জ্বালানি তেলের ঊর্ধ্বগতির সাথে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে সকল কাঁচাবাজারেরর দাম। পিছিয়ে নেই ডিম মুরগির দাম। মাত্র কয়েকদিনের ব্যবধানে ব্রয়লার মুরগির দাম প্রতিকেজিতে ২৫ থেকে ৩০ টাকা বৃদ্ধি পেয়েছে। আর ডিমের হালিতে দাম ৬ টাকা বেড়ে দাড়িয়েছে ৪৫ টাকায়।
শুক্রবার (১২ আগস্ট) রাজশাহীর সাহেববাজার, নিউ মার্কেট মাস্টার পাড়াসহ বিভিন্ন এলাকায় ঘুরে এমন চিত্র দেখা যায়।
ব্রয়লার মুরগি প্রতিকেজি বিক্রি হচ্ছে ১৭০ থেকে ১৮০ টাকা, যা কয়েকদিন আগে ছিল ১৫০ টাকা । আর সোনালি মুরগি কেজিপ্রতি বিক্রি হচ্ছে ২৬০ থেকে ২৭০ টাকা। যা গতকালই ছিল কেজিপ্রতি ছিলো ২৩০ টাকা।
এদিকে বাড়তে শুরু করে পেঁয়াজের দামও। ৪০ টাকা কেজি বিক্রি হওয়া দেশি পেঁয়াজ ১০ টাকা বেড়ে ৫০ টাকা কেজিদরে বিক্রি হচ্ছে। রসুন কেজিপ্রতি ৩০ টাকা বেড়ে দাড়িয়েছে ১১০ টাকায়। আদা কেজিতে ২০ টাকা বেড়ে বিক্রি হচ্ছে ১০০ টাকায়।
সাহেববাজারের মুরগি দোকানদার মিঠু হোসেন বলেন, কয়েকদিন আগে ব্রয়লার মুরগি ১৪৫ টাকা কেজি বিক্রি হয়েছে। যা দাম বেড়ে দাড়িয়েছে ১৭০ থেকে ১৮০ টাকায়। ব্রয়লারের আমদানী আছে, দামও আছে। সোনালি মুরগির দাম বাড়ছে কারণ বাজারে সোনালি মুরগি একটু কম। সোনালি ২৫০ টাকা, কক মুরগি ২৫০ টাকা, হাঁস ৩৩০ টাকা, রাজহাঁস ৪৫০ টাকা কেজি বিক্রি করছি।” দাম আরো বাড়বে এমনটা প্রত্যাশা এই মুরগি ব্যবসায়ীর।
একই বাজারের ফাহিম ডিম ভান্ডারের মালিক মাসুদ রানা বলেন, “ডিমের দামে খামারিরা কিছুটা লাভবান হচ্ছেন। খাবারের দাম বেশি থাকলে লাভ কিছুটা কম হয়। লাল ডিম পাইকারিতে হালি ৪৪ টাকা টাকা আর সাদা ডিম ৪০ টাকা। হাঁসের ডিম ৪৮ টাকা। ডিমের দাম আরও বাড়বে। বাজারে ডিমের ঘাটতি আছে বললেই চলে।”
রাজশাহীর পবা উপজেলার পারিলা এলাকার লেয়ার খামারি আব্দুল মজিদ বলেন, “গত দুই বছর ধরে পাঁচ-ছয় দফায় পোল্ট্রি ফিডের দাম বেড়েছে। আমরা লোকসানে লোকসানে শেষ হয়ে গেছি। গত মাসেও খাদ্যের দাম বেড়েছে। আগে ১৯’শ টাকায় যে খাদ্য কিনেছি সেই খাদ্য এখন ৩২’শ ৫০ টাকা বস্তা। তবে, ডিমের দাম বাড়ার কারণে লাভ হচ্ছে। মিথ্যে বলবনা- ১ হাজার ডিমে এখন দেড়-দু হাজার টাকা লাভ হচ্ছে।”
তিনি আরও বলেন, “বর্তমানে খামারে লাল ডিমের পাইকারি রেট ১ হাজার ২০টাকা শ। সাদা ডিম সাড়ে ৯’শ টাকা একশ ডিমের দাম। বাজারে এরচেয়ে কিছু বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে।”
মুরগির দাম বাড়তি থাকায় মাংস উৎপাদনের ব্রয়লার, সোনালি, কক মুরগির বাচ্চা আবারো খামারে তুলতে শুরু করেছেন খামারিরা। এমনই জানিয়েছেন রাজশাহী পোল্ট্রি এসোসিয়েশন।
রাজশাহী পোল্ট্রি অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক এনামুল হক বলেন, চারিদিকে সবকিছুর দাম যেভাবে বাড়ছে ডিম-মুরগির দাম বাড়া অসম্ভব নয়। অবহেলিত এ খাতের মাথা চাড়া দেওয়ার সময় হয়ত চলে এসেছে। রাজশাহীতে করোনায় ৭০ ভাগ খামার বন্ধ। মাঝখানে উৎপাদন খরচ আরো বেড়ে গেলো, কারণ ভুট্টা, সয়াবিন মিল, প্রোটিনের দাম বেড়েছে। রেডি মুরগির দাম কমায় খামারিরা আরো বিপাকে পড়েছিল। কয়েকমাস আগে খামারিরা বাচ্চা তোলা বন্ধ করে দেয় ফলে দেখা যায় সেই সংকট এখন। ৫০ শতাংশ খামারে মুরগি নেই। এই কারনেই দাম বেড়েছে। এই দাম আর একটু বাড়ার পর কমতে থাকবে।
তিনি আরও বলেন, বর্তমানে লেয়ার মুরগির বাচ্চা খামারিরা তুলতে শুরু করেছেন। কারণ দীর্ঘমেয়াদী এই প্রজেক্ট। ইউক্রেন রাশিয়া যুদ্ধের কারণে তখন খামারিরা ভয় পেয়ে বাচ্চা তোলেননি। আগামীর ভবিষৎ চিন্তা করে খামারিরা আবার নামছেন মাঠে।