০৪ মে ২০২৫, রবিবার, ১২:৫৪:৪৫ অপরাহ্ন
কেমন বাংলাদেশ গড়তে চায়, মহাসমাবেশ থেকে জানাল হেফাজত
  • আপডেট করা হয়েছে : ০৩-০৫-২০২৫
কেমন বাংলাদেশ গড়তে চায়, মহাসমাবেশ থেকে জানাল হেফাজত

সংগঠনের নেতাকর্মীদের নামে মামলা প্রত্যাহার, নারীবিষয়ক সংস্কার কমিশন বাতিলসহ ৪ দফা দাবিতে শনিবার ঢাকার সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে মহাসমাবেশ করেছে হেফাজতে ইসলাম। এই মহাসমাবেশ থেকে নতুন দুটি কর্মসূচি ঘোষণা করেছে তারা। নারীর ন্যায্য অধিকার প্রতিষ্ঠার দাবিতে তিন মাসের মধ্যে বিভাগীয় সম্মেলন এবং আগামী ২৩ মে বাদ জুমা চার দফা আদায়ে বিক্ষোভ মিছিল করবে কওমি মাদ্রাসাভিত্তিক সংগঠনটি।


আজ ভোর থেকেই রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে আসা হেফাজতে ইসলামের নেতাকর্মীরা মিছিল নিয়ে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে জড়ো হতে থাকেন।সমাবেশে অংশ নিতে আসা নেতাকর্মীদের ভিড়ে ভোর থেকে শাহবাগ ও আশপাশের এলাকায় যান চলাচল সীমিত হয়ে আসে।


মহাসমাবেশে হেফাজতের আমির মুহিব্বুল্লাহ বাবুনগরীর পক্ষে লিখিত বক্তব্য পাঠ করা হয়।আজকে এই মহাসমাবেশে দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে কষ্ট করে উপস্থিত হওয়ার জন্য সবাইকে আন্তরিক মোবারকবাদ জানিয়েছেন হেফাজতের আমির।লিখিত বক্তব্যে হেফাজত কেমন বাংলাদেশ গড়তে চায়, সেই বিষয়টি তুলে ধরা হয়।


মুহিব্বুল্লাহ বাবুনগরী বলেছেন, ‘গত বছরের ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে জালিম হাসিনা পালিয়ে গেলে আমরা বিজয়ের স্বাদ লাভ করি এবং হারানো স্বাধীনতা ফিরে পাই। যা অর্জিত হয়েছে সহস্রাধিক প্রাণ ও অকল্পনীয় আত্মত্যাগের বিনিময়ে। স্বাধীনতা আল্লাহর দান— গত পনেরোটি বছর যা থেকে আমরা বঞ্চিত ছিলাম। তাই মহান আল্লাহর দরবারে শুকরিয়া আদায় করছি আলহামদুলিল্লাহ। ২০১৩ সালে শাপলার গণহত্যা, ২১ সালে মোদিবিরোধী আন্দোলনে শহিদ, পিলখানা ও চব্বিশের জুলাই-আগস্টের সব শহিদদের  মাগফিরাত কামনা করছি। আহতদের জন্য দোয়া করছি।’


হেফাজত আমির বলেন, ‘দেশে ইসলামবিরোধী গোষ্ঠী আবারো মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে। সম্প্রতি নারীবিষয়ক সংস্কার কমিশন কুরআনবিরোধী প্রতিবেদন দাখিল করেছে। সাম্রাজ্যবাদের ফান্ডখোর কুখ্যাত নারীবাদীরা এদেশের সামাজিক ও ধর্মীয় মূল্যবোধ, বিধি-বিধান, ঐতিহ্য ও পরিবারকাঠামো ধ্বংস করার পশ্চাত্য পরিকল্পনা বাস্তবায়নে মাঠে নেমেছে। অন্তর্বর্তী সরকারকে আমরা হুঁশিয়ার করে বলতে চাই, এনজিওবাদী গোষ্ঠীর প্ররোচনায় এমন কোনো হঠকারী সিদ্ধান্ত নেবেন না, যা কুরআন-সুন্নাহর বিরুদ্ধে যায়। এক্ষেত্রে আমরা কোনো ছাড় দেব না। এই বিতর্কিত কমিশন ও কুরআনবিরোধী প্রতিবেদন অবিলম্বে বাতিল করে জুলাই গণঅভ্যুত্থানের অন্যতম অংশীদার আলেম-ওলামার পরামর্শ নিয়ে নতুন কমিশন গঠন করুন।’


