প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জাতির পিতা হত্যার পর দেশে যে ‘বিচারহীনতার সংস্কৃতি’ চালু হয়েছিল তা যেন আবার ফিরে আসতে না পারে, সে জন্য সবাইকে সতর্ক থাকার আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি বলেন, তাঁর মতো আর কেউ যেন মা-বাবা, ভাইদের হারিয়ে বিচারহীনতার সংস্কৃতির শিকার না হন।
গতকাল বিকালে ‘বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট প্রতিষ্ঠার সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপন’ উপলক্ষে রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে আয়োজিত অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির ভাষণে তিনি একথা বলেন। প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রী আনিসুল হক, সম্মানিত অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন ভারতের সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি মুকেশ কুমার, সাবেক প্রধান বিচারপতি ও আইন কমিশনের চেয়ারম্যান বিচারপতি এ বি এম খায়রুল হক। অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন আপিল বিভাগের বিচারপতি ওবায়দুল হাসান।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, আমি চাই, আমাদের মতো কেউ যেন আর বিচারহীনতার (ইনডেমনিটি) কষ্ট না পান। বাবা-মা-ভাই মারা গেল, তার বিচার চাইতে পারব না, আবার তাদেরই গণতন্ত্রের ধারক ও বাহক বলা হয়। এটা সত্যিই দেশের জন্য, জাতির জন্য, স্বাধীনতার জন্য, একটা স্বাধীন রাষ্ট্রের জন্য অত্যন্ত লজ্জাজনক। এরকম অবস্থায় যেন বাংলাদেশ আর কোনো দিন না পড়ে। তিনি বলেন, এ দেশে আদালতে বোমা মেরে বিচারক হত্যা করা হয়েছে, আইনজীবীকেও হত্যা করা হয়েছে। আমিই যে শুধু গ্রেনেড হামলার শিকার হয়েছি তা নয়, আমাদের বিচারকরাও এ থেকে রক্ষা পাননি। জামায়াত-বিএনপি যখন বিরোধী দলে তখন ঝালকাঠি ও গাজীপুরে এ ধরনের ঘটনা ঘটিয়েছিল। প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের সবসময় প্রচেষ্টা ছিল সর্বোচ্চ আদালত স্বাধীনভাবে চলবে। তাই তার আর্থিক ব্যবস্থাপনা যেটা আগে ছিল সরকারপ্রধানের হাতে, সেটা সম্পূর্ণভাবে সুপ্রিম কোর্টের হাতে হস্তান্তর করি। আলাদা বাজেট বরাদ্দ দিই। বিধিমালা প্রণয়নের ব্যবস্থা করি। স্থায়ী আইন কমিশন গঠন করি। জুডিশিয়াল ট্রেনিং ইনস্টিটিউট বাংলাদেশে নেই, এটা খুব অবাককান্ড! আমি কিন্তু সেটাও তৈরি করে দিয়েছিলাম। আমাদের কোনো ড্রাফট উইং ছিল না। ড্রাফট উইংও তৈরি করে দিয়েছি। শেখ হাসিনা বলেন, তিনি (বঙ্গবন্ধু) এ দেশের মানুষের জন্য এত ত্যাগ শিকার করলেন অথচ তাকেই হত্যা করা হলো। এর মধ্য দিয়ে মুক্তিযুদ্ধের আদর্শকে প্রকৃত পক্ষে হত্যা করা হয়েছে। সেই হত্যাকারীদের বিচার যাতে না হয় সেই মার্শাল ল দিয়ে ইনডেমনিটি অর্ডিন্যান্স জারি করা হয়। অর্ডিন্যান্স জারি করে খুনিদের বিচারের হাত থেকে শুধু রেহাই দিয়েছিল, তাই না, বিভিন্ন দূতাবাসে চাকরি দিয়ে পুরস্কৃত করা হয়। বাংলাদেশে শুরু হয় বিচারহীনতার কালচার। শেখ হাসিনা বলেন, আমি বিচার চেয়েছিলাম কিন্তু পাইনি। আমার অধিকার ছিল না মামলা করার। কারণ, ইনডেমনিটি অধ্যাদেশ জারি করা হয়েছিল। আমরা ২১ বছর পর সরকার গঠন করি। এ অধ্যাদেশ যাতে বাতিল না হয় বিরোধী দল সব সময় সক্রিয় ছিল। কোর্টে যখন আসে তখন সুপ্রিম কোর্ট এ অধ্যাদেশ বাতিল করার নির্দেশ দেয়। পার্লামেন্টে আমরা তা বাতিল করি। এরপরই আমরা বিচার কাজ শুরু করতে পারি।