আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) কাছ থেকে ঋণ পাওয়ার শর্ত হিসেবে এখনই রিজার্ভ গণনা আন্তর্জাতিক পদ্ধতিতে করা হচ্ছে না। জুনের পর এ পদ্ধতি অনুসরণ করা হবে। অন্যান্য শর্তগুলো পরিপালনে নানা পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে। গতকাল বাংলাদেশ ব্যাংকের সাথে সফররত আইএমএফের প্রতিনিধি দলের বৈঠকে এমনটা বলা হয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে। বৈঠক বাংলাদেশ ব্যাংক গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদার ও বাংলাদেশ ব্যাংকের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
বৈঠক শেষে বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র ও নির্বাহী পরিচালক মো: মেজবাউল হক বলেন, ‘আমাদের নিজস্ব প্রয়োজনে কিছু রিফর্ম (সংস্কার) নিয়ে কাজ করছি। বৈদেশিক মুদ্রার বিনিময় হার একাধিক রেট একটিতে নিয়ে আসা, সুদহার বাজারমুখী করা ও রিজার্ভ হিসাব আইএমএফের বিপিএম৬ পদ্ধতিতে করার বিষয়ে আমরা সিদ্ধান্ত জানিয়ে দিয়েছি। রিজার্ভ হিসাবে আমাদের গ্রস হিসাবটিও থাকবে।’ তিনি বলেন, ‘আইএমএফের ‘স্টাফ ভিজিট একটি নিয়মিত কাজ। সদস্য সব রাষ্ট্রের সাথে চুক্তির আলোকে সংস্থাটি সংস্কার নিয়ে বৈঠকের মাধ্যমে নিয়মিত তদারকি করে। বাংলাদেশ ব্যাংকের সাথে অনুষ্ঠিত বৈঠকে অর্থনৈতিক সূচকগুলোর হালনাগাদ তথ্য নিয়ে আলোচনা করেন এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের পক্ষ থেকে অগ্রগতি অর্জন সম্ভব হবে বলে জানানো হয়েছে।
সূত্র জানায়, আইএমএফের সংস্কার প্রস্তাবের মধ্যে সুদের হারের সীমা তুলে দেয়া, ডলারের একক রেট নির্ধারণ, মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে মুদ্রানীতির ভূমিকা, অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি, জ্বালানিতে ভর্তুকি কমানো, ঋণের যথাযথ ব্যবহার, খেলাপি হ্রাস, ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান পরিদর্শে কার্যকরী পরিবর্তন এবং এসব প্রতিষ্ঠানের পর্ষদের ক্ষমতার অপব্যবহার এবং ব্যাংক কোম্পানি আইন সংস্কার প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী নির্ধারিত সময়ে বাস্তবায়নে অঙ্গীকার ব্যক্ত করেছেন কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নর রউফ তালুকদার। আর আন্তর্জাতিক গণনা পদ্ধতিতে রিজার্ভ গণনার (এনআইআর) প্রক্রিয়াধীন রয়েছে এবং এটি বাস্তবায়নে অতিরিক্ত সময় লাগতে পারে বলে জানানো হয়েছে। এ ছাড়া এক বৈঠকে আইএমএফের ৪৭০ কোটি ডলার ঋণের ১ম কিস্তির ঋণের অর্থের ব্যবহার, জিডিপি, অর্থনীতির ব্যবস্থাপনা অগ্রগতি আইএমএফের সামনে তুলে ধরা হয়েছে।
দেশের সামষ্টিক অর্থনীতির বিভিন্ন সূচকের হালনাগাদ অবস্থা জানার সাথে আর্থিক খাতের নীতি ও কাঠামো সংস্কারের মধ্যে চলা বাংলাদেশের অর্থনীতিতে কি চ্যালেঞ্জ রয়েছে; তা জানার পাশাপাশি সমাধানের পরিকল্পনা জেনে নিচ্ছে আইএমএফ।
বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র আরো বলেন, ‘যেসব সিদ্ধান্তের কথা আমরা জানিয়েছি তার বিস্তারিত বর্ণনা ও বাস্তবায়ন কিভাবে হবে- তা জুলাই মাসের আগামী মুদ্রানীতিতে ঘোষণা থাকবে।’ আইএমএফের বিপিএম৬ পদ্ধতিতে রিজার্ভ হিসাব করলে বাংলাদেশ ব্যাংক কোনো ঝুঁকি দেখছে না জানিয়ে মেজবাউল হক বলেন, ‘এখনো আমরা রিজার্ভ নিয়ে কোনো ঝুঁকিতে নেই। সামনে বিশ্ব্যাংক, জাইকাসহ কয়েকটি সংস্থার ঋণ নিয়ে আলোচনা পাইপলাইনে রয়েছে। আকু পেমেন্ট ছাড়া আগামী জুনের মধ্যে আমাদের বড় কোনো দায় নেই। তাই এখনো কোনো সমস্যা দেখছি না।’ চাপে থাকা রিজার্ভ স্বস্তিদায়কে ফেরাতে আমদানিতে যে কড়াকড়ি করা হয়েছে- তা আগামীতেও অব্যাহত রাখা হবে কি-না এমন প্রশ্নের উত্তরে মেজবাউল হক বলেন, আমরা আমদানিতে মার্জিন বাড়িয়েছি অর্থনৈতিক পরিস্থিতি বিবেচনায় নিয়ে। কোনো পণ্য আমদানিতে নিরুৎসাহিত করতে মার্জিন-বাড়ানো হয়। আবার কমানো হয়। সবই অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনার অংশ। যখন যেটা প্রয়োজন হয় বাংলাদেশ ব্যাংক নিচ্ছে।’ গতকাল থেকে শুরু হওয়া আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) প্রতিনিধি দলের সফরটি চলবে আগামী ৭ মে পর্যন্ত।