০৩ ডিসেম্বর ২০২৪, মঙ্গলবার, ১১:২০:০৭ অপরাহ্ন
রাজনৈতিক দলগুলোর মতপার্থক্যে নির্বাচনের পরিবেশ অনুকূল নয়: ইইউকে ইসি
  • আপডেট করা হয়েছে : ১৮-০১-২০২৩
রাজনৈতিক দলগুলোর মতপার্থক্যে নির্বাচনের পরিবেশ অনুকূল নয়: ইইউকে ইসি

দেশের সংবিধান অনুযায়ী চলতি বছরে ডিসেম্বর বা আগামী জানুয়ারি মাসে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন হবে। তবে ওই কিছু বিষয় নিয়ে এখনো রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে মতপার্থক্য থাকায় নির্বাচনের অনুকূল পরিবেশ তৈরি হয়নি। এ মতপার্থক্যের কারণে অতীতে নির্বাচন কমিশন চেষ্টা করেও অবাধ ও সুষ্ঠু ভোট করতে পারেনি।

বাংলাদেশে নিযুক্ত ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) হেড অব ডেলিগেশন চার্লস হোয়াইটলির নেতৃত্বে ১১ সদস্যের প্রতিনিধি দলকে এসব তথ্য জানিয়েছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। 

বুধবার প্রতিনিধি দলটি নির্বাচন ভবনে গিয়ে কমিশনের সঙ্গে বৈঠক করে। 

বৈঠকের পর চার্লস হোয়াইটলি বলেন, আগামী জাতীয় নির্বাচনে পর্যবেক্ষক পাঠাতে ইউরোপীয় ইউনিয়ন আগ্রহী। এ বিষয়ে বাংলাদেশি কর্তৃপক্ষের ইতিবাচক মন্তব্যে তারা খুশি। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, সবাই একটি অংশগ্রহণমূলক, শান্তিপূর্ণ ও সুষ্ঠু নির্বাচন চায়।

ইসির সঙ্গে ইইউ প্রতিনিধি দলের বৈঠক দুপুর সাড়ে ১২টায় শুরু হয়ে চলে দেড় ঘণ্টা। বৈঠকে নির্বাচন কমিশনের পক্ষে সিইসি কাজী হাবিবুল আউয়াল, নির্বাচন কমিশনার মো. আলমগীর ও মো. আনিছুর রহমান উপস্থিত ছিলেন। এছাড়াও নির্বাচন কমিশন সচিব মো. জাহাঙ্গীর আলম, অতিরিক্ত সচিব অশোক কুমার দেবনাথও সেখানে ছিলেন। 

অপরদিকে চার্লস হোয়াইটলির নেতৃত্বে প্রতিনিধি দলে ছিলেন ডেনমার্ক, সুইডেন, জার্মান, নেদারল্যান্ড, সুইজারল্যান্ড ও নরওয়ের রাষ্ট্রদূতসহ ১১ জন। বৈঠকের পর সিইসি ও চার্লস হোয়াইটলি সাংবাদিকদের ব্রিফ করেন। এর আগে গত জুলাই মাসে ইসির সঙ্গে বসেছিল ইইউ দল।

সূত্র জানায়, ওই বৈঠকে সিইসি বর্তমান কমিশন দায়িত্ব নেওয়ার পর জাতীয় সংসদের দুটি উপনির্বাচন, দুটি সিটি করপোরেশন, ১৯ পৌরসভা, ২১৯টি ইউনিয়ন পরিষদসহ অন্যান্য নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে শেষ করেছেন বলে প্রতিনিধি দলকে জানিয়েছেন। তাদের বলেছেন, চলতি বছরের ডিসেম্বর বা আগামী জানুয়ারি মাসে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন করাই বড় চ্যালেঞ্জ। 

