে আপনার ছবি পোস্ট করে একজন জানালো আপনি একজন রেইপিস্ট! যার কোন প্রমাণ নেই এবং ঘটনাটা অবাস্তব। এটা দেখার পর নিশ্চয়ই আপনার মাথাটা চক্কর দিয়ে উঠবে। ধরুন, এই পরিস্থিতিতে আপনি কোনোভাবেই সে পোস্ট সরাতে পারছেন না। মানুষ আপনার বাবা-মাকে ট্যাগ করছে। আপনার আত্মীয়-স্বজনকে ট্যাগ করছে। আপনার পাশের বাসায় থাকা লোকটাও সেটা শেয়ার করে ছিঃ ছিঃ করছে। কিন্তু আপনার কিচ্ছু করার নাই। আপনি কয়জনকে বুঝাবেন?
নায়িকা পরীমনির সেই প্রসঙ্গ টেনে তিনি লিখেছেন, মিডিয়ার এই ভিউ ব্যবসার ফাঁদে বন্দি হয়ে যদি আপনার সম্মানহানি হয়, আপনারও কিছু করার থাকে না। তখন আসলে আপনার পরিস্থিতিটা কী হতে পারে একবার কি ভেবেছেন? আপনাদের জীবনে এমন কি কখনো হয় নাই যে আপনি কোন কাজ ঠিক মত করার পরও আপনার প্রতি ক্ষোভ বা জেদের বশবর্তী হয়ে মিথ্যা ছড়ানো হয়েছে? সত্য জানার আগেই মিডিয়ার কিছু ক্ষোভ বা বানোয়াট গল্পকে আপনি সত্য ধরে নিয়ে পরীকে বুলি করছেন।
সাদী আরও লেখেন, একজন নামপরিচয়হীন মানুষ, যাকে কেউ চেনেনা, তার কথার উপর ভিত্তি করে তাকে মিডিয়ার সামনে উপস্থাপন করা হলো। তার অযাচিত কথা দেশব্যাপী ছড়ানো হলো। একবারও কি মনে হলো না সে একজন প্রতারক বা বড় মাপের মিথ্যাবাদী? সেটা যাচাই ছাড়াই সস্তা ভিউয়ের জন্য এসব প্রচার করলেন। এখানে তো আমার বা সৌরভের কথা আসার প্রশ্নই আসে না। তাই এটা ক্লিয়ার যে উক্ত ঘটনার মূল উদ্দেশ্য পরীকে হেয় করা।
পরীমনির পাশাপাশি নিজের পরিবারের উপরও এই ঘটনা প্রভাব পড়েছে বলে জানান এই তরুণ গায়ক।
সাদী লেখেন, পরীর সাথে আমি ও আমার পরিবার, মানুষের কাছে প্রশ্নবিদ্ধ হচ্ছি। যেটা আমি আর আমার পরিবার ডিজার্ভ করে না।
পরীমনি পাশে দাঁড়িয়ে সাদী লেখেন, পরী আপনাদের ভালোবাসার জন্যই আজ একজন সুপারস্টার। কিন্তু তার উপহারস্বরূপ যেকোনো বিষয়ে তার ব্যক্তিগত জীবনকে টেনে তাকে হেয় করার চেষ্টা করা হয়! কিছু ভিউ ব্যবসায়ী সাংবাদিক পরীর জীবনের খবরকে বানিয়েছে তাদের রুটি-রুজি অংশ! তারা ভুলে যায়, নায়িকা চরিত্রের বাহিরেও পরী একজন নারী, একজন মা ও সবার ঊর্ধ্বে সে একজন মানুষ।
উল্লেখ্য, সাম্প্রতিক সময়ে একাধিকবার পরীমনির সঙ্গে শেখ সাদীর নাম জড়িয়ে গণমাধ্যমে খবর প্রকাশিত হয়েছে। শোবিজ অঙ্গনে তাদের প্রেমের গুঞ্জনও বেশ জোরেশোরে ছড়িয়েছে। তবে পরীমনি ও শেখ সাদী দুজনেই স্পষ্ট করে জানিয়েছেন, তাদের মধ্যে কোনো প্রেমের সম্পর্ক নেই।
এদিকে গৃহকর্মীকে পরীমনি মারধরের ঘটনার প্রাথমিক সত্যতা পেয়েছে পুলিশ।
ভাটারা থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো. মাজহারুল ইসলাম শনিবার যুগান্তরকে বলেন, চিত্রনায়িকা পরীমনির বিরুদ্ধে তার গৃহকর্মীর দেওয়া অভিযোগের সত্যতা পাওয়া গেছে। পিংকী আক্তার নামে ওই গৃহকর্মী যে অভিযোগ দিয়েছিলেন তা জিডি হিসেবে রেকর্ড করা হয়েছে। ঘটনার তদন্ত চলমান রয়েছে।
প্রসঙ্গত, এর আগেও নানা বিতর্কিত কর্মকাণ্ডের জন্য পরীমনির বিরুদ্ধে একাধিক মামলা আদালতে চলমান রয়েছে।
২০২১ সালের ৬ জুলাই ঢাকার সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট রাজীব হাসানের আদালতে ব্যবসায়ী নাসির উদ্দিন মাহমুদ বাদী হয়ে পরীমনিসহ তিনজনের বিরুদ্ধে একটি মামলা করেন। মামলায় নাসিরউদ্দিন উল্লেখ করেন, পরীমনি ও তার সহযোগীরা অ্যালকোহল সেবনে অভ্যস্ত। তারা সুযোগ বুঝে বিভিন্ন নামিদামি ক্লাবে ঢুকে অ্যালকোহল পান করেন এবং পার্সেল নিয়ে মূল্য পরিশোধ করেন না। পরীমনি তার পরিচিত পুলিশ কর্মকর্তাদের দিয়ে মিথ্যা মামলা করিয়ে হয়রানির ভয় দেখান।
বাদী মামলায় আরও উল্লেখ করেন, পরীমনি ও তার সহযোগীরা তাকে (নাসির উদ্দিনকে) মারধর ও হত্যার হুমকি দিয়েছেন ও বোট ক্লাবে ভাঙচুর করেছেন। এ ঘটনা ধামাচাপা দেওয়ার জন্য পরীমনি সাভার থানায় বাদী নাসির উদ্দিনসহ দুজনের বিরুদ্ধে ধর্ষণচেষ্টা ও হত্যাচেষ্টার অভিযোগ তুলে মামলা করেন।
এছাড়া ২০২১ সালের ৪ আগস্ট বিকালে রাজধানীর বনানীর ১২ নম্বর সড়কে পরীমনির বাসায় অভিযান চালায় র্যাব। এ সময় ওই বাসা থেকে বিপুল পরিমাণ মাদকদ্রব্য জব্দ করা হয়। মাদকের মামলায় পরীমনির একই বছরের ৫ আগস্ট চারদিন ও ১০ আগস্ট দুদিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন আদালত।