০৩ ডিসেম্বর ২০২৪, মঙ্গলবার, ১১:১৮:১২ অপরাহ্ন
রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংক: সেই পদোন্নতির ভাইভা গোপনে ভার্চুয়ালি নিতে তোড়জোড়
  • আপডেট করা হয়েছে : ২৬-১০-২০২২
রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংক: সেই পদোন্নতির ভাইভা গোপনে ভার্চুয়ালি নিতে তোড়জোড়

রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংকে পদোন্নতির নামে ব্যাপক অনিয়ম ও বাণিজ্যের অনুসন্ধানী খবর প্রকাশের পর আটকে গেছে ভাইভা। ১০৯ জন এসপিওকে উপ-মহাব্যবস্থাপক পদে পদোন্নতি দেওয়ার জন্য ভাইভার আয়োজন করা হলেও ওই বোর্ডের দুই সদস্য তাতে আপত্তি জানিয়েছেন। তাঁরা রাজশাহী গিয়ে স্বশরীরে ভাইভা নিতে আপত্তি তুলেছেন বলে একাধিক সূত্র নিশ্চিত করেছে। এর ফলে ওই পদোন্নতি ভাইভা এখন অনলাইনে ভার্চুয়ালি নেওয়ার জন্য প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। এটি করতেও কয়েক দফা সময় পেছানো হয়েছে। তবে আগামী ৩০ অক্টোবর থেকে মৌখিকভাবে ১০৯ এসপিও পদের কর্মকর্তাদের প্রস্তুত থাকতে বলা হয়েছে। অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে ভার্চুয়ালি ভাইভা নেওয়ার জন্য অনুমোদনের চেষ্টা চালানো হচ্ছে।

রাকাব সূত্র মতে, রাকাবের পদোন্নতি ও নানা অনিয়ম নিয়ে গত ১৬ অক্টোবর অনুসন্ধানী সংবাদ প্রকাশ হয়। এর পর ১০ জন এসপিও কর্মকর্তার পদোন্নতি ভাইভা নিতে অস্বীকৃতি জানান অপর দুই সদস্য। অর্থ মন্ত্রণালয়ের যুগ্মসচিব কামরুল হাসান মারুফ এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের জিএম মির্জা আব্দুল মান্নান ভাইভা নিতে অস্বীকৃতি জানান বলে একাধিক সূত্র নিশ্চিত করেছে।

সূত্রটি আরও জানায়, এ ঘটনার পরে অর্থ মন্ত্রণালয়ের ব্যাপক তোপের মুখে পড়েন রাকাবের চেয়ারম্যান রইছ উল আলম মণ্ডল। পরিস্থিতি সামাল দিতে তিনি গত মঙ্গলবার সচিবালয়ে গিয়ে ব্যাপক তদিবর করে শেষ পর্যন্ত অনলাইনে ১০৯ এসপিও পদমর্যদার কর্মকর্তাদের উপ-মহাব্যবস্থাপক পদে পদোন্নতি ভাইভা নেওয়ার জন্য একটি নির্দেশনা অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে নেওয়ার চেষ্টা করেন। তবে গতকাল বুধবার পর্যন্ত এ ধরনের চিঠিও রাকাব প্রধান কার্যালয়ে এসে পৌঁছেনি।

এদিকে আরেকটি সূত্র নিশ্চিত করেছে, গত ১৬ অক্টোবর থেকে ১০৯ জন এসপিও কর্মকর্তাদের সরাসরি ভাইভা হওয়ার নেওয়ার পক্রিয়াটি বন্ধ হয়ে গেলেও তাঁদের অনলাইনে ভাইভা দেওয়ার জন্য সকল প্রস্তুতি রাখতে বলা হয়েছে। এই ভাইভাও অতি গোপনে নেওয়ার পক্রিয়া চালানো হচ্ছে। ফলে এর জন্য ওই কর্মকর্তাদের কোনো ধরনের নতুন করে চিঠি ইস্যু না করে মোবাইলে কল করে ভাইভাইর সময় জানিয়ে দেওয়া হবে। পাশাপাশি ভাইভাতে যুক্ত হওয়ার লিকং এবং এবং সময় বলে দেওয়া হবে। ওই সময়ে তাঁদের ভাইভা বোর্ডে যুক্ত হতেও বলা হবে।

প্রসঙ্গত, রাকাবের জ্যেষ্ঠতা লঙ্ঘন নিয়ে ১৮টি মামলা বিচারাধীন রয়েছে। ২০১১ ও ২০১৪ সালের জ্যেষ্ঠতা তালিকায় ২০১০ সালে সরাসরি নিয়োগপ্রাপ্ত ৫৬ জন সিনিয়র কর্মকর্তাকে ১৯৯৮ সালে নিয়োগপ্রাপ্ত ১০৯ জুনিয়র কর্মকর্তাদের নিচে নামিয়ে দেওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে এ মামলাগুলো দায়ের করা হয়। ওই ১০৯ এসপিও পদের কর্মকর্তাদের এজিএম পদে পদোন্নতি দিতে তোড়জোড় চলছে এখন। ৬০ শূণ্য এজিএম পদের বিপরীতে রাকাবের ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ আবারও পদোন্নতি বাণিজ্যে মেতে উঠেছেন বলে এখাধিক কর্মকর্তা অভিযো করেছেন। গত ১৬ অক্টোবর থেকে ওই ১০৯ কর্মকর্তার পদোন্নতি ভাইভা হওয়ার কথা ছিল।

তবে ১৬ অক্টোবর এ নিয়ে একটি অনুসন্ধানী খবর প্রকাশের পর সেটি বন্ধ হয়ে যায়। ৪ সদস্যের এই ভাইভা বোর্ডে রয়েছেন অর্থ মন্ত্রণালয়ের যুগ্মসচিব কামরুল হাসান মারুফ এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের জিএম মির্জা আব্দুল মান্নান। অন্য দুজন রাকাবের চলতি ভারপ্রাপ্ত জিএম ও বিতর্কিত কর্মকর্তা শওকত শহিদুল ইসলাম এবং ব্যবস্থাপনা পরিচালক জাহিদুল হক। শওকত শহিদুল হককেও ১৯ জনকে ডিঙ্গিয়ে জিএম পদে বসানো হয়েছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ব্যাংকটির একাধিক কর্মকর্তা বলেন, ‘এসপিও থেকে এজিএম পদে পদোন্নতি দিতেও বড় ধরনের একটি বাণিজ্যের চেষ্টা চলছে। আর সেটি করতেই দুই বছর শাখা ব্যবস্থাপকের অভিজ্ঞতা না থাকলেও অন্তত ৭ জনকে ভাইভা অংশ নিতে চিঠি দেওয়া হয়েছে। সবমিলিয়ে নিয়ম ভঙ্গ করে জ্যেষ্ঠতা পাওয়া ১০৯ জনকেই পদোন্নতির জন্য ডাকা হয়েছে।

জানতে চাইলে রাকাবের চেয়ারম্যান রইছ উল আলম মণ্ডল বলেন, ‘নিয়ম অনুযায়ী এসপিওদের পদোন্নতি ভাইভা নেওয়া হবে। কোনো ব্যতয় হবে না। আর কাউকে বাণিজ্যের কোনো সুযোগ দেওয়া হবে না। যারা পদোন্নতি পাওয়ার যোগ্য তাদের তো পদোন্নতি দিতেই হবে। তবে জ্যেষ্ঠতা নিয়ে রাকাবে দীর্ঘদিনের একটা জটিল সমস্যা বিরাজমান রয়েছে।’

শেয়ার করুন