টানা ১১ মাসের রুশ অভিযানে বেহাল দশায় পড়েছে ইউক্রেন। ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় প্রতিনিয়ত বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে বেশির ভাগ অঞ্চল। ঘণ্টার পর ঘণ্টা বিদ্যুৎ থাকছে না। চলমান এ সংকটে সবচেয়ে বেশি বিপদে পড়েছে দেশটির হাসপাতালগুলো। বিশেষ হাঁপানির রোগীরা। এই আছে এই নেই অবস্থা!
গত প্রায় ৫ মাস ধরে এ অবস্থা আরও চরম হয়ে উঠেছে ইউক্রেনের হাসপাতালগুলোতে। ভয়ানক আতঙ্কের ভিতর দিন কাটাচ্ছেন হাজার হাজার ইউক্রেনীয়। রুশ হামলায় সৃষ্ট চলমান এ অচলাবস্থাকে পূর্ণ নির্যাতন বলে আখ্যায়িত করেছে ইউক্রেনীয়রা। খবর এএফপি।
ভালেনতিন মোজগভি অ্যামায়োট্রফিক ল্যাটারাল সেক্লরসিস (এএলএস) রোগে ভুগছে। যা তার নিউরোলোজির অবস্থাকে অকার্যকর করে রেখেছে। এতে তিনি সহকারী ছাড়া প্যারালাইজড অনুভব করেন ও নিজে তার শ্বাস নিতে পারে না। তার ভেন্টিলেটর সবসময় চালু রাখতে হয়। যার ফলে ইউক্রেনের ব্ল্যাকআউট এখন তার বাঁচা মরার বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে।
মোজগোভার স্ত্রী লাইডমাইলা বলেন, তার স্বামী একটি মেডিকেল অভিযোজিত বিছানায় একটি প্যাটার্নযুক্ত ডুবেটে মোড়ানো। সেখানের ভেন্টিলেটর থেকে তার মুখ কদাচিৎই দেখা যায়। তিনি আরও জানান, তার স্বামীর শরীরের কোনো নড়াচড়া নেই কিন্তু ব্রেন সম্পূর্ণ কাজ করছে। তিনি বিভিন্ন উপদেশ দিচ্ছেন। তিনি আমাদের ক্যাপ্টেন। তিনি বলেন, আমরা সুদিনের আশা করি। একদিন আমরা অবশ্যই বিজয়ী হব। উপশমকারী রোগীদের সেবাদানকারী চ্যারিটির নির্বাহী পরিচালক ইরিনা কোশকিনা জানান, বেঁচে থাকতে ইউক্রেনের হাজার হাজার মানুষের বিদ্যুৎ প্রয়োজন। তিনি বলেন, যদি হঠাৎ এই লোকদের জীবন রক্ষাকারী যন্ত্রগুলো অকার্যকর হয়ে পড়ত এবং সেই সময় তারা যদি হাসপাতালে চলে আসত তাহলে আমাদের চিকিৎসাব্যবস্থা ভেঙে পড়ত। কিয়েভের হাসপাতালে চিকিৎসাধীন, ফুসফুসের ক্যানসারে আক্রান্ত ইভা (৭৫)।
যার ডায়গোনসিস করতে সব সময় পরিপূরক অক্সিজেন সরবরাহকারী ডিভাইসের সাথে সংযোগ দিতে হয়। বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন হবার পর তার অক্সিজেন দেওয়া যন্ত্রটির ব্যাটারি শেষ হতে থাকে, যার কারণে অক্সিজেন কমতে থাকে। এ অবস্থায় ইভার মেয়ে টেটিয়ানা জানান, এটি তার মায়ের জন্য অনেটা নির্যাতনের শামিল। ভেনগ্লিস্কা নামে আরও এক নারী জানান, গত ১৭ ডিসেম্বর রাতে অন্য যেকোনো সময়ের চেয়ে প্রায় ১০ ঘণ্টারও বেশি সময় বিদ্যুৎ ছিল না। ব্যাটারিচালিত যন্ত্রের প্রায় সব উৎসই ফুরিয়ে যাচ্ছিল। তখন তিনি তার মাকে দ্রুত অ্যাম্বুলেন্সে করে হাসপাতালে নিয়ে যান। তিনি বলেন, তার স্বামী প্রতিবার তার মায়ের রুমে যেতে ভয় পাচ্ছিলেন এই ভেবে যে, তার মা বেঁচে আছেন কিনা অথবা তার শ্বাসরোধ হয়ে আসছে কিনা। ভেনগ্লিস্কা আরও জানান, তখন সিদ্ধান্ত একটি জীবন রক্ষাকারী ছিল, যদি তাদের বাড়িতে আরও চার দিন বিদ্যুৎবিহীন থাকত। তাহলে চিশ্চিত তার মা মারা যেতেন। তার স্বামী বারবার তাদের বাড়ির কথা মনে করছিলেন যেখানে তার ৭৫ বয়সি বাবা ছিল।