০৫ মে ২০২৫, সোমবার, ০২:০৯:০৮ অপরাহ্ন
পারমাণবিক অস্ত্র ছাড়াই ইউক্রেন যুদ্ধ জিতবে রাশিয়া: পুতিন
  • আপডেট করা হয়েছে : ০৫-০৫-২০২৫
পারমাণবিক অস্ত্র ছাড়াই ইউক্রেন যুদ্ধ জিতবে রাশিয়া: পুতিন

রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন রোববার এক মন্তব্যে বলেছেন, ইউক্রেনে রাশিয়ার যথেষ্ট শক্তি ও সম্পদ রয়েছে যুদ্ধকে ‘যৌক্তিক পরিণতি’তে নিয়ে যাওয়ার জন্য।  তবে তিনি আশা প্রকাশ করেছেন, এই যুদ্ধে পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহারের প্রয়োজন হবে না।


রোববার (৪ মে) এক প্রতিবেদনে এ খবর দিয়েছে বার্তাসংস্থা সিএনএন।


২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে ইউক্রেনে রুশ সেনা প্রবেশের নির্দেশ দেন পুতিন। এরপর থেকেই শুরু হয় দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ পরবর্তী ইউরোপের সবচেয়ে বড় স্থলযুদ্ধ এবং শীতল যুদ্ধের সময়ের পর পশ্চিমা বিশ্বের সঙ্গে মস্কোর সবচেয়ে বড় সংঘাত।


এই যুদ্ধে লক্ষাধিক সৈন্য নিহত বা আহত হয়েছে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বারবার এটিকে ‘রক্তস্নান’ আখ্যা দিয়ে দ্রুত অবসান চান বলে মন্তব্য করেছেন। তার প্রশাসন এটিকে যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়ার মধ্যকার এক প্রকার প্রক্সি যুদ্ধ হিসেবে বর্ণনা করছে।


রুশ রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনের তথ্যচিত্র ‘রাশিয়া, ক্রেমলিন, পুতিন, ২৫ বছর’-এ সাংবাদিকের প্রশ্নের জবাবে পুতিন বলেন, ‘তারা আমাদের উস্কে দিতে চেয়েছিল, যাতে আমরা ভুল করি। এখনো এমন কোনো প্রয়োজন হয়নি (পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহারের), এবং আমি আশা করি তা লাগবেও না।’


তিনি বলেন, ‘২০২২ সালে যা শুরু হয়েছিল, আমরা সেটিকে রাশিয়ার প্রত্যাশিত ফলাফলের দিকে নিয়ে যেতে যথেষ্ট শক্তিশালী।’


ট্রাম্প সম্প্রতি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেছেন, মস্কো ও কিয়েভের মধ্যে সমঝোতা না হওয়ায় তিনি হতাশ। তবে ক্রেমলিনের ভাষ্য অনুযায়ী, এই সংঘাত এতটাই জটিল যে ওয়াশিংটন যে দ্রুত সমাধান চায়, তা বাস্তবে কঠিন।


এদিকে সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন, পশ্চিম ইউরোপীয় নেতারা ও ইউক্রেন এই আগ্রাসনকে এক ‘সাম্রাজ্যবাদী ভূমি দখলের চেষ্টা’ হিসেবে দেখে এসেছেন এবং রুশ বাহিনীকে পরাজিত করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন।  রাশিয়া বর্তমানে ইউক্রেনের প্রায় এক-পঞ্চমাংশ অঞ্চল নিয়ন্ত্রণ করছে।


পুতিন এই যুদ্ধকে রাশিয়া-আকাঙ্ক্ষিত একটি মোড় পরিবর্তনের মুহূর্ত হিসেবে দেখছেন। তার অভিযোগ, ১৯৮৯ সালে বার্লিন প্রাচীর ভেঙে যাওয়ার পর পশ্চিমারা রাশিয়াকে অপমান করেছে, ন্যাটোকে সম্প্রসারণ করেছে এবং মস্কোর ‘প্রভাব বলয়ে’ অনুপ্রবেশ ঘটিয়েছে।


ট্রাম্প এই সংঘাত বিশ্বযুদ্ধের দিকে গড়াতে পারে বলে সতর্ক করেছেন।  সাবেক সিআইএ পরিচালক উইলিয়াম বার্নস ২০২২ সালের শেষ দিকে বলেছিলেন, রাশিয়া ইউক্রেনের বিরুদ্ধে পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহার করতে পারে—যদিও মস্কো তা নাকচ করে।


পুতিনের ২৫ বছর


পুতিন ছিলেন সাবেক কেজিবি লেফটেন্যান্ট কর্নেল।  ১৯৯৯ সালের ৩১ ডিসেম্বর বরিস ইয়েলৎসিনের কাছ থেকে তিনি প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব নেন। জোসেফ স্টালিনের পর তিনিই সবচেয়ে দীর্ঘমেয়াদি ক্রেমলিন নেতা।


রুশ বিরোধীরা, যারা এখন জেলে বা বিদেশে, পুতিনকে একজন একনায়ক হিসেবে দেখেন, যিনি চাটুকারিতা ও দুর্নীতির ওপর নির্ভর করে একটি দুর্বল শাসনব্যবস্থা গড়ে তুলেছেন এবং দেশকে বিশৃঙ্খলার দিকে নিয়ে যাচ্ছেন।


তবে সমর্থকরা মনে করেন, পুতিন একজন ত্রাণকর্তা, যিনি পশ্চিমাদের ঔদ্ধত্যের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়েছেন এবং ১৯৯১ সালে সোভিয়েত ইউনিয়নের পতনের পর যে বিশৃঙ্খলা ছিল, তা সমাধান করেছেন।  রাশিয়ার রাষ্ট্রীয় জরিপ অনুযায়ী, তার জনপ্রিয়তা ৮৫ শতাংশের ওপরে।


তথ্যচিত্রটিতে দর্শকদের সামনে পুতিনের ব্যক্তিগত জীবনের বিরল এক ঝলক তুলে ধরা হয়। ক্রেমলিনের ব্যক্তিগত রান্নাঘরে তিনি সাংবাদিক পাভেল জারুবিনকে চকলেট ও এক ধরনের রাশিয়ান টক দুধ পানীয় অফার করতে দেখা যায়।


পুতিন জানান, ২০০২ সালে ‘নর্দ-অস্ট’ থিয়েটার জিম্মি সংকটের সময় তিনি প্রথম প্রার্থনায় হাঁটু গেড়েছিলেন। ওই ঘটনায় চেচেন জঙ্গিরা ৯০০ জনের বেশি মানুষকে জিম্মি করে এবং অন্তত ১৩০ জন নিহত হয়।


নিজের ২৫ বছরের শাসন সম্পর্কে পুতিন বলেন, ‘আমি নিজেকে কোনো রাজনীতিক মনে করি না। আমি এখনো রাশিয়ার কোটি মানুষের মতোই একই বাতাসে নিঃশ্বাস নেই। এটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। ঈশ্বর এটি এটি যতদিন সম্ভব বজায় রাখুক।’


শেয়ার করুন