১৯ এপ্রিল ২০২৪, শুক্রবার, ০৫:৫৫:০৭ পূর্বাহ্ন
কে কীভাবে রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হবেন, যা আছে সংবিধানে
  • আপডেট করা হয়েছে : ০৭-০২-২০২৩
কে কীভাবে রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হবেন, যা আছে সংবিধানে

দেশের একুশতম রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদের মেয়াদ শেষের দিকে। এ কারণে ২২তম রাষ্ট্রপতি কে হবেন, তা নিয়ে চলছে আলোচনা। সংবিধানে দুই মেয়াদের বেশি রাষ্ট্রপতি থাকার বিধান না থাকায় এবার নতুন কেউ আসছেন রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ পদে।


আগামী ২৩ এপ্রিল শেষ হবে বর্তমান রাষ্ট্রপতির মেয়াদ। এর আগে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে হবে নতুন রাষ্ট্রপতি নির্বাচন। দেশের সর্বোচ্চ এই পদে কে নির্বাচিত হবেন, কারা নির্বাচিত করবেন, কীভাবে করবেন তা রয়েছে সংবিধানে।




রাষ্ট্রপতির মেয়াদ সম্পর্কে সংবিধানের ৫০ (১) অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, এই সংবিধানের বিধানাবলী সাপেক্ষে রাষ্ট্রপতি কার্যভার গ্রহণের তারিখ হইতে পাঁচ বৎসরের মেয়াদে তাহার পদে অধিষ্ঠিত থাকিবেন। তবে শর্ত থাকে যে, রাষ্ট্রপতির পদের মেয়াদ শেষ হওয়া সত্ত্বেও তাহার উত্তরাধিকারী-কার্যভার গ্রহণ না করা পর্যন্ত তিনি স্বীয় পদে বহাল থাকিবেন। একাদিক্রমে হউক বা না হউক, দুই মেয়াদের অধিক রাষ্ট্রপতির পদে কোনো ব্যক্তি অধিষ্ঠিত থাকিবেন না।



সংবিধানের ৪৮ (১) অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের একজন রাষ্ট্রপতি থাকিবেন, যিনি আইন অনুযায়ী সংসদ সদস্যগণ কর্তৃক নির্বাচিত হইবেন। (২) রাষ্ট্রপ্রধানরূপে রাষ্ট্রপতি রাষ্ট্রের অন্য সব ব্যক্তির ঊর্ধ্বে স্থান লাভ করিবেন এবং এই সংবিধান ও অন্য কোনো আইনের দ্বারা তাহাকে প্রদত্ত ও তাহার উপর অর্পিত সব ক্ষমতা প্রয়োগ ও কর্তব্য পালন করিবেন।


রাষ্ট্রপতি হওয়ার যোগ্যতা সম্পর্কে সংবিধানের ৪৮(৪) অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, কোনো ব্যক্তি রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হইবার যোগ্য হইবেন না, যদি তিনি- (ক) পঁয়ত্রিশ বৎসরের কম বয়স্ক হন; অথবা (খ) সংসদ-সদস্য নির্বাচিত হইবার যোগ্য না হন; অথবা (গ) কখনো এই সংবিধানের অধীন অভিশংসন দ্বারা রাষ্ট্রপতির পদ হইতে অপসারিত হইয়া থাকেন।


রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদের সঙ্গে ১ ফেব্রুয়ারী সংসদ ভবনে রাষ্ট্রপতির কার্যালয়ে সাক্ষাৎ করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা/পিআইডি




রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের সময় নিয়ে সংবিধানের ১২৩ (১) অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, রাষ্ট্রপতি পদের মেয়াদ অবসানের কারণে উক্ত পদ শূন্য হইলে মেয়াদ সমাপ্তির তারিখের পূর্ববর্তী নব্বই হইতে ষাট দিনের মধ্যে শূন্যপদ পূরণের জন্য নির্বাচন অনুষ্ঠিত হইবে।


তবে শর্ত থাকে যে, যে সংসদের দ্বারা তিনি নির্বাচিত হইয়াছেন সেই সংসদের মেয়াদকালে রাষ্ট্রপতির কার্যকাল শেষ হইলে সংসদের পরবর্তী সাধারণ নির্বাচন না হওয়া পর্যন্ত অনুরূপ শূন্যপদ পূর্ণ করিবার জন্য নির্বাচন অনুষ্ঠিত হইবে না এবং অনুরূপ সাধারণ নির্বাচনের পর সংসদের প্রথম বৈঠকের দিন হইতে ত্রিশ দিনের মধ্যে রাষ্ট্রপতির শূন্য পদ পূর্ণ করিবার জন্য নির্বাচন অনুষ্ঠিত হইবে।




সংসদীয় গণতন্ত্রের যুগে ১৯৯১ সালের পর আর কখনো রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে ভোটের প্রয়োজন হয়নি। বরাবরই ক্ষমতাসীন দলের প্রার্থীই বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় রাষ্ট্রপতি পদে আসীন হয়ে আসছেন। ফলে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের প্রার্থী মানেই নিশ্চিত রাষ্ট্রপতি।





নির্বাচন কমিশনের (ইসি) তফসিল অনুসারে, দেশের ২২তম রাষ্ট্রপতি নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে ১৯ ফেব্রুয়ারি। তবে আওয়ামী লীগ ছাড়া অন্য কোনো দল রাষ্ট্রপতি পদে প্রার্থী দেবে, এমন কোনো তৎপরতা বা আলোচনা নেই। ফলে একক প্রার্থী হওয়ার সম্ভাবনাই বেশি। এ পরিস্থিতিতে ১৩ ফেব্রুয়ারি প্রার্থিতা যাচাই-বাছাইয়ের পরই আসলে নিশ্চিত হওয়া যাবে, কে হচ্ছেন পরবর্তী রাষ্ট্রপতি। তখন ভোটের আর প্রয়োজন পড়বে না।


ঘোষিত তফসিল অনুসারে, রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে নির্বাচনী কর্মকর্তা হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী হাবিবুল আউয়াল। আগ্রহী প্রার্থীরা ১২ ফেব্রুয়ারি মনোনয়নপত্র জমা দিতে পারবেন। ১৩ ফেব্রুয়ারি যাচাই-বাছাইয়ের পর ১৪ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করা যাবে। এ নির্বাচনে ভোটার সংসদ সদস্যরা। ভোটার ৩৪৩ জন সংসদ সদস্য।


 


২০১৮ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় দ্বিতীয় দফায় রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হন মো. আবদুল হামিদ। আগামী ২৩ এপ্রিল শেষ হবে তার মেয়াদ। তবে সংবিধান অনুযায়ী, ২৩ ফেব্রুয়ারির মধ্যে নতুন রাষ্ট্রপতি নির্বাচন করতে হবে।


রাষ্ট্রপতির কোনো নির্বাহী ক্ষমতা নেই। তাই অনেকেই পদটিকে ‘আলংকারিক’ হিসেবে আখ্যা দেন। তবে রাজনৈতিক সংকট কিংবা নির্বাচনের সময়ে রাষ্ট্রপতি গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠতে পারেন। সে কারণে আগামী সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে এবার রাষ্ট্রপতি নির্বাচন আলোচনায় গুরুত্ব পাচ্ছে।

শেয়ার করুন