তিনি বলেন, হেফাজতে ইসলাম নারীর ন্যায্য অধিকার প্রতিষ্ঠায় কাজ করছে। আমরা সরকারের কাছে দাবি জানাচ্ছি, দেশের যৌতুক প্রথা বন্ধে কঠোর আইন করুন। শিক্ষা ও কর্ম ক্ষেত্রে নারীর নিরাপত্তা নিশ্চিত করুন।’ 


হেফাজত আমির বলেন, ‘এ ছাড়া গণমাধ্যম সংস্কার কমিশন ফৌজদারি দণ্ডবিধি ও সাইবার সিকিউরিটি আইন থেকে ধর্ম অবমাননার শাস্তি সংক্রান্ত ধারাগুলো বাদ দেওয়ার সুপারিশ করেছে, এটি আরেক গভীর ষড়যন্ত্র। সংখ্যাগুরু কিংবা সংখ্যালঘু— কারো ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত দেওয়ার অধিকার অন্য কারো নেই।তাই ধর্ম অবমাননার শাস্তির আইনি ধারাগুলো বহাল রেখে গণমাধ্যম সংস্কার কমিশনের ওই নির্দিষ্ট সুপারিশগুলো বাদ দিতে হবে। শুধু তা-ই নয়, আল্লাহ ও তার রাসুল (সা.)-এর নামে কটূক্তি বা বিষোদ্গার বন্ধে সর্বোচ্চ শাস্তির আইন করতে হবে।’ 


তিনি বলেন, ‘৫ আগস্টের এই বিজয়কে আমাদের কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যে নিয়ে যেতে হবে। এমন একটি ন্যায়ভিত্তিক সংবিধান ও সরকারব্যবস্থা গড়ে তুলতে হবে, যাতে করে এই বাংলাদেশের মাটিতে আর কখনো কোনো ফ্যাসিস্ট স্বৈরাচারের জন্ম না হয়।’ 


হেফাজত আমির বলেন, ‘আমরা এমন বাংলাদেশ গড়তে চাই, যেখানে সংখ্যালঘুসহ সব নাগরিকের জানমালের নিরাপত্তা, ধর্মীয় স্বাধীনতা ও ধর্ম পালনের অধিকার সুরক্ষিত থাকবে। কথা বলার স্বাধীনতা থাকবে। নাস্তিকতা ও মুক্তমনা চর্চার নামে কারও ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত দেওয়ার সুযোগ থাকবে না। সংখ্যালঘুদের রাজনীতির বলির পাঁঠা বানানো যাবে না।’


তিনি বলেন, ‘দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষায় এমন একটি বিভেদমুক্ত সমাজ ও রাষ্ট্রব্যবস্থা আমাদের প্রতিষ্ঠা করতে হবে, যেখানে কাউকে গুম-খুন, জেল-জুলুম ও পুলিশি নির্যাতন করা হবে না। গণহত্যার বিচারের পাশাপাশি ভারতীয় আধিপত্যবাদ ও আওয়ামী ফ্যাসিবাদের দালালদেরও বিচার করা হবে। আমরা এদেশে ন্যায়বিচার ও ন্যায়ের শাসন প্রতিষ্ঠা করতে চাই।’ 


বক্তব্যে শেষে ওলামায়ে কেরাম, তোলাবা ও ধর্মপ্রাণ তৌহিদি জনতাকে ধন্যবাদ জানান হেফাজত আমির।


শেয়ার করুন