১৪ এপ্রিল ২০২৫, সোমবার, ১০:০৩:০৭ পূর্বাহ্ন
ঢালিউডে বেকার হচ্ছেন দেশি নায়িকারা, প্রভাব বাড়ছে কলকাতার
  • আপডেট করা হয়েছে : ০৮-০৪-২০২৫
ঢালিউডে বেকার হচ্ছেন দেশি নায়িকারা, প্রভাব বাড়ছে কলকাতার

ঢাকাই সিনেমা নানা সংকটের মধ্য দিয়েও খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে চলছে। প্রতি বছর প্রায় অর্ধশতাধিক নতুন সিনেমা মুক্তি পাচ্ছে। বাণিজ্যিক ঘরানার সিনেমাগুলো খুব একটা ব্যবসা করতে না পারলেও, সিনেমা নির্মাণ চলমান রয়েছে তাতেই যেন তৃপ্তির ঢেকুর তুলছেন সিনেমা সংশ্লিষ্টরা। 


বেশ কয়েকবছর ধরেই ঢাকাই ইন্ডাস্ট্রিতে কলকাতার নায়িকাদের ভিড় একটু বেশি। ঈদের মতো বড় উৎসবেও উপস্থিতি মেলে এসব অভিনেত্রীর। তাহলে কি আমাদের দেশে নায়িকা সংকট? এ কথা অবশ্য মানতে নারাজ সিনেমা সংশ্লিষ্টরা। 


প্রযোজক-পরিচালকরা বলছেন, ‘নায়িকা আছেন অনেক, তবে দর্শকের কাছে গ্রহণযোগ্য নায়িকার সংকট রয়েছে। যার ফলে সিনেমার প্রতি দর্শকদের আগ্রহ কমেছে, সিনেমার ব্যবসায় নেমেছে ধস, বন্ধ হচ্ছে প্রেক্ষাগৃহ।’ 


বর্তমানে নামসর্বস্ব অনেক নায়িকাই আছেন, দর্শক চাহিদায় সিনেমার কোনো কাজে আসেন না তারা। এ ছাড়া ব্যক্তিগত গুজব-গুঞ্জন, বিয়ে-বিচ্ছেদসহ আরও অনেক কারণে প্রতিষ্ঠিত নায়িকারাও নিজেদের ইমেজ হারাচ্ছেন। তাদের কারও কারও নাম শুনলেই দর্শকের মধ্যে আতঙ্ক চলে আসে। এসব তারকাদের নিয়ে কিভাবে সিনেমা নির্মাণ করা যায়?


৯০ দশকের পর্দা কাঁপানো মৌসুমী, শাবনূর, পপি, পূর্ণিমাদের মতো নায়িকা এখন আর তৈরি হচ্ছে না। এদের পরবর্তী যারা ছিলেন ব্যস্ত নায়িকা, যাদের নিয়ে সিনেমাপাড়া ও দর্শকদের মাঝে আলোচনার ঝড় বইত, এখন আর তাদের সেই রমরমা অবস্থা নেই। হাতে সিনেমার কোনো কাজ নেই বললেই চলে। আবার অনেকেই কমিয়ে দিয়েছেন কাজ। গুটিকতক নায়িকার ব্যস্ততা থাকলেও, অধিকাংশই বেকার। তাই তারা আজ নেই সিনেমার কোনো আলোচনায়। কিন্তু উল্টোদিকে নজর দিলেই দেখা যায়, দেশের সিনেমায় যেন প্রভাব খাটাচ্ছেন কলকাতার নায়িকারা। ঢাকাই সিনেমায় বাড়ছে তাদের দর্শক চাহিদাও। এরকম চলতে থাকলে একদিন ঢাকাই সিনেমার নায়িকারা বেকার হয়ে পড়বেন। সিনেমাশিল্পেও এর প্রভাব পড়বে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।


ঢাকাই সিনেমার একসময়ের ব্যস্ততম নায়িকা ছিলেন অপু বিশ্বাস। শাকিব খানের সঙ্গে জুটি বেঁধে তিনি একাধারে ৭০টিরও অধিক সিনেমায় অভিনয় করেছেন। যেগুলোর অধিকাংশই ছিল ব্যবসাসফল। শাকিব খানের সঙ্গে বিচ্ছেদ হলে, অপু বিশ্বাস তার সেই দর্শকপ্রিয়তা আর ধরে রাখতে পারেননি। বর্তমানে সিনেমায় খুব একটা দেখা যায় না তাকে। তবে বসে নেই তিনি, নতুন পরিচয়ে ইউটিউবার হয়ে অনলাইন কনটেন্টে মনোযোগী হয়েছেন। বলা যায় অপু বিশ্বাস এখন ইউটিউবার। সিনেমা ছেড়ে সেদিকেই এখন বেশি ব্যস্ত তিনি। 


এ অভিনেত্রীকে সর্বশেষ ‘ট্র্যাপ: দ্য আনটোল্ড স্টোরি’ ও ‘ছায়াবৃক্ষ’ নামে দুটি সিনেমায় দেখা গিয়েছিল। ২০২৪ সালে এগুলো মুক্তি পায়। তবে ২০২৩ ‘লাল শাড়ি’ নামে একটি সিনেমা দিয়ে প্রযোজক হিসাবেও তিনি আত্মপ্রকাশ করেছিলেন। সরকারি অনুদানে নির্মিত এ সিনেমায় সাইমন সাদিকের বিপরীতে তিনি অভিনয়ও করেছিলেন। 


