২১ নভেম্বর ২০২৪, বৃহস্পতিবার, ০৭:১৬:৪৯ অপরাহ্ন
সরকারের পদত্যাগসহ ১০ দফা দেবে বিএনপি
  • আপডেট করা হয়েছে : ০৫-১২-২০২২
সরকারের পদত্যাগসহ ১০ দফা দেবে বিএনপি

ঢাকার গণসমাবেশে সরকারের পদত্যাগ ও নির্বাচনকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকারসহ ১০ দফা দাবি তুলে ধরে নতুন কর্মসূচি ঘোষণা দেবে বিএনপি। ‘লংমার্চ’ ও ‘রোডমার্চ’র মতো কর্মসূচি প্রাথমিক প্রস্তাবে রয়েছে। এটি স্থায়ী কমিটির বৈঠকে চূড়ান্ত করার কথা রয়েছে। এছাড়া রাষ্ট্রের সার্বিক সংস্কারের জন্য ২৭ দফার একটি রূপরেখা তুলে ধরা হতে পারে। যার খসড়া ইতোমধ্যে প্রায় চূড়ান্ত হয়েছে।

১০ ডিসেম্বর বিএনপির বিভাগীয় পর্যায়ের শেষ গণসমাবেশ হবে ঢাকায়। সেখানে কয়েক লাখ নেতাকর্মীর সমাগম করতে চায় দলটি। এটি সফল করতে ব্যাপক প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। যদিও এখনও পর্যন্ত সমাবেশের স্থান নিয়ে অনিশ্চয়তা কাটেনি।

বিএনপির একাধিক নীতিনির্ধারকের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে উল্লিখিত সব তথ্য। তারা আরও জানান, ঢাকার গণসমাবেশকে বিএনপি চ্যালেঞ্জ হিসাবে নিয়েছে। কারণ এ থেকে বিএনপির লক্ষ্য, দাবি, ক্ষমতায় গেলে কি করবে তার একটি স্পষ্ট বার্তা জনগণকে দিতে চায়। একই সঙ্গে যুগপৎ আন্দোলনে একমত থাকা সরকার বিরোধী দলগুলোর উদ্দেশেও বার্তা দেওয়া হবে। অভিন্ন ইস্যুতে কিভাবে রাজপথে নামবেন, কি কর্মসূচি হবে তার একটি দিকনির্দেশনা থাকবে। এছাড়াও সরকারকে ‘সেফ এক্সিট’ নিয়ে ক্ষমতা হস্তান্তরের জন্য আহ্বানও জানানো হবে। সেটি কোন প্রক্রিয়ায় হতে পারে তাও ওই গণসমাবেশ থেকে ঘোষণা করা হবে। কর্মসূচি ঘোষণার সঙ্গে সরকারকে দাবি মেনে নিতে আলটিমেটামও দেওয়া হতে পারে। জানতে চাইলে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর যুগান্তরকে বলেন, এই সরকারের অধীনে আমরা নির্বাচনে যাব না। সরকারকে পদত্যাগ করতে হবে। সংসদ বিলুপ্ত করতে হবে। নতুন তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠন করতে হবে। সেই সরকার নতুন নির্বাচন কমিশন গঠনের মধ্য দিয়ে তাদের পরিচালনায় নির্বাচন হতে হবে। ঢাকার গণসমাবেশের মধ্য দিয়ে প্রথম ধাপের আন্দোলন শেষ হবে। লক্ষ্যে যাওয়ার জন্য যে দাবিগুলো ১০ ডিসেম্বের তা জনগণের সামনে তুলে ধরব। সেখানে আমাদের নতুন একটা স্বপ্ন, নতুন দাবি, নতুন একটি প্রসঙ্গ সামনে নিয়ে আসব। নিশ্চয় কর্মসূচি দেব। সেই কর্মসূচির মধ্যেই বিস্তারিত বর্ণনা থাকবে।

তিনি আরও বলেন, রাষ্ট্রের যে সমস্যা ও সংকট তৈরি হয়েছে। দীর্ঘ এক যুগেরও বেশি সময় ধরে আওয়ামী লীগ যে ক্ষতিগুলো করেছে রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠানের, বিশেষ করে সংবিধান কাটাছেঁড়া, বিচার বিভাগ ও প্রশাসনকে দলীয়করণ, অর্থনীতিকে দুর্বৃত্তায়ন করা হয়েছে। যে অবস্থায় তারা নিয়ে গেছে এর রূপান্তর দরকার, সংস্কার দরকার, পরিবর্তন আনা দরকার। সেই বিষয়গুলো নিয়ে আমরা জনগণের সামনে আসব।