এর কারণ ব্যাখ্যা করে তাদের তিনি বলেন, বেশিরভাগ রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে এখনো মতৈক্য হয়নি। নির্বাচনের সার্বিক পরিস্থিতি এখনো অনুকূল নয়। কয়েকটি রাজনৈতিক দল নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন দাবি করছে। যদিও এসব বিষয় নির্বাচনের কমিশনের এখতিয়ারভুক্ত নয়। আমাদের দায়িত্ব হচ্ছে সংবিধান ও আইন অনুযায়ী নির্দিষ্ট সময়ে নির্বাচন আয়োজন করা। নির্বাচনের সময়ে বর্তমান রাজনৈতিক সরকার আমাদের কাজে সহায়তা করবে বলে আমরা বিশ্বাস করি। 

প্রতিনিধি দলকে সিইসি আরও বলেন, আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন অংশগ্রহণমূলক, অবাধ, স্বচ্ছ ও নিরপেক্ষভাবে সম্পন্ন করতে আমাদের সর্বোচ্চ চেষ্টা থাকবে। রাজনৈতিক দলসহ অংশীজনেরা সহযোগিতা না করলে ওই নির্বাচন অর্থবহ হবে না। তিনি বলেন, অতীতে দেখা গেছে- নির্বাচন কমিশন এককভাবে চেষ্টা করা সত্ত্বেও অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন করতে পারেনি। 

বৈঠকের পর সিইসি কাজী হাবিবুল আউয়াল বলেন, আমাদের যে রোডম্যাপ আছে, সে রোডম্যাপ অনুযায়ী আমরা নির্বাচনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছি। আমাদের প্রস্তুতি রয়েছে এবং আমরা যথাসময়ে নির্বাচন করব। আমরা এটাও উনাদেরকে পরিষ্কার করে বলেছি। কিছু কিছু বিষয় এখনো রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে এখনো মতপাথর্ক্য রয়েছে। এই মতপার্থক্য থাকার কারণে এখনো নির্বাচনি পরিবেশটা অনুকূলে (কনজেনিয়াল) নয়। 

অচিরেই মতপার্থক্যটা দূর হয়ে যাবে- এ আশা প্রকাশ করে সিইসি বলেন, শেষমেশ দলগুলো নির্বাচনে আসবে সেই বিষয়ে আমরা আশাবাদ ব্যক্ত করেছি। আমরা বলেছি যদি নির্বাচন অংশগ্রহণমূলক হয় তাহলে চমৎকার প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে। সেই লক্ষ্যে আমাদের পুরো প্রস্তুতি রয়েছে। 

রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে সংলাপের বিষয়ে আলোচনা হয়েছে কিনা- এমন প্রশ্নে কাজী হাবিবুল আউয়াল বলেন, আমরা নির্বাচন কমিশন থেকে একাধিকবার বলেছি যে, রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে আলোচনার প্রয়োজন এবং ব্যাপক অর্থে তাদের মধ্যে সমঝোতা প্রয়োজন, যাতে নির্বাচন সুষ্ঠু পরিবেশে সম্পন্ন হয়। প্রথম থেকেই আমরা এ আবেদন করে আসছি, এখনো করে যাচ্ছি। 

তিনি বলেন, মতপার্থক্যগুলো রাজনৈতিক ইস্যু, আমাদের জন্য ইস্যু নয়। কাজেই রাজনৈতিক ইস্যুগুলো, যেগুলো নির্বাচনের জন্য অন্তরায় হতে পারে, সেগুলোর সুরাহা রাজনৈতিক নেতাদের করতে হবে। রাজনৈতিক দলগুলোকে সেটা অনুধাবন করতে হবে এবং বুঝতে হবে। তাহলেই নির্বাচনটা প্রত্যাশিত মাত্রায় অংশগ্রহণমূলক হবে। সুন্দর, সুষ্ঠু হবে এবং গণতান্ত্রিক চেতনায় যে নির্বাচন প্রত্যাশিত সে নির্বাচনটা ওভাবেই অনুষ্ঠিত হবে।

শেয়ার করুন