২২ নভেম্বর ২০২৪, শুক্রবার, ০২:০২:৩০ পূর্বাহ্ন
জেসমিনের মৃত্যু: র‌্যাবের ১১ সদস্য প্রত্যাহার, জব্দ সিসিটিভি ফুটেজ
  • আপডেট করা হয়েছে : ০১-০৪-২০২৩
জেসমিনের মৃত্যু: র‌্যাবের ১১ সদস্য প্রত্যাহার, জব্দ সিসিটিভি ফুটেজ

র‌্যাব হেফাজতে নওগাঁ ভূমি অফিসের কর্মচারী সুলতানা জেসমিনের (৩৮) মৃত্যুর ঘটনায় জয়পুরহাট র‌্যাব ক্যাম্পের ১১ সদস্যকে প্রত্যাহার করে র‌্যাব-৫ (রাজশাহী) ব্যাটালিয়নে সংযুক্ত করা হয়েছে। তদন্তের স্বার্থে তাদের প্রত্যাহার করা হয়েছে। ফলে তারা কেউ কর্মরত নেই। ১১ জনের মধ্যে কোম্পানিপ্রধান থেকে গাড়িচালক পর্যন্ত রয়েছেন। সংশ্লিষ্ট সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।

এদিকে র‌্যাব সদর দপ্তরের তদন্ত কমিটি জেসমিনকে যেখান থেকে আটক করা হয় এবং যে হাসাপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হয় সেখানকার ফুটেজ সংগ্রহ করেছে। পাশাপাশি ওই নারীর ব্যাংক অ্যাকাউন্ট জব্দ করে লেনদেনের তথ্য নিয়েছে। এতে জেসমিন ছাড়া অন্য কারও লেনদেন আছে কিনা এবং মামলায় যেসব অভিযোগ আনা হয়েছে তা সঠিক কিনা তা খতিয়ে দেখছে। এছাড়া রাজশাহী বিভাগীয় কমিশনারের কার্যালয়ের পরিচালক (যুগ্মসচিব) এনামুল হকের অভিযানে প্ররোচনা দেওয়ার তথ্য পেয়েছে তদন্ত কমিটি। তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি এখন রাজশাহীতে অবস্থান করছে।

অপরদিকে জেসমিনের মৃত্যুর এক সপ্তাহ পেরিয়ে গেলেও এখনো পরিবারের পক্ষ থেকে কোনো মামলা করা হয়নি। অজ্ঞাত কারণে জেসমিনের পরিবারের সদস্যরা লোকচক্ষুর আড়ালে থাকছেন। মিডিয়ার সামনে তারা কোনো কথা বলতে চাইছেন না।

এ বিষয়ে জেসমিনের মামা ও নওগাঁ পৌরসভার সাবেক কাউন্সিলর নাজমুল হক মন্টু জানান, তার ভাগ্নি সাদামাটা জীবনযাপন করতেন। এলাকায় তার বিরুদ্ধে কোনো প্রকার অভিযোগ নেই। পরিবারের পক্ষ থেকে মামলা না করার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, হাইকোর্টের আদেশের দিকে তারা চেয়ে আছেন। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে হাইকোর্ট কী নির্দেশনা দেন তা দেখার পর পরিবারের পক্ষ থেকে পরবর্তী পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।

যুগ্মসচিবের মামলার প্রধান আসামি আল আমিন গ্রেফতার! : জেসমিন আটক হওয়ার একদিন পর ২৩ মার্চ তার বিরুদ্ধে ডিজিটাল সিকিউরিটি আইনে মামলা করেছিলেন এনামুল হক। তার ফেসবুক আইডি হ্যাকড করে প্রতারণা ও বিপুল টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ করা হয়েছে মামলায়। মামলার প্রধান আসামি করা হয়েছে চাঁদপুরের আল আমিন নামের এক ব্যক্তিকে। এজাহারে উল্লেখ করা হয়েছে, তিনি একজন পেশাদার হ্যাকার। কিন্তু র‌্যাবের হাতে ঢাকায় গ্রেফতার হওয়া আল আমিনের নতুন পরিচয় জানিয়েছে ডিএমপির শাহজাহানপুর থানা পুলিশ। পুলিশ বলছে, আল আমিন মোবাইল ব্যাংকিং বিকাশের একজন এজেন্ট। তাদের কাছে সর্বশেষ এমন তথ্যই আছে।

এ বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে ডিএমপির শাহজাহানপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মনির হোসেন মোল্লা বলেন, আল আমিনের গ্রামের বাড়ি চাঁদপুর। কিন্তু আমার থানার অধীনে মালিবাগে তার বিকাশের দোকান আছে বলে জেনেছি। ওই দোকান থেকেই তাকে গ্রেফতার করা হয়। এজন্য র‌্যাব আসামিকে এই থানায় দিয়েছে। র‌্যাব আল আমিনকে এই থানায় দিলেও তার বিরুদ্ধে ডিএমপির কোনো থানায় মামলা ছিল না। পরে সন্দেহজনক অপরাধী হিসাবে ৫৪ ধারায় তাকে গ্রেফতার দেখিয়ে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়। তবে আল আমিনের বিরুদ্ধে রাজশাহীর রাজপাড়া থানায় মামলা আছে বলে শুনেছি। তাকে গ্রেফতার করে রাখার বিষয়টি আমরা রাজপাড়া থানা পুলিশকে জানিয়েছি।

এদিকে রাজশাহী মেট্রোপলিটন পুলিশের মুখপাত্র অতিরিক্ত উপকমিশনার (এডিসি) রফিকুল আলম বলেন, যুগ্মসচিব এনামুল হকের করা মামলার প্রধান আসামি আল আমিন গ্রেফতার হয়েছে কিনা আমার জানা নেই।
ক্ষুব্ধ নওগাঁর সুশীল সমাজ : র‌্যাব হেফাজতে জেসমিনের মৃত্যুর ঘটনায় ফুঁসে উঠেছে নওগাঁর সুশীল সমাজ। প্রতিদিনই প্রতিবাদ সভা হচ্ছে। বৃহস্পতিবার জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে সুজন নওগাঁ জেলা শাখা শহরের প্রাণকেন্দ্র মুক্তির মোড়ে সমাবেশ করে। এর আগে বাংলাদেশ সমাজতান্ত্রিক দল (বাসদ) নওগাঁ জেলা শাখার উদ্যোগে প্রতিবাদ সভা হয়। রাজশাহী বারের ১০ জন সিনিয়র আইনজীবী শুক্রবার নওগাঁ শহরের ঘটনাস্থল পরিদর্শনসহ সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন পক্ষের সঙ্গে কথা বলেছেন। তারা শনিবার (আজ) রাজশাহীতে সুলতানা জেসমিনের মৃত্যুর ঘটনা সম্পর্কে তাদের প্রাপ্ত তথ্যাবলি সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে প্রকাশ করবেন।

বাসদের জেলা সমন্বয়কারী জয়নাল আবেদীন মুকুল বলেন, জেসমিনের মৃত্যুর ঘটনায় এলাকাবাসী অন্ধকারে। ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত করে দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানাচ্ছি যাতে প্রশাসনের কোনো কর্মকর্তা ভবিষ্যতে এ ধরনের আইনবহির্ভূত কাজে জড়িত হওয়ার সাহস না পান।

শেয়ার করুন