১৯ এপ্রিল ২০২৪, শুক্রবার, ১২:২৯:৩৬ অপরাহ্ন
রাবিতে চেয়ারম্যানের কক্ষে ভাঙচুর, মারধরের হুমকির অভিযোগ
  • আপডেট করা হয়েছে : ০২-১১-২০২২
রাবিতে চেয়ারম্যানের কক্ষে ভাঙচুর, মারধরের হুমকির অভিযোগ

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) এক বিভাগের অফিস কক্ষে ভাঙচুর করার পাশাপাশি বিভাগের চেয়ারম্যানকে অকথ্য ভাষায় গালাগাল ও লাঠি দিয়ে মারধরের হুমকির অভিযোগ পাওয়া গেছে। 

মঙ্গলবার সকালে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভেটেরিনারি অ্যান্ড এনিমাল সায়েন্সেস বিভাগে এ ঘটনা ঘটে।

এ ঘটনায় ভুক্তভোগী অধ্যাপক ইসমাত আরা বেগম ভেটেরিনারি অ্যান্ড এনিমাল সায়েন্সেস বিভাগের চেয়ারম্যান। আর অভিযুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী প্রক্টর ড. হাকিমুল হক। তিনি একই বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক। এ ঘটনার একটি সিসিটিভি ফুটেজ এই প্রতিবেদকের হাতে এসেছে।

সিসিটিভি ফুটেজে দেখা গেছে, অফিস কক্ষে বিভাগের চেয়ারম্যান ইসমাত আরা বেগম ও সহকারী প্রক্টর ড. হাকিমুল হকের মধ্যে উচ্চবাচ্যে কথা হচ্ছে। এর একপর্যায়ে ড. হাকিমুল হক উত্তেজিত হয়ে টেবিলে পরপর কয়েকটি ঘুষি দিয়ে গ্লাস ভেঙে ফেলেন। পরে তিনি অফিস কক্ষ ত্যাগ করেন। কক্ষ ত্যাগের পূর্বে লাঠি দিয়ে মারার হুমকি দেওয়ার পাশাপাশি সভাপতিকে অকথ্য ভাষায় গালাগাল করেন ড. হাকিমুল হক।

এ বিষয়ে অধ্যাপক ইসমাত আরা বেগম বলেন, সে (ড. হাকিমুল হক) আজ সকালে আমার অফিস কক্ষে তার একটি চিঠি স্বাক্ষর করানোর জন্য নিয়ে আসে। এ সময় আমি তাকে পূর্বের একটি ঘটনার জন্য দুঃখ প্রকাশ করতে বলি এবং তা নাহলে তার চিঠিতে আমি স্বাক্ষর করব না বলে জানাই। এরই প্রেক্ষিতে সে আমাকে স্বাক্ষর দেওয়ার জন্য হুমকি দেয়, অকথ্য ভাষায় গালাগাল করে এবং টেবিল চাপড়িয়ে গ্লাস ভেঙে ফেলে। এছাড়া কক্ষ থেকে বের হওয়ার সময় আমাকে অকথ্য ভাষায় গালি দেয় এবং লাঠি দিয়ে মারার হুমকি দেয়।

তিনি আরও বলেন, এর আগে আরেকজন শিক্ষিকাকেও সে এভাবে গালি দেওয়ায় ওই শিক্ষিকা অজ্ঞান হয়েছিলেন। সে বেশ কিছুদিন থেকে বিভাগের বিভিন্ন শিক্ষক-শিক্ষিকাদের সঙ্গে কুরুচিপূর্ণ ব্যবহার ও ঔদ্ধত্যপূর্ণ আচরণ করে আসছেন। গত ১৬ অক্টোবরও আমার সঙ্গে কুরুচিপূর্ণ ব্যবহার করে এবং ‘শুয়োরের বাচ্চা’ ও ‘পাগল’ বলে গালি দেয়। সহকারী প্রক্টর হওয়ার পর থেকে তার ঔদ্ধত্যপূর্ণ আচরণ বেশি লক্ষ্য করা যাচ্ছে।

