২৯ মার্চ ২০২৪, শুক্রবার, ০৪:০৭:৪৭ অপরাহ্ন
সাশ্রয় হবে ১৯ হাজার ৭৬০ কোটি টাকা
  • আপডেট করা হয়েছে : ০৫-০১-২০২৩
সাশ্রয় হবে ১৯ হাজার ৭৬০ কোটি টাকা

ভোজ্য তেল সংকট নিরসনে তিন বছর মেয়াদি কর্মপরিকল্পনা চূড়ান্ত, দেশে ভোজ্য তেলের চাহিদা ২৪ লাখ টন, উৎপাদন ৩ লাখ টন, ঘাটতি ২১ লাখ টন, কর্মপরিকল্পনার লক্ষ্য ভোজ্য তেলের চাহিদা পূরণ ও আমদানি-নির্ভরতা হ্রাস এবং তিন বছরে ৪০ শতাংশ স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন

দেশের ভোজ্য তেলের সংকট নিরসনে তিন বছর মেয়াদি কর্মপরিকল্পনা চূড়ান্ত করেছে সরকার। দেশে ভোজ্য তেলের চাহিদা রয়েছে ২৪ লাখ টন অথচ উৎপাদন হয় মাত্র ৩ লাখ টন। বাকি ২১ লাখ টনই ঘাটতি, যা আমদানির মাধ্যমে সামাল দেওয়া হয়। ভোজ্য তেলের চাহিদা মেটাতে, আমদানি-নির্ভরতা কমাতে ও তিন বছরে ৪০ শতাংশ স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জনের লক্ষ্যে এ কর্মপরিকল্পনা হাতে নিয়েছে সরকার। এটি বাস্তবায়ন হলে সরকারের তিন বছরে বৈদেশিক মুদ্রা সাশ্রয় হবে ১৯ হাজার ৭৬০ কোটি টাকা।

কর্মপরিকল্পনায় বলা হয়েছে, ভোজ্য তেলের বার্ষিক প্রায় ২৪ লাখ টনের বিপরীতে তিন বছরে ৪.০৭, ৭.১১ ও ১১ লাখ টন উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। এটি বাস্তবায়ন হলে ২০২৪-২৫ সাল নাগাদ তিন বছরে বাদাম ও সয়াবিন থেকে তেল নিষ্কাশন সম্ভব না হলেও আমদানির পরিমাণ শতকরা ৪০.২৪ ভাগ কমানো যাবে। সব তেলজাতীয় ফসল থেকে তেল নিষ্কাশন সম্ভব হলে শতকরা ৪৫.৮৬ ভাগ আমদানি ব্যয় কমে যাবে।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের ‘তেলজাতীয় ফসলের উৎপাদন বৃদ্ধি’ প্রকল্পের জাতীয় কর্মশালায় উপস্থাপিত তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশে জনপ্রতি তেল ব্যবহারের পরিমাণ বেড়েছে। গবেষণার ফলাফলে বলা হয়েছে, ২০১৫ থেকে ২০১৯ সালে মাথাপিছু ভোজ্য তেল ব্যবহারের পরিমাণ ৩৬ শতাংশ বেড়েছে। দেশের অভ্যন্তরীণ চাহিদার ৯০ শতাংশ ভোজ্য তেলই আমদানি করতে হয়। তবে সরকার চাইছে আমদানি-নির্ভরতা কিছুটা কমিয়ে দেশেই উৎপাদন বৃদ্ধি করতে। এ জন্য বিভিন্ন ধরনের পরিকল্পনা ও প্রকল্প হাতে নিয়েছে কৃষি মন্ত্রণালয়। এর মধ্যে ২০২২-২৩ থেকে ২০২৪-২৫ অর্থবছরের মধ্যে ‘ভোজ্য তেলে আমদানি-নির্ভরতা হ্রাসে তিন বছর মেয়াদি কর্মপরিকল্পনা’ শীর্ষক পরিকল্পনা তৈরি করেছে তারা। এতে বলা হয়, গত ফেব্রুয়ারিতে রাশিয়া-রাশিয়ার যুদ্ধ, ইন্দোনেশিয়ার পাম তেলের সাময়িক আমদানি বন্ধ ঘোষণা এবং ব্রাজিল-আর্জেন্টিনার খরার কারণে সয়াবিনের উৎপাদন হ্রাস বিশ্ব তেলের বাজারে অস্বাভাবিক পরিস্থিতির সৃষ্টি করেছে। এ সুযোগে দেশের অসাধু বাণিজ্য সিন্ডিকেট বাজারের নিয়ন্ত্রণ নিলে ভোজ্য তেলের বাজার অস্থিতিশীল হয়ে পড়ে। ভোজ্য তেলের বাজার সিন্ডিকেটমুক্ত করতে বেশ কিছু সুপারিশ করা হয় কর্মপরিকল্পনায়। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো- অসাধু বাণিজ্য সিন্ডিকেট শনাক্তকরণ ও যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ, সংকটকালে ভোজ্য তেল আমদানির জন্য দ্রুত একাধিক রপ্তানিকারক দেশের সন্ধান করা, বিশেষ প্রণোদনা প্যাকেজের আওতায় দ্রুত অভ্যন্তরীণ উৎপাদন বৃদ্ধি করা, তেলজাতীয় ফসল উৎপাদনের সঠিক তথ্য নিয়মিত প্রচার ও বিভ্রান্তিকর তথ্যের বিস্তার বন্ধ করা এবং মূল্যবৃদ্ধি নিয়ন্ত্রণে অভ্যন্তরীণ সরবরাহ ও মজুদের উত্তম ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করা।

