ঢাকা মহানগর দক্ষিণ যুবলীগের বহিষ্কৃত সভাপতি ইসমাইল হোসেন চৌধুরী সম্রাটের জামিন বাতিল করে হাইকোর্টের আদেশের বিরুদ্ধে আবেদনের শুনানির জন্য ৩০ মে (সোমবার) দিন ধার্য করেছেন চেম্বার আদালত।
হাইকোর্টের আদেশ স্থগিত চেয়ে সম্রাটের আবেদনের শুনানি নিয়ে সোমবার (২৩ মে) আপিল বিভাগের চেম্বার বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম এ আদেশ দেন।
আদালতে সম্রাটের পক্ষে শুনানি করেন ব্যারিস্টার রোকন উদ্দিন মাহমুদ। দুদকের পক্ষে ছিলেন অ্যাডভোকেট খুরশিদ আলম খান।
এর আগে গত ১৮ মে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ যুবলীগের বহিষ্কৃত সভাপতি ইসমাইল হোসেন চৌধুরী সম্রাটের জামিন বাতিল করেন হাইকোর্ট। একইসঙ্গে তাকে ৭ দিনের মধ্যে আত্মসমর্পণের নির্দেশ দিয়েছেন আদালত।
বিচারপতি মো. নজরুল ইসলাম তালুকদার এবং বিচারপতি কাজী মো. ইজারুল হক আকন্দের হাইকোর্ট বেঞ্চ এ আদেশ দেন।
ওইদিন আদালতে সম্রাটের পক্ষে শুনানি করেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী মনসুরুল হক চৌধুরী। দুদকের পক্ষে শুনানি করেন অ্যাডভোকেট খুরশিদ আলম খান।
আদেশের পর অ্যাডভোকেট খুরশিদ আলম খান বলেন, হাইকোর্ট আদেশে বলেছেন, বিচারক মামলার গুণাগুণ বিচার না করে, শুধু মেডিকেল গ্রাউন্ডে এ জামিন দিয়েছেন। বিচারক এই জামিন দিয়েছেন ২০২০ এবং ২০২১ সালের প্রথম দিকের দুটি মেডিকেল রিপোর্টের ভিত্তিতে, শেষের দিকে লিখে দিয়েছেন আগামী ৯ তারিখে (৯ জুন) রিপোর্ট দাখিল করতে হবে।
দুদকের আইনজীবী বলেন, ‘আমাদের যুক্তি ছিল কেউ যদি মেডিকেল গ্রাউন্ডে জামিন চান তাহলে বিচারককে মেডিকেল রিপোর্ট কল করতে হবে, রিপোর্ট পর্যালোচনা করতে হবে এবং দুইপক্ষকে শুনতে হবে। তারপর জামিন দেবেন কি না আদালত সিদ্ধান্ত নেবেন। কিন্তু বিচারক ‘ঘোড়ার আগে গাড়ি’ জুড়ে দিয়েছেন। আদেশে ঠিক এভাবে অবজারভেশন দিয়েছেন হাইকোর্ট।’
খুরশিদ আলম খান বলেন, জামিন দেওয়ার আগে বিচারকের উচিত ছিল ৯ জুন পর্যন্ত মেডিকেল বোর্ডের রিপোর্ট দেখে ওনার জামিনের বিষয়টি দেখা, তারপর কনসিডার করবেন বা রিজেক্ট করবেন। কিন্তু সেখানে সেই ব্যত্যয় ঘটেছে।
এছাড়া অর্থপাচার প্রতিরোধ আইনের ১৩ ধারায় জামিনের কিছু শর্ত রয়েছে উল্লেখ করে দুদক আইনজীবী বলেন, সেসব শর্তও উনি (বিচারক) পালন করেননি। আদালত বিচারককে সতর্ক করে দিয়েছেন, ভবিষ্যতে যাতে এ ধরনের ভুল না হয়।
সম্রাটের আইনজীবী অ্যাডভোকেট মুনসুরুল হক চৌধুরী ঢাকা পোস্টকে বলেন, নিম্ন আদালতের আদেশে সামান্য ত্রুটির কারণে হাইকোর্ট সম্রাটের জামিন বাতিল করেছেন। সম্রাট এখনো অসুস্থ, আমি আদালতে বলেছি তিনি হাসপাতালের সিসিইউতে ভর্তি আছেন। মেডিকেল গ্রাউন্ডেই আদালতে আত্মসমর্পণ করে নতুন করে জামিন আবেদন করব।
গত ১১ মে ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-৬-এর বিচারক আল আসাদ মো. আসিফুজ্জামান অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে করা দুদকের মামলায় সম্রাটকে জামিন দেন। অস্ত্র, মাদক ও অর্থপাচারের মামলার পর অবৈধ সম্পদ অর্জনের মামলায় জামিনের পর সম্রাটের বিরুদ্ধে আর কোনো মামলা না থাকায় মুক্তিতে বাধা নেই বলে জানিয়েছিলেন তার আইনজীবী।
এদিকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বিএসএমএমইউ) চিকিৎসাধীন সম্রাটের উন্নত চিকিৎসা দরকার বলে জানিয়েছেন হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. নজরুল ইসলাম খান। গত সোমবার তিনি বলেন, যুবলীগ নেতা সম্রাটের চিকিৎসার বিষয়ে বোর্ড মিটিং হয়েছে। সেখানে সিদ্ধান্ত হয়েছে তার উন্নত চিকিৎসা দরকার। তার চিকিৎসা দেশেও হতে পারে, বিদেশেও হতে পারে।
সম্রাটের বিরুদ্ধে মোট চারটি মামলা দায়ের করা হয়। মামলা চারটি হলো- অস্ত্র, মাদক, অর্থপাচার এবং দুদকের দায়ের করা মামলা। বর্তমানে সব মামলায় তিনি জামিনে রয়েছেন।
সবশেষ গত ১১ মে অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে করা দুদকের করা মামলায় জামিন পান সম্রাট। ক্যাসিনোকাণ্ডে ২০১৯ সালের ৭ অক্টোবর সম্রাটকে কুমিল্লার চৌদ্দগ্রাম থেকে গ্রেপ্তার করে র্যাব।