১৬ ডিসেম্বর মহান বিজয় দিবস উপলক্ষ্যে বাণী দিয়েছেন রাজশাহী সিটি কর্পোরেশনের মেয়র এ.এইচ.এম খায়রুজ্জামান লিটন।
বাণীতে মেয়র এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন বলেন, ১৬ ডিসেম্বর মহান বিজয় দিবস। বাঙালি জাতির এক অনন্য গৌরবোজ্জ্বল দিন। সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আহ্বানে সাড়া দিয়ে বাঙালি জাতি নয় মাসের রক্তক্ষয়ী মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে ১৯৭১ সালের এই দিনে চূড়ান্ত বিজয় অর্জন করে। মহান বিজয় দিবস উপলক্ষ্যে রাজশাহীবাসীসহ সকলকে জানাই শুভেচ্ছা।
আজকের দিনে আমি শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করছি স্বাধীন বাংলাদেশের স্থপতি, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও তাঁর পরিবারের সকল শহীদদের। আরো গভীর শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করছি জাতীয় চার নেতা শহীদ তাজউদ্দিন আহমদ, শহীদ সৈয়দ নজরুল ইসলাম, শহীদ ক্যাপ্টেন এম. মনসুর আলী ও শহীদ এ.এইচ.এম কামারুজ্জামান এবং ত্রিশ লাখ শহীদ, সম্ভ্রমহারা দুই লাখ মা- বোন এবং জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তান বীর মুক্তিযোদ্ধাদের-কে, যাঁদের মহান আত্মত্যাগের বিনিময়ে আমরা পেয়েছি স্বাধীন ও সার্বভৌম বাংলাদেশ।
বাণীতে রাসিক মেয়র বলেন, বাঙালি জাতির স্বপ্নদ্রষ্টা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯২০ সালের ১৭ মার্চ গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ায় জন্মগ্রহণ করেন। শৈশব থেকেই তিনি অত্যন্ত মানবদরদী ও অধিকার আদায়ে আপোসহীন ছিলেন। স্কুলজীবন থেকেই তাঁর মধ্যে নেতৃত্বের গুণাবলি পরিলক্ষিত হয়। ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলন, ১৯৫৪ সালের যুক্তফ্রন্ট নির্বাচন, ১৯৫৮ সালের সামরিক শাসনবিরোধী আন্দোলন, ১৯৬৬ সালের ৬ দফা, ১৯৬৯ সালের গণঅভ্যুত্থান, ১৯৭০ সালের নির্বাচনসহ বাঙালির মুক্তি ও অধিকার আদায়ের প্রতিটি গণতান্ত্রিক ও স্বাধিকার আন্দোলনে নেতৃত্ব দেন তিনি। এ জন্য তাঁকে বহুবার কারাবরণ করতে হয়েছে। তবুও বাঙালির অধিকারের প্রশ্নে তিনি কখনো শাসকগোষ্ঠীর সাথে আপোস করেননি।
১৯৭১ সালের ৭ মার্চ রেসকোর্স ময়দানে জনসমুদ্রের সামনে যে ভাষণ প্রদান করেন তা মূলত বাঙালির মুক্তির সনদ। ২০১৭ সালের ৩০ অক্টোবর ইউনেস্কো ৭ই মার্চের সেই ভাষণকে ঐতিহাসিক দলিল হিসেবে স্বীকৃতি প্রদান করে। ২৬ মার্চ ১৯৭১ স্বাধীনতার ঘোষণা করেন বঙ্গবন্ধু। বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে দীর্ঘ নয়মাস সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে ১৬ ডিসেম্বর অর্জিত হয় চুড়ান্ত বিজয়। দেশ স্বাধীনের পর বঙ্গবন্ধু তাঁর স্বপ্নের সোনার বাংলা বিনির্মাণে কাজ শুরু করেন।
কিন্তু ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট দেশের স্বাধীনতা বিরোধী ষড়যন্ত্রকারীদের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ মদদে ঘাতকচক্রের বিপথগামী সেনা সদস্যদের হাতে ধানমন্ডির নিজ বাসভবনে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান শহীদ হন। একই সাথে শহীদ হন বঙ্গবন্ধুর সহধর্মিণী বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন নেছা মুজিব, পুত্র শেখ কামাল, শেখ জামাল, শিশুপুত্র শেখ রাসেলসহ আরো অনেকে। এ নৃশংস হত্যাকাণ্ড পৃথিবীর ইতিহাসে বিরল। এরপর ৩রা নভেম্বর জাতীয় চার নেতাকে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়। এ হত্যাকাণ্ডের মাধ্যমে ঘাতকরা বঙ্গবন্ধুর সেই স্বপ্ন বাস্তবায়নে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে।
স্বাধীনতা বিরোধী জাতীয় শত্রু ও ঘাতকরা রক্তে অর্জিত বাঙালির রাষ্ট্রীয় কাঠামোকে ধ্বংসের হীন উদ্দেশ্যেই দেশপ্রেমিকদের হত্যা করেছিল। কিন্তু দেশবাসী সকল ষড়যন্ত্র ছিন্ন করে সোনার বাংলা গড়ার জন্য বঙ্গবন্ধু কন্যা জননেত্রী দেশরত্ন শেখ হাসিনাকে রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব অর্পণ করেন। দেশের মানুষের সহযোগিতায় মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সেই সোনার বাংলা গড়তে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছেন।
আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি, প্রধানমন্ত্রী যে গতিতে উন্নয়ন অব্যাহত রেখেছেন, তাতে আগামী ২০৪১ সাল নয়, তার অনেক আগেই বিশে^র অন্যতম ধনী দেশে পরিণত হবে বাংলাদেশ। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দূরদর্শী, দৃঢ়চেতা ও বলিষ্ঠ নেতৃত্বে ইতোমধ্যে বাংলাদেশ উন্নয়নশীল দেশে পরিণত হয়েছে।
বাণীতে মেয়র আরো বলেন, বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সুখী-সমৃদ্ধ সোনার বাংলা বাস্তবায়নে আমাদের নতুন প্রজন্মকে দেশপ্রেম, সততা ও নিষ্ঠাবোধ জাগ্রত করার মাধ্যমে তাদের প্রকৃত মানুষ হিসেবে গড়ে তুলতে হবে। তাদের মহান মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ইতিহাস এবং বঙ্গবন্ধু ও জাতীয় চারনেতা সর্ম্পকে জানাতে হবে। ঐতিহাসিক বিজয় দিবসে আমি বঙ্গবন্ধু স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়তে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ থাকার আহ্বান জানাই। মহান বিজয় দিবসে আমি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানসহ সকল শহিদদের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা ও তাঁদের রুহের মাগফিরাত কামনা করছি। সবাইকে মহান বিজয় দিবসের শুভেচ্ছা।