এ বিষয়ে অভিযুক্ত শিক্ষক ড. হাকিমুল হক বলেন, অভিযোগগুলো সব মিথ্যা। আমি গতকাল সারা রাত ধরে আমার একটা প্রজেক্ট রেডি করেছি। আমি একজনের মাধ্যমে আমার প্রজেক্ট পেপারটি স্বাক্ষর করার জন্য তার কাছে পাঠাই। কিন্তু সে আমার চিঠিতে স্বাক্ষর করেনি। বিভাগের সভাপতি হিসেবে তার দায়িত্ব ছিল রুটিন দায়িত্ব পালন করা। তার কক্ষে সিসিটিভি ক্যামেরা আছে, ওইটার ফুটেজ দেখলেই সব বোঝা যাবে।

তিনি আরও বলেন, সে আসলে জামায়াতপন্থী একজন শিক্ষক। এর আগে সে আমার ছুটির দরখাস্ত ফরওয়ার্ড করেনি। আজ আমাদের ডিনের একটা চিঠিতে স্বাক্ষর করেনি। সে আসলে মানসিকভাবে অসুস্থ। তার সঙ্গে আরও একজন আছে। এই দুই অসুস্থ লোকের কাজই হলো যে কোনোভাবে একটা ইস্যু তৈরি করা।

এদিকে মঙ্গলবার রাতে এ ঘটনায় নিজের নিরাপত্তা শঙ্কায় নগরীর মতিহার থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করতে গেলে পুলিশ জিডি নেয়নি বলে জানিয়েছেন অধ্যাপক ইসমাত আরা বেগম। 

এ বিষয়ে তিনি বলেন, নিজের নিরাপত্তার কথা ভেবে গতকাল রাতে আমি মতিহার থানায় জিডি করতে যাই। এ সময় পুলিশ আমার জিডি গ্রহণে অসম্মতি জানায়। বিশ্ববিদ্যালয় উপাচার্য এবং প্রক্টর অনুমতি দিলে জিডি গ্রহণ করা হবে বলে আমাকে জানানো হয়। 

অধ্যাপক ইসমাত আরা বলেন, আমাকে তো বিশ্ববিদ্যালয়ের বাইরেও চলাফেরা করতে হয়। এখন আমার নিরাপত্তা কোথায়। আমার যদি কোনো ক্ষতি হয় তাহলে এর দায়ভার কে নেবে, কে এর ক্ষতিপূরণ দেবে। আমার ১৮ বছরের শিক্ষকতার জীবনে এখানে চারজন শিক্ষক খুন হয়েছে। কাল যে আমি খুন হবো না, এর কি নিশ্চয়তা আছে।

তবে বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা ও কৃষি অনুষদ মতিহার থানার আওতাধীন না হওয়ায় জিডি গ্রহণ করা হয়নি বলে জানান থানার ওসি আনোয়ার আলি তুহিন। তিনি বলেন, ঘটনাটি আমাদের মতিহার থানার মধ্যে নয়, এটা চন্দ্রিমা থানার ঘটনা। এজন্য অভিযোগ নেওয়া হয়নি। এ বিষয়ে উনাকে পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।

এ ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন থেকে পদক্ষেপ নেওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে প্রক্টর অধ্যাপক আসাবুল হক বলেন, অভিযোগ পাওয়া গেছে। উপাচার্য আমাকে ঘটনাটির খোঁজ-খবর নিতে মৌখিকভাবে দায়িত্ব দিয়েছেন। এটা তো শিক্ষকদের অভ্যন্তরীণ গণ্ডগোল। এ বিষয়ে উপাচার্য কোনো তদন্ত কমিটি গঠন করতে বলবেন কিনা সেটা জানি না।

শেয়ার করুন