২৬ এপ্রিল ২০২৪, শুক্রবার, ০২:৫১:১৩ পূর্বাহ্ন
৮ বছরেও চালু হয়নি দৌলৎগঞ্জ স্থলবন্দর
  • আপডেট করা হয়েছে : ১৩-০৯-২০২২
৮ বছরেও চালু হয়নি দৌলৎগঞ্জ স্থলবন্দর

ভিত্তিপ্রস্তর উদ্বোধনের আট বছর পার হলেও চুয়াডাঙ্গার দৌলৎগঞ্জ-মাজদিয়া স্থলবন্দরের কার্যক্রম চালু হয়নি। ফলে আশায় বুক বাধা জীবননগর উপজেলাবাসীর মধ্যে বন্দরটি চালুর ব্যাপারে হতাশা কাজ করছে।


স্থানীয়রা জানান, দৌলৎগঞ্জ স্থলবন্দর চুয়াডাঙ্গা জেলার জীবননগর উপজেলায় অবস্থিত। আর ভারতের পশ্চিমবঙ্গের নদীয়া জেলার অন্তর্গত মাজদিয়া সীমান্ত এ বন্দরের বিপরীতে অবস্থিত। এ বন্দরটি চালু হলে সহজেই ভারতের সঙ্গে বিভিন্ন পণ্য আমদানি-রপ্তানি করা যাবে। ঢাকা থেকে কলকাতার দূরত্ব প্রায় ৭০ কিলোমিটার কমে যাবে। দ্রুত সময়ে ভারত থেকে পণ্য আমদানি করা যাবে। রাজস্ব আয়ও বেশি হয়ে।


আমদানি ও রপ্তানিকারকরা জানান, বর্তমানে যশোর বেনাপোল বন্দর দিয়ে ৫০০-৬০০ ট্রাক আসা-যাওয়া করে। সেগুলো খালাস করতে তিন থেকে ১৮ দিন পর্যন্ত সময় লেগে যায়। এতে দারুণভাবে আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়তে হয়। দৌলৎগঞ্জ পূর্ণাঙ্গ স্থলবন্দর হলে বেনাপোল স্থলবন্দরের ওপর থেকে যেমন চাপ কমবে ঠিক তেমনি আমদানি-রপ্তানি সংশ্লিষ্টদের আর্থিক ক্ষতি অনেকটাই কমে আসবে। এছাড়া এখানে স্থানীয় কয়েকশ মানুষের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা হবে।



দৌলৎগঞ্জ-মাজদিয়া স্থলবন্দর বাস্তবায়ন কমিটির সভাপতি গোলাম মোর্তূজা জানান, ১৯৫৩ থেকে ১৯৬৫ সাল পর্যন্ত দৌলৎগঞ্জ-মাজদিয়া স্থলবন্দরটি শুল্ক স্টেশন হিসেবে চালু ছিল। কিন্তু ১৯৬৫ সালে পাক-ভারত যুদ্ধের সময় শুল্ক স্টেশনটি বন্ধ হয়ে যায়। পরে বাংলাদেশ সরকারের জাতীয় রাজস্ব বোর্ড ১৯৭২ সালে শুল্ক স্টেশনটি ফের চালুর নির্দেশ দেয়। পরবর্তীতে আবারো এটি বন্ধ হয়ে যায়। এরপর ১৯৯৮ সালের ১৫ জুলাই জাতীয় রাজস্ব বোর্ড আবার শুল্ক স্টেশনটি চালুর প্রজ্ঞাপন জারি করে বন্দরটিতে ১৯টি পণ্য আমদানির অনুমতি দেয়। পরবর্তীতে ২০০৯ সালের ১১ জুন আরেকটি প্রজ্ঞাপনে শুল্ক স্টেশন কার্যকর করতে সংশ্লিষ্ট সব দফতরকে নির্দেশ দেওয়া হয়। সেটাও আলোর মুখ দেখেনি।


তিনি আরও বলেন, এর আগে নৌপরিবহন মন্ত্রণালয় ২০১৩ সালের ৩১ জুলাই জীবননগর দৌলৎগঞ্জ শুল্ক স্টেশনটিকে পূর্ণাঙ্গ স্থলবন্দর ঘোষণা করে গেজেট প্রকাশ করেছিল। সে সময় একই বছর ২৪ আগস্ট তৎকালীন নৌপরিবহনমন্ত্রী মোহাম্মদ শাজাহান খাঁন চালুর অপেক্ষায় থাকা এ বন্দরের ভিত্তিপ্রস্তরও উদ্বোধন করে গিয়েছিলেন। এরপর ২০১৪ সালের ৪ জুন তিনিসহ তৎকালীন ভারতীয় রাষ্ট্রদূত পংকজ শরন আবারো বন্দরের জন্য প্রস্তাবিত জায়গা পরিদর্শন করেন। সে সময় বাংলাদেশ-ভারত সরকারের দুই ঊর্ধ্বতন কর্তা দ্রুত সময়ে বন্দরটি চালুর ঘোষণা করলেও পরে সে উদ্যোগ থমকে যায়।


দৌলৎগঞ্জ-মাজদিয়া স্থলবন্দর বাস্তবায়ন কমিটির সাধারণ সম্পাদক আবু মো. আব্দুল লতিফ অমল জাগো নিউজকে বলেন, যশোর কাস্টমস কর্তৃপক্ষের নির্দেশনায় বন্দরে তিন একর জমিতে ট্রান্সশিপমেন্ট ইয়ার্ড রয়েছে। প্রথমদিকে ২০০ গাড়ির মালামাল লোড-আনলোড করা সম্ভব। সীমান্তের জিরো পয়েন্টে ৫০ টন ধারণ ক্ষমতার ৩০ ফুট চওড়া রাস্তাসহ জীবননগর পর্যন্ত ২০ ফুট চওড়ার ৬ কিলোমিটার রাস্তা রয়েছে। এছাড়া বন্দর এলাকায় আরও ৪০ দশমিক ৪৮ একর জমি সহজলভ্য দামে অধিগ্রহণ করা সম্ভব।



তিনি আরও বলেন, দৌলৎগঞ্জ-মাজদিয়া স্থলবন্দর সড়ক যোগাযোগ ও অবকাঠামোগত সব সুবিধা বিদ্যমান রয়েছে। বন্দরটি থেকে ভারতের জাতীয় সড়কের দূরত্ব ৩৪ কিলোমিটার। এছাড়া ভারতীয় অংশে টুঙ্গি থেকে কৃষ্ণনগর ৩৪ নম্বর জাতীয় মহাসড়ক থেকে সব স্থানে যাতায়াত করা সম্ভব। অন্য স্থলবন্দরের চেয়ে দূরত্বও অনেক কম। ফলে ভারতের সঙ্গে দেশের অন্য স্থলবন্দরের চেয়ে দ্রুত সময়ে পণ্য আমদানি ও রপ্তানি এবং পরিবহন খরচ অনেকাংশে সাশ্রয়ী হবে।


চুয়াডাঙ্গা চেম্বার অব কমার্সের সভাপতি ইয়াকুব হোসেন মালিক জাগো নিউজকে বলেন, বন্দরটি চালু হলে জেলার ব্যবসায় নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হবে। দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ব্যবসায়ীরা ছুটে আসবেন এখান দিয়ে পণ্য আমদানির জন্য। পাল্টে যাবে চুয়াডাঙ্গা জেলার অর্থনৈতিক দৃশ্যপট।

শেয়ার করুন