১০ দফা : দলটির একাধিক নীতিনির্ধারক জানান, সরকারবিরোধী দলগুলোর সঙ্গে দুদফা সংলাপ করে যুগপৎ আন্দোলনের বিষয়ে একমত হয়েছে বিএনপি। এজন্য ১০ দফা দাবি ইতোমধ্যে প্রায় চূড়ান্ত করা হয়েছে। শুধু স্থায়ী কমিটিতে অনুমোদনের অপেক্ষায়। যা ঢাকার গণসমাবেশে ঘোষণা করা হবে। দাবিগুলো হচ্ছে-১. বর্তমান অনির্বাচিত অবৈধ জাতীয় সংসদ বিলুপ্ত করে ভোটবিহীন, গণতন্ত্র হরণকারী, লুটেরা ক্ষমতাসীন ফ্যাসিস্ট সরকারের পদত্যাগ ২. ১৯৯৬ সালে সংবিধানে সংযোজিত ধারা ৫৮-খ, গ ও ঘ’-এর আলোকে একটি দল নিরপেক্ষ নির্বাচনকালীন সরকার/অন্তর্বর্তীকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠন ৩. নির্বাচনকালীন দল নিরপেক্ষ সরকার/অন্তর্বর্তীকালীন তত্ত্ববধায়ক সরকার বর্তমান অবৈধ নির্বাচন কমিশন বাতিল করে সবার কাছে গ্রহণযোগ্য একটি স্বাধীন ও নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশন গঠন, উক্ত নির্বাচন কমিশন অবাধ নির্বাচনের অনিবার্য পূর্বশর্ত হিসাবে ‘লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড’ নিশ্চিত করতে আরপিও সংশোধন, ইভিএম পদ্ধতি বাতিল ও পেপার ব্যালটের মাধ্যমে ভোটের ব্যবস্থা করা এবং স্থানীয় সরকার নির্বাচনে দলীয় প্রতীক ব্যবহার বাতিল করা ৪. খালেদা জিয়াসহ সব বিরোধীদলীয় নেতাকর্মী, সাংবাদিক এবং আলেমদের সাজা বাতিল, সব মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার ও রাজনৈতিক কারাবন্দিদের অনতিবিলম্বে মুক্তি, দেশে সভা, সমাবেশ ও মত প্রকাশে কোনো বাধা সৃষ্টি না করা, সব দলকে স্বাধীনভাবে গণতান্ত্রিক ও শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি পালনে প্রশাসন ও সরকারি দলের কোনো ধরনের হস্তক্ষেপ বা বাধা সৃষ্টি না করা, স্বৈরাচারী কায়দায় বিরোধী কণ্ঠস্বরকে স্তব্ধ করার লক্ষ্যে নতুন কোনো মামলা ও বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের গ্রেফতার না করা ৫. ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন-২০১৮ এবং বিশেষ ক্ষমতা আইন-১৯৭৪সহ মৌলিক মানবাধিকার হরণকারী সব কালা-কানুন বাতিল করা ৬. বিদ্যুৎ, জ্বালানি, গ্যাস ও পানিসহ জনসেবা খাতের মূল্যবৃদ্ধির গণবিরোধী সরকারি সিদ্ধান্ত বাতিল ৭. নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্য সাধারণ মানুষের ক্রয় ক্ষমতার মধ্যে আনা, নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের বাজারকে সিন্ডিকেট মুক্ত করা ৮. গত ১৫ বছর ধরে বিদেশে অর্থ পাচার, ব্যাংকিং ও আর্থিক খাত, বিদ্যুৎ-জ্বালানি খাত ও শেয়ার বাজারসহ রাষ্ট্রীয় সব ক্ষেত্রে সংঘটিত দুর্নীতি চিহ্নিত করতে একটি কমিশন গঠন/দুর্নীতি চিহ্নিত করে অতি দ্রুত যথাযথ শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ ৯. গত ১৫ বছরে গুমের শিকার সব নাগরিককে উদ্ধার এবং বিচারবহির্ভূত হত্যা ও রাষ্ট্রীয় নির্যাতনের প্রতিটি ঘটনার দ্রুত বিচারের ব্যবস্থা করে যথাযথ শাস্থি নিশ্চিত, ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের বাড়িঘর, উপাসনালয় ভাঙচুর এবং সম্পত্তি দখলের জন্য দায়ীদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা করা ১০. আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, প্রশাসন ও বিচার বিভাগকে সরকারি হস্তক্ষেপ পরিহার করে স্বাধীনভাবে কাজ করার সুযোগ দেওয়া।