 

কর্মপরিকল্পনায় আরও বলা হয়, বাংলাদেশ ব্যাংক ও জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) ২০২০-২১ অর্থবছরের হিসাব অনুযায়ী দেশে ১৩ লাখ ৫৫ হাজার টন পাম তেল ও ৭ লাখ ৮০ হাজার টন সয়াবিন তেল আমদানি করা হয়েছে। সব মিলিয়ে ২১ লাখ ৩৬ হাজার টন তেল আমদানি করা হয়েছে। এতে সরকারের ব্যয় হয়েছে ১৬ হাজার কোটি টাকা। ২০২১-২২ অর্থবছরের প্রথম ১০ মাসে এ খাতে ব্যয় হয়েছে ২০ হাজার কোটি টাকা। দেশে সরিষা, তিল ও সূর্যমুখী থেকে প্রাপ্ত ভোজ্য তেলের পরিমাণ প্রায় ৩ লাখ টন। আর দেশে বার্ষিক ভোজ্য তেলের চাহিদা ২৪ লাখ টন। রবি মৌসুমে সরিষা, সয়াবিন, বাদাম, সূর্যমুখী, তিল ও চিনাবাদাম চাষ করার পাশাপাশি খরিফ মৌসুমেও তিল ও চিনাবাদাম উৎপাদন করা যায়। এ ছাড়া তেলজাতীয় ফসলের আবাদি জমি বৃদ্ধি ও মানসম্মত বীজ উৎপাদন এবং সরবরাহসহ নানা উপায়ে বেশি তেল উৎপাদন সম্ভব। কর্মপরিকল্পনার উদ্দেশ্য প্রসঙ্গে বলা হয়, তিন বছরের মধ্যে ভোজ্য তেল আমদানি কমিয়ে এনে ৪০ শতাংশ স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন করতে হবে। লক্ষ্য থাকবে, আমদানির ওপর ভরসা কমিয়ে কৃষকদের সক্ষমতা ও সচেতনতা বাড়ানো এবং অন্যান্য তেল ব্যবহারে আগ্রহী করে তোলা।

শেয়ার করুন