গুরুতর আহতাবস্থায় চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়ার কোদালায় আটকেপড়া কাদা থেকে উদ্ধার করে কক্সবাজারের চকরিয়ার ডুলাহাজারা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সাফারি পার্কে আনা বুনো হাতিটি অবশেষে মারা গেছে। চিকিৎসকরা প্রাণপণ চেষ্টা করেও হাতিটিকে আর সুস্থ করতে পারেননি।
ডুলাহাজারা সাফারি পার্কে আনার ১৬ দিনের মাথায় হাতিটি মারা যায়। শনিবার রাতে ময়নাতদন্তের পর মারা যাওয়া হাতিটিকে পার্কের হাতিরগোদা এলাকায় পুঁতে রাখা হয়।
চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়ার কোদালায় কাদায় আটকে আহত মাদি হাতিটিকে ১৩ মে বিকালে ট্রাকে করে বঙ্গবন্ধু সাফারি পার্কে আনা হয়েছিল। আনার পর একটু খাবার খেলেও সপ্তাহান্তে ধীরে ধীরে খাওয়া-দাওয়া বন্ধ করে দেয় হাতিটি। এর পর নানাভাবে চেষ্টা করেও তাকে আর কিছুই খাওয়ানো যায়নি। শেষে বুনো হাতিটি মারা যায়।
সাফারি পার্কের তত্ত্বাবধায়ক (ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা) মো. মাজহারুল ইসলাম বলেন, গত ৩০ এপ্রিল দুপুরে বুনো মাদি হাতিটি রাঙ্গুনিয়ায় পাহাড়ের পাদদেশে কাদায় আটকে পড়েছিল। খবর পেয়ে অনেক চেষ্টার পর হাতিটিকে উদ্ধার করে বন বিভাগের কর্মীরা বনাঞ্চলে ফেরত পাঠায়। কিন্তু শরীরের বিভিন্ন স্থানে আঘাতপ্রাপ্ত হওয়ায় এবং মুখ দিয়ে পেটের ভেতর কাদামাটি ঢোকায় হাতিটি অস্থিরতায় ভুগছিল। একদিন পর হাতিটি ওই একই এলাকায় আবারও চলে এলে সেটিকে চিকিৎসার জন্য কোদালা বন বিটের নিয়ন্ত্রণে নেওয়া হয়।
সেখানে সাফারি পার্কের ভেটেরিনারি সার্জনের নেতৃত্বে চিকিৎসা শুরু হয়। এতেও অবস্থার উন্নতি না হওয়ায় হাতিটিকে পাঠানো হয় সাফারি পার্কে। এখানে আনার পর নিবিড় পরিচর্যায় চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছিল। কিন্তু কোনো উন্নতি হচ্ছিল না। অবশেষে হাতিটি শনিবার সকালের দিকে মারা যায়।
তিনি আরও জানান, অসুস্থ হাতির চিকিৎসার জন্য ২২ মে সাফারি পার্ক কর্তৃপক্ষ পাঁচ সদস্যের একটি মেডিকেল বোর্ড গঠন করে। পর দিন থেকে হাতির চিকিৎসা শুরু হয়। মেডিকেল বোর্ডের প্রধান ছিলেন চট্টগ্রাম ভেটেরিনারি ও অ্যানিমেল সায়েন্সেস বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিসিন ও সার্জারি বিভাগের অধ্যাপক বিবেক চন্দ্র সূত্রধর।
সদস্য ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়টির অধ্যাপক ভজন চন্দ্র দাস, ঢাকা প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের পরিচালক (অব.) মো. ফরহাদ হোসেন, চকরিয়া উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. সুপন নন্দী। সদস্য সচিব ছিলেন পার্কের বন্যপ্রাণী চিকিৎসক হাতেম সাজ্জাদ মো. জুলকার নাইন।
পার্কের বন্য প্রাণী চিকিৎসক জুলকার নাইন বলেন, সাফারি পার্কে আনারকালেই বুনো হাতিটি অনেকটাই চলনশক্তিহীন অবস্থায় ছিল। বয়স অনুপাতে হাতিটির যে পরিমাণ খাবার গ্রহণের কথা ছিল, এর সামান্যই গ্রহণ করত। অনেক সময় মুখ থেকে খাবার ফেলে দিত। এ ছাড়া অসুস্থ হওয়ার পর থেকে বন্ধ ছিল হাতিটির পায়খানা-প্রস্রাবও।
হাতিটি যে বাঁচবে না, তা চিকিৎসা কার্যক্রম শুরুর দিনই নিশ্চিত হওয়া গিয়েছিল উল্লেখ করে মেডিকেল বোর্ডের সদস্য চকরিয়া উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. সুপন নন্দী বলেন, হাতিটির পেটের ভেতর কাদা ঢুকে গিয়েছিল। এ কারণে হাতিটি খাওয়া ছেড়ে দেওয়ায় দিন দিন দুর্বল হয়ে পড়ে। এর পরও আমরা সর্বাত্মক চেষ্টা চালায়-কিন্তু বাঁচানো গেল না।
পার্কের ইনচার্জ মো. মাজহারুল ইসলাম বলেন, শতচেষ্টা করেও বাঁচানো গেল না হাতিটি। শনিবার বিকাল থেকে মরা হাতির ময়নাতদন্ত শুরু করে সন্ধ্যায় শেষ হয়। এর পরই তাকে মাটিতে পুঁতে ফেলা হয়েছে। এ ঘটনায় চকরিয়া থানায় সাধারণ ডায়েরি করা হয়।
