চট্টগ্রাম জেলা আইনজীবী সমিতির নির্বাচনে ২১টি পদের বিপরীতে মনোনয়ন জমা দিয়েছেন ২১ জন প্রার্থী। তারা সবাই বিএনপি-জামায়াত পন্থী হিসেবে পরিচিত। এ পরিস্থিতিতে আওয়ামীপন্থী আইনজীবীদের অভিযোগ, বাধার মুখে তারা মনোনয়নপত্র নিতে পারেননি। ভাগাভাগি করেই সব পদে মনোনয়ন জমা দিয়েছেন বিএনপি-জামায়াত পন্থীরা।
ফলে ২১টি পদের বিপরীতে কোনো প্রতিদ্বন্দ্বি না থাকায় মনোনয়নপত্র জমা দেওয়া বিএনপি-জামায়াতপন্থীদের বিজয়ী ঘোষণা করা হচ্ছে।
শনিবার (১২ এপ্রিল) এ ফলাফল ঘোষণা করার কথা রয়েছে। এর আগে শুক্রবার মনোনয়নপত্র জমা ও যাচাই-বাছাই শেষে ওই ২১ জনকে ‘বৈধ প্রার্থী’ হিসেবে ঘোষণা করেছে নির্বাচন কমিশন। তাদের কোনো প্রতিদ্বন্দ্বি প্রার্থী নেই।
জানা গেছে, চট্টগ্রাম জেলা আইনজীবী সমিতির নির্বাচনে সভাপতি, সাধারণ সম্পাদকসহ সবকটি পদে একজন করে প্রার্থী মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। শুক্রবার ছিল মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার শেষ দিন। ১৬ এপ্রিল আইনজীবী সমিতির নির্বাচন হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু প্রতিদ্বন্দ্বি প্রার্থী না থাকায় ভোট আর হবে না।
এ বিষয়ে মুখ্য নির্বাচনি কর্মকর্তা তারিক আহমেদ বলেন, ২১টি পদের জন্য ২১ জন প্রার্থী মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। যাচাই-বাছাই করে এগুলো সঠিক পাওয়া গেছে। যেহেতু কোনও প্রতিদ্বন্দ্বি নেই, তাই তাদের বিজয়ী ঘোষণা করা হবে।
জেলা আইনজীবী সমিতির নির্বাচনে সভাপতি, সাধারণ সম্পাদকসহ ২১টি পদের মধ্যে ১৪টি পদে বিএনপি সমর্থিত প্রার্থীদের আনুষ্ঠানিকভাবে বিজয়ী ঘোষণা করা হবে। তারা হলেন- সভাপতি আবদুস সাত্তার, সাধারণ সম্পাদক হাসান আলী চৌধুরী, জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি কাজী মো. সিরু, অর্থ সম্পাদক আনোয়ার হোসেন, পাঠাগার সম্পাদক তৌহিদুল ইসলাম, সাংস্কৃতিক সম্পাদক আশরাফী বিনতে মোতালেব, ক্রীড়া সম্পাদক মঞ্জুর হোসেন এবং সদস্য আহসান উল্লাহ, আসমা খানম, বিবি ফাতেমা, মেজবাহ উল আলম, রায়হানুল ওয়াজেদ চৌধুরী, রাহিলা গুলশান ও সাজ্জাদ কামরুল হোসেন।
আর বাকি সাতটি পদে জামায়াত–সমর্থিত প্রার্থীরা রয়েছেন। তারা হলেন সহ-সভাপতি আলমগীর মোহাম্মদ ইউনুস, সহসম্পাদক ফজলুল বারী, তথ্য ও প্রযুক্তি সম্পাদক আবদুল জব্বার ও সদস্য শাহেদ হোসেন, হেলাল উদ্দিন, রোবায়তুল করিম ও মোহাম্মদ মোরশেদ।
জানতে চাইলে (নির্বাচনে সভাপতি পদের জন্য মনোনয়ন জমাদানকারী প্রার্থী) আবদুস সাত্তার বলেন, ‘আইনজীবীদের কল্যাণ ও বারের দুর্নীতি রোধে কাজ করে যাবো। রাজনীতি বারে আনবো না।’
এদিকে গত বৃহস্পতিবার জেলা আইনজীবী সমিতির নির্বাচনে মনোনয়নপত্র নিতে আওয়ামীপন্থী আইনজীবীদের বাধা দেওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে।
আওয়ামীপন্থী আইনজীবী সভাপতি প্রার্থী আবদুর রশিদ, সাধারণ সম্পাদক প্রার্থী ফখরুদ্দিন চৌধুরীসহ চার প্রার্থীর সই করা লিখিত অভিযোগে বলা হয়, বৃহস্পতিবার দুপুরে সমিতির পাঠাগার থেকে মনোনয়ন ফরম কেনার জন্য যান তারা। ওই সময় তাদের বাধা দেওয়া হয়। সেখানে আইনজীবীর পাশাপাশি কিছু বহিরাগতও ছিলেন। পরে নির্বাচন পরিচালনা কমিটির কয়েকজন সদস্যকে বলা হলেও তারা কেউ মনোনয়ন ফরম কিনতে যাওয়া আইনজীবীদের সঙ্গে যাননি।
সবশেষ চট্টগ্রাম জেলা আইনজীবী সমিতির নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় ২০২৪ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি। সেই সময় সভাপতি সাধারণ সম্পাদকসহ ১৩ পদে জয় পেয়েছিল বিএনপি-জামায়াত সমর্থিত ঐক্য পরিষদ। আর আওয়ামী লীগ সমর্থিত আইনজীবী সমন্বয় পরিষদ সহসভাপতিসহ ৭ পদে জয় পেয়েছিল। স্বতন্ত্র পেয়েছিল ১টি পদ। তবে এবার আওয়ামী এবং বাম ঘরানার কেউই মনোনয়ন ফরম কিনতে না পারার অভিযোগ উঠেছে।
বিএনপি সমর্থিত জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরাম ও বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী সমর্থিত বাংলাদেশ ল’ ইয়ার্স কাউন্সিল যৌথভাবে আইনজীবী ঐক্য পরিষদ নামে যৌথ প্যানেল ঘোষণা করেছিল। অপরদিকে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্যানেল সম্মিলিত আইনজীবী সমন্বয় পরিষদ নাম বদলে এবার স্বতন্ত্র হিসেবে ‘রশিদ-জাবেদ-মাহতাব পরিষদ’ রাখা হয়।
এর গত ১০ ফেব্রুয়ারি ভোটগ্রহণের তারিখ ঘোষণার পরও চট্টগ্রাম জেলা আইনজীবী সমিতির নির্বাচন হয়নি। ভোটের মাত্র ৬ দিন আগে ৪ ফেব্রুয়ারি সেই সময়ের নির্বাচন কমিশনের ৫ সদস্য পদত্যাগ করেছিলেন। পদত্যাগপত্রে বিভিন্নভাবে ‘হেনস্তা, ভয়ভীতি ও হুমকির সম্মুখীন’ হওয়ার কথা উল্লেখ করেছিলেন নির্বাচন কমিশনের সদস্যরা।