গণমাধ্যমে এ নায়িকা বলেছিলেন, তিনি নতুন সিনেমা নিয়ে পরিকল্পনা করছেন। সেটি কবে হবে আদৌ কারও জানা নেই।


২০১২ সালে ‘ভালোবাসার রঙ’ দিয়ে সিনেমায় অভিষেক হয় মাহিয়া মাহির। ক্যারিয়ারে ৩০টির অধিক সিনেমায় অভিনয় করেছেন। যার মধ্যে রয়েছে আলোচিত একাধিক সিনেমা। এ অভিনেত্রীকে নিয়েও স্বপ্ন বুনতেন পরিচালক-প্রযোজকরা। কিন্তু হঠাৎ করেই সিনেমা ছেড়ে রাজনীতির মাঠে দৌড়ঝাঁপ শুরু করেন তিনি। আওয়ামী লীগের হয়ে জাতীয় নির্বাচনে অংশ নেওয়ার চেষ্টা করেছিলেন। কিন্তু নৌকার টিকিট না পেয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে নির্বাচন করেন। কিন্তু শেষ রক্ষা আর হয়নি। পরাজয় নিয়েই রাজনীতির মাঠ ছাড়তে হয় তাকে। আবার সিনেমায় ফেরার চেষ্টা করছেন এ নায়িকা। কিন্তু আগের মতো আর তার তারকা ইমেজ নেই। দর্শকচাহিদা কমায় পাচ্ছেন না সিনেমার কাজ। তাকে সবশেষ শাকিবের ‘রাজকুমার’ সিনেমায় ক্যামিও চরিত্রে অভিনয় করতে দেখা গেছে। এটি ২০২৪ সালে মুক্তি পায়।


ইন্ডাস্ট্রির আরেক বিতর্কিত নায়িকা নিপুণ আক্তার। ২০০৬ সালে তিনি সিনেমায় আসেন। তবে গত কয়েক বছর ধরেই অভিনয়ে অনিয়মিত। বরাবরই বিভিন্ন কর্মকাণ্ডে সমালোচনার কেন্দ্রে ছিলেন এ অভিনেত্রী। চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির নির্বাচন নিয়েও নানা বিতর্কের মুখে পড়তে হয় তাকে। নির্বাচনে নিপুণের জয়-পরাজয় নিয়ে বিতর্ক সৃষ্টি হয় এবং তা আদালতে মামলা পর্যন্ত গড়ায়। এ সময় সিনেমার চেয়ে, নানা বিতর্কই ছিল তার নিত্যসঙ্গী। 


এদিকে গত ৫ আগস্টের পর থেকেই আত্মগোপনে রয়েছেন আওয়ামী ফ্যাসিস্টের দোসর এ অভিনেত্রী। নিপুণকে ২০২৪ সালে সবশেষ দেখা যায় ‘সুজন মাঝি’ নামে একটি সিনেমায়।


ঢাকাই ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রির ‘অলটাইম বিতর্কিত’ নায়িকা হিসাবে পরিচিত পরীমনি। আলোচনায় থাকতে কোনো না কোনো বিতর্কের জন্ম দেবেনই তিনি। এ নায়িকাও এখন অলস সময় পার করছেন। সিনেমার আলোচনায় না থাকলেও, সারা বছর তিনি বিভিন্ন ইস্যুতে আলোচনা-সমালোচনায় থাকেন। সর্বশেষ তাকে ‘মা’ নামে একটি সিনেমায় দেখা যায়। এটি ২০২৩ সালের মে মাসে মুক্তি পায়। এদিকে মুক্তির অপেক্ষায় রয়েছে এ অভিনেত্রীর ‘ডোডোর গল্প’ নামে একটি সরকারি অনুদানের সিনেমা।


এ ছাড়াও নাজিফা তুষি, অর্চিতা স্পর্শিয়া, আজমেরী হক বাঁধন, মন্দিরা চক্রবর্তী, ঐশীসহ যারা টিভি থেকে সিনেমায় এসেছেন তাদের হাতেও এখন সিনেমার কাজ নেই। তাই আপাতত নায়িকা হিসাবেও নেই আলোচনায়। কারণ, এরা এখন কেউই সিনেমার কাজে নেই। তবে এদের মধ্যে কারও কারও নতুন সিনেমা মুক্তির অপেক্ষায় রয়েছে। অনেকেই আবার অপেক্ষা করছেন নতুন সিনেমার শুটিং শুরুর। 


অন্যদিকে গত এক দশকে সিনেমার নায়িকা হিসাবেই কাজ করেছেন বর্তমান প্রজন্মের এমন অনেকেই এখন বেকার। সিনেমা নিয়ে তাদেরও নেই কোনো আলোচনা। তাদের মধ্যে রয়েছেন আঁচল, জাহারা মিতু, আইরিন সুলতানা, বিপাশা কবিরসহ অনেকে।


শেয়ার করুন