২৩ নভেম্বর ২০২৪, শনিবার, ০৬:২৯:১৪ অপরাহ্ন
চলতি মাসে জাহাজ ভিড়বে টার্মিনালে
  • আপডেট করা হয়েছে : ১০-০৪-২০২৩
চলতি মাসে জাহাজ ভিড়বে টার্মিনালে

পায়রা সমুদ্রবন্দর এখন কর্মমুখর। পটুয়াখালীর কলাপাড়ার রাবনাবাদ নদীর পাড়ে চলছে উন্নয়নের মহাকর্মযজ্ঞ। আরও এক ধাপ এগিয়ে গেল দেশের তৃতীয় সমুদ্রবন্দর পায়রা। শেষ হয়েছে ৬ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে রাবনাবাদ চ্যানেলের ক্যাপিটাল ড্রেজিংয়ের কাজ। চলছে বন্দরের ফার্স্ট টার্মিনাল স্থাপনার নির্মাণকাজ। চলতি মাসে বিদেশি কয়লাবাহী জাহাজ পায়রাবন্দরের টার্মিনালে এসে ভেড়ার কথা রয়েছে। ড্রেজিংয়ের মাধ্যমে বন্দর চ্যানেলের গভীরতা বাড়ায় রাজস্ব আয় বাড়বে আট থেকে দশ গুণ। এতে বাংলাদেশের বৈদেশিক বাণিজ্যের ব্যাপক প্রসার ঘটবে এবং অর্থনীতিতে নতুন দিগন্তের সূচনা হবে বলে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন।

বন্দর সূত্রে জানা গেছে, প্রথম জেটি প্রকল্পের সঙ্গে ৬ দশমিক ৩৫ কিলোমিটার দীর্ঘ ছয় লেনের একটি সংযোগ সড়ক রয়েছে। সেই সঙ্গে আন্ধারমানিক নদীর ওপর ১ দশমিক ১২ কিলোমিটার দীর্ঘ একটি সেতুও নির্মাণ করা হচ্ছে। জেটির সঙ্গে সমানতালে এগিয়ে চলছে এসব নির্মাণকাজ। ৬৫০ মিটারের মূল জেটি এবং ৩২৫ বর্গমিটার ব্যাকআপ ইয়ার্ডের কাজ  শেষ হলে ২০০ মিটার দীর্ঘ ৩টি মাদার ভ্যাসেল জাহাজ নিয়মিত এখানে কনটেইনার খালাস করতে পারবে। চ্যানেলের ক্যাপিটাল ড্রেজিংয়ের কাজ শেষ করেছে ‘জান দে নুল’ নামের বেলজিয়ামভিত্তিক ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। এ ড্রেজিং কার্যক্রমের ফলে রামনাবাদ চ্যানেলটি ১০.৫ মিটার গভীরতায় উন্নীত হয়েছে। এর ফলে ২২৫ মিটার দৈর্ঘ্য এবং ৩২ মিটার প্রস্থবিশিষ্ট প্যানাম্যাক্স আকৃতির বড় জাহাজ পণ্য নিয়ে সরাসরি বন্দরে ভিড়তে পারবে। ২০১৩ সালের ১৫ নভেম্বর পায়রাবন্দর যাত্রা শুরু করে এবং ২০১৯ থেকে পায়রাবন্দর অপারেশনাল কার্যক্রম চালু হয়। গত এক বছরে পায়রা সমুদ্রবন্দর থেকে আয় হয়েছে প্রায় ৮০০ কোটি টাকা। স্কিম পরিচালক কমডোর রাজীব ত্রিপুরা বলেন, দীর্ঘ ৭৫ কিমি চ্যানেলের ক্যাপিটাল ড্রেজিং বাস্তবায়নের আগে দীর্ঘ কয়েক বছর স্ট্যাডি ও সমীক্ষা করা হয়েছে। এই স্ট্যাডি থেকে হতে প্রাপ্ত তথ্য-উপাত্ত থেকে চূড়ান্তভাবে আন্তর্জাতিক ডিজাইন করে ক্যাপিটাল ড্রেজিং করা হয়েছে। প্রকল্প পরিচালক জেডিএন জান মোয়েন বলেন, বাংলাদেশের তৃতীয় সমুদ্রবন্দর পায়রা ক্যাপিটাল ও মেইনটেনেন্স ড্রেজিংয়ের কাজে সরাসরিভাবে যুক্ত হতে পারায় ‘জান দে নুল’র জন্য অত্যন্ত গর্বের বিষয়। এ প্রকল্পে নিজস্ব অভিজ্ঞতা ও দক্ষতা কাজে লাগিয়ে একটি আন্তর্জাতিক মানের চ্যানেল সাফল্যজনকভাবে খননকাজ শেষ করতে পেরে আমরা খুবই অনন্দিত। পায়রাবন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান রিয়ার অ্যাডমিরাল মোহাম্মদ সোহায়েল বলেন, পায়রাবন্দর বাংলাদেশের স্বাধীনতার পর দেশের প্রথম স্মার্ট বন্দর। এটি প্রধানমন্ত্রীর যুগান্তকারী একটি সিদ্ধান্ত। নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের পৃষ্ঠপোষকতায় একটি আধুনিক মাস্টারপ্ল্যানের আওতায় এই বন্দরটি ধাপে ধাপে এগিয়ে যাচ্ছে। ইতোমধ্যে ৬.৫০০ একর ভূমি অধিগ্রহণ করা হয়েছে। আগামীতে বন্দরে প্রথম টার্মিনালের সঙ্গে যুক্ত হচ্ছে মাল্টিপারপাস টার্মিনাল। এদের মধ্যে রয়েছে কনটেইনার টার্মিনাল-১, কনটেইনার টার্মিনাল-২, লিকুইড বাল্ক টার্মিনাল, কোল টার্মিনাল ও এলএনজি টার্মিনাল। বন্দরের এই সক্ষমতার মাধ্যমে বাংলাদেশের বৈদেশিক বাণিজ্যের ক্ষেত্রে ব্যাপক প্রসার ঘটবে এবং দেশের অর্থনীতিতে নতুন দিগন্তের সূচনা হবে। ইতোমধ্যে বন্দরকে ঘিরে দেশি-বিদেশি ব্যবসায়ী ও বিনিয়োগকারীদের মধ্যে ব্যাপক আগ্রহ সৃষ্টি হয়েছে বলে তিনি জানান।

পটুয়াখালী-৪ আসনের এমপি আলহাজ অধ্যক্ষ মহিব্বুর রহমান মহিব বলেন, ক্যাপিটাল ড্রেজিং শেষ হওয়ার ফলে পায়রাবন্দর এখন গুরুত্বপূর্ণ  বন্দরে পরিণত হয়েছে। এই বন্দরের মাধ্যমে লাখ লাখ মানুষের কর্মসংস্থান হবে। গভীরতা বাড়ানোর কারণে জেটিতে সরাসরি মাদার ভ্যাসেল ভিড়তে পারবে। ফলে লাগবে না লাইটার জাহাজের সাহায্য। এতে দেশের অন্য সব বন্দরের তুলনায় এখানে পণ্য পরিবহনে খরচ কমে আসবে।

শেয়ার করুন