২৮ জুন ২০২৫, শনিবার, ০৬:৩২:৪৮ অপরাহ্ন
রুয়ান্ডা ও কঙ্গোর মধ্যে শান্তিচুক্তি: ট্রাম্পের খনিজ সম্পদ নিশ্চিত করার দাবি
  • আপডেট করা হয়েছে : ২৮-০৬-২০২৫
রুয়ান্ডা ও কঙ্গোর মধ্যে শান্তিচুক্তি: ট্রাম্পের খনিজ সম্পদ নিশ্চিত করার দাবি

রুয়ান্ডা ও কঙ্গো ডেমোক্রেটিক রিপাবলিক (ডিআরসি) গতকাল শুক্রবার যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটনে একটি শান্তিচুক্তিতে স্বাক্ষর করেছে। এতে দুই দেশ হাজার হাজার মানুষের প্রাণহানির ঘটনায় ইতি টানতে সম্মত হয়েছে এবং তারা বিদ্রোহীদের প্রতি সমর্থন বন্ধের অঙ্গীকার করেছে। চুক্তিটি যুক্তরাষ্ট্র, কাতার এবং আফ্রিকান ইউনিয়নের মধ্যস্থতায় সম্পন্ন হয়।


চুক্তিতে স্বাক্ষর করেছেন দুই দেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী।


উপস্থিত ছিলেন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও। তিনি বলেছেন, ‘এখনও অনেক কাজ বাকি, তবে এই চুক্তি মানুষকে একটি ভালো জীবনের স্বপ্ন দেখার সুযোগ করে দিচ্ছে।’

ডিআরসির পররাষ্ট্রমন্ত্রী থেরেসে কাইকওয়াম্বা ওয়াগনার বলেন, ‘এই চুক্তিতে স্বাক্ষরের মাধ্যমে আমরা একটি সাধারণ সত্য পুনর্ব্যক্ত করছি—শান্তি একটি পছন্দ, কিন্তু এটি আন্তর্জাতিক আইন, মানবাধিকার এবং সার্বভৌমত্ব রক্ষার দায়বদ্ধতারও বিষয়।’


চুক্তিটি নিয়ে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প নিজেকে কৃতিত্ব দিয়েছেন এবং প্রকাশ্যে অভিযোগ করেছেন, তিনি এখনো নোবেল শান্তি পুরস্কার পাননি।


সংবাদমাধ্যমের সামনে ট্রাম্প বলেন, ‘আমরা কঙ্গো থেকে অনেক খনিজ সম্পদের অধিকার পেতে যাচ্ছি।’

উল্লেখ্য, কঙ্গোতে লিথিয়াম ও কোবাল্টসহ বিপুল খনিজ সম্পদ রয়েছে যা বৈদ্যুতিক যানবাহনসহ আধুনিক প্রযুক্তিতে অপরিহার্য এবং এই খাতে চীন ইতোমধ্যেই শক্ত অবস্থান তৈরি করেছে। ট্রাম্প বলেন, ‘আমি এই সংঘাত সম্পর্কে তেমন জানতাম না। আমি শুধু জানতাম, তারা বহু বছর ধরে একে অপরকে হামলা করছিল।


২০১৮ সালের নোবেল শান্তি পুরস্কার বিজয়ী কঙ্গোর স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞ ডেনিস মুখওয়েগে চুক্তির তীব্র সমালোচনা করেছেন। তিনি এক বিবৃতিতে বলেন, ‘এই চুক্তি কার্যত রুয়ান্ডা ও যুক্তরাষ্ট্রকে পুরস্কৃত করছে, কঙ্গোর প্রাকৃতিক সম্পদ লুণ্ঠনকে বৈধতা দিচ্ছে এবং ন্যায়বিচারকে বলি দিয়ে এক ধরনের ভঙ্গুর ও অস্থায়ী শান্তি প্রতিষ্ঠার চেষ্টা চলছে।’


চুক্তিটি এমন সময়ে হয়েছে, যখন এম২৩ বিদ্রোহী গোষ্ঠী (যাদের রুয়ান্ডার সঙ্গে গভীর সম্পর্ক রয়েছে) চলতি বছর ডিআরসির পূর্বাঞ্চলে বিস্তীর্ণ এলাকা দখল করে নেয়। যার মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ শহর গোমাও রয়েছে। যদিও চুক্তিতে এম২৩-এর দখল করা এলাকা সম্পর্কে স্পষ্ট কিছু বলা হয়নি, তবে এতে রুয়ান্ডাকে প্রতিরক্ষামূলক পদক্ষেপ বন্ধের আহ্বান জানানো হয়েছে।


রুয়ান্ডা সরাসরি এম২৩-এর প্রতি সমর্থন দেওয়ার কথা অস্বীকার করলেও তারা ১৯৯৪ সালের গণহত্যায় জড়িত হুতু জাতিগোষ্ঠীর স্থাপিত বিদ্রোহী গোষ্ঠী ডেমোক্রেটিক ফোর্সেস ফর দ্য লিবারেশন অফ রুয়ান্ডা ( এফডিএলআর)-এর অবসান দাবি করেছে।


নতুন চুক্তিতে এফডিএলআরকে ‘নিষ্ক্রিয় করার’ পদক্ষেপের কথা বলা হয়েছে। রুয়ান্ডার পররাষ্ট্রমন্ত্রী অলিভিয়ের এনদুহুনগিরেহে বলেন, ‘প্রথম কাজ হবে ‘এফডিএলআর’ নিষ্ক্রিয় করার জন্য একটি কার্যকরী পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করা এবং এর সঙ্গে রুয়ান্ডার প্রতিরক্ষামূলক পদক্ষেপ তুলে নেওয়া।’


তিনি আরো বলেন, ‘এই অঙ্গীকারের ভিত্তিতে আমরা একটি যাচাইযোগ্য প্রক্রিয়ার মাধ্যমে এফডিএলআর এবং সংশ্লিষ্ট মিলিশিয়াদের প্রতি রাষ্ট্রীয় সমর্থনের অবসান ঘটাব।’


উভয় দেশই যুক্তরাষ্ট্রের সমর্থন পেতে আগ্রহী। ডিআরসি, ইউক্রেনের সঙ্গে ট্রাম্প প্রশাসনের খনিজ সম্পদ চুক্তির আদলে একটি খনিজ চুক্তি প্রস্তাব করেছে। অন্যদিকে, রুয়ান্ডা যুক্তরাষ্ট্র থেকে বহিষ্কৃত অভিবাসীদের গ্রহণ নিয়ে আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছে—যা ট্রাম্পের প্রশাসনিক অগ্রাধিকারের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ।


রুয়ান্ডা, আফ্রিকার সবচেয়ে স্থিতিশীল দেশগুলোর একটি। আগেই যুক্তরাজ্যের সঙ্গে একটি অভিবাসন চুক্তিতে পৌঁছেছিল, যা নতুন লেবার সরকার বাতিল করে দেয়। চুক্তির মাধ্যমে আফ্রিকার এই সংঘাতপ্রবণ অঞ্চলে শান্তির নতুন সম্ভাবনা তৈরি হলেও এর রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক প্রেক্ষাপট নিয়ে প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে।


সূত্র : এএফপি


শেয়ার করুন