রাষ্ট্র সংস্কারের ২৭ দফা রূপরেখা : সূত্রমতে, রাষ্ট্রের সার্বিক মেরামতে ২৭ দফার রূপরেখার খসড়া চূড়ান্ত করেছে বিএনপি। রূপরেখার সূচনায় বলা হয়েছে, বর্তমান কর্তৃত্ববাদী সরকার বাংলাদেশ রাষ্ট্র কাঠামোকে ভেঙে চুরমার করে ফেলেছে। এই রাষ্ট্রকে মেরামত ও পুনর্গঠন করতে হবে। দেশের জনগণের হাতেই দেশের মালিকানা ফিরিয়ে দেওয়ার লক্ষ্যে একটি অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ, গ্রহণযোগ্য ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনে জয়লাভের পর বর্তমান ফ্যাসিস্ট সরকার হটানোর আন্দোলনে অংশগ্রহণকারী রাজনৈতিক দলগুলোর সমন্বয়ে ‘জনকল্যাণমূলক জাতীয় ঐকমত্যের সরকার’ প্রতিষ্ঠা করা হবে। সেই জাতীয় সরকার ২৭ দফা সংস্কারমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। দফাগুলো হলো-সংবিধান সংস্কার কমিশন গঠন; জাতীয় সমঝোতা কমিশন গঠন; নির্বাচনকালীন দলনিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা প্রবর্তন; সংবিধানের ৭০ অনুচ্ছেদ সংশোধন; রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর নির্বাহী ক্ষমতার ভারসাম্য আনয়ন; দ্বিকক্ষবিশিষ্ট আইনসভা প্রবর্তন; নির্বাচন কমিশন নিয়োগ আইন সংশোধন; জুডিশিয়াল কমিশন গঠন; প্রশাসনিক সংস্কার কমিশন, মিডিয়া কমিশন; ন্যায়পাল নিয়োগ; গুম, খুন ও বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড; নির্যাতনে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে জড়িতদের বিচার। অর্থনৈতিক সংস্কার কমিশন; ধর্ম যার যার রাষ্ট্র সবার-মূলনীতির ভিত্তিতে ধর্ম পালনে পূর্ণ অধিকার ও পূর্ণ নিরাপত্তা বিধান; আঞ্চলিক বৈষম্য দূরীকরণ ও সুষম উন্নয়নে বিশেষ কর্মসূচি; বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ খাতে দায়মুক্তি আইনসহ সব কালাকানুন বাতিল ও অপ্রয়োজনীয় কুইক রেন্টাল বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে ক্রয় বন্ধ। বৈদেশিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে জাতীয় স্বার্থকে সর্বোচ্চ প্রাধান্য দেওয়া; দেশের সার্বভৌমত্ব সুরক্ষায় প্রতিরক্ষা বাহিনীকে সুসংগঠিত; যুগোপযোগী ও দেশপ্রেমের মন্ত্রে উজ্জীবিত করা; ক্ষমতার বিকেন্দ্রীকরণের লক্ষ্যে স্থানীয় সরকারগুলোকে অধিকার স্বাধীন ও শক্তিশালী করা; নিবিড় জরিপের ভিত্তিতে মুক্তিযুদ্ধে শহিদদের তালিকা প্রণয়ন ও যথাযথ রাষ্ট্রীয় মর্যাদা দেওয়া; আধুনিক ও যুগোপযোগী যুব উন্নয়ন নীতিমালা প্রণয়ন; নারীর ক্ষমতায়ন নিশ্চিত করতে সুনির্দিষ্ট কর্মসূচি নেওয়া। শিক্ষাক্ষেত্রে বিরাজমান নৈরাজ্য দূর করে নিু ও মধ্য পর্যায়ে চাহিদাভিত্তিক শিক্ষা ও উচ্চশিক্ষার ক্ষেত্রে জ্ঞানভিত্তিক শিক্ষা-কারিকুলামকে প্রাধান্যসহ জিডিপির ৫ শতাংশ অর্থ বরাদ্দ; ‘সবার জন্য স্বাস্থ্য’-এ নীতির ভিত্তিতে সর্বজনীন স্বাস্থ্যসেবা প্রবর্তন ও জিডিপির ৫ শতাংশ অর্থ বরাদ্দ, শ্রমিকদের প্রাইস-ইনডেক্স বেজড ন্যায্য মজুরি নিশ্চিত করা ও শিশুশ্রম বন্ধ করা এবং কৃষিপণ্যের ন্যায্যমূল্য নিশ্চিত করা।

শেয়ার করুন