২২ নভেম্বর ২০২৪, শুক্রবার, ০৩:৪৮:১৫ পূর্বাহ্ন
বাংলাদেশের অর্থনীতি নিয়ে জাপানে রোডশো আজ
  • আপডেট করা হয়েছে : ২৭-০৪-২০২৩
বাংলাদেশের অর্থনীতি নিয়ে জাপানে রোডশো আজ

বাংলাদেশের অর্থনীতি নিয়ে জাপানে রোডশো আজ। দুদেশের সম্পর্কের ৫০ বছর পূর্তি এবং অর্থনৈতিক সম্পর্ক আরও জোরদার করতেই এ আয়োজন। টোকিওর হোটেল ওয়েস্টিনে স্থানীয় সময় সকাল সাড়ে ১০টায় মূল অনুষ্ঠান শুরু হবে।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এতে প্রধান অতিথি থাকবেন। অনুষ্ঠানে বাংলাদেশের অর্থনীতির সক্ষমতা, বিনিয়োগ, বাণিজ্য, বাংলাদেশি পণ্য ও সেবা, শেয়ারবাজার এবং বন্ড মার্কেটকে তুলে ধরা হবে।

শেয়ারবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) এবং বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিডা) যৌথভাবে অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছে। সহ-আয়োজক, জাপান এক্সটার্নাল ট্রেড অরগানাইজেশন।

আয়োজকরা জানান, অর্থনীতি ও প্রযুক্তির বিবেচনায় এশিয়ার সবচেয়ে প্রভাবশালী দেশ জাপান। তাই এখানে বাংলাদেশকে তুলে ধরে বিদেশি ও অনিবাসী বাংলাদেশিদের বিনিয়োগ আকর্ষণ এই আয়োজনের মূল লক্ষ্য। বিশেষ করে প্রবাসীরা যাতে বাংলাদেশে বিনিয়োগ করেন, সে বিষয়টি গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। আর পুরো প্রোগ্রামের নাম দেওয়া হয়েছে ‘রাইজ অব বেঙ্গল টাইগার।’

এই আয়োজনের মাধ্যমে বিনিয়োগকারীদের মূলত কয়েকটি বার্তা দেওয়া হচ্ছে। এরমধ্যে আছে-বাংলাদেশ উদীয়মান ও সম্ভাবনাময় অর্থনীতির দেশ। গত দশ বছরে অর্থনৈতিক ও সামাজিক খাতে অগ্রগতি, অভ্যন্তরীণ বাজার বড়, অবকাঠামোগত উন্নয়ন হচ্ছে। এখানে শ্রমের মূল্য কম, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ভালো এবং বিনিয়োগ করলে মুনাফা সহজে দেশে নেওয়ার সুযোগ রয়েছে। এর আগে দেশের বাইরে এ ধরনের ৪টি প্রোগ্রামের আয়োজন করে বিএসইসি। এরমধ্যে রয়েছে-সংযুক্ত আরব আমিরাত, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, সুইজারল্যান্ড এবং যুক্তরাজ্য।

জানতে চাইলে বিএসইসির চেয়ারম্যান প্রফেসর শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলাম যুগান্তরকে বলেন, ‘গত ১০ বছরে বাংলাদেশের অর্থনীতিতে ঈর্ষণীয় অগ্রগতি হয়েছে। ইতোমধ্যে সব সূচকে আমরা এগিয়েছি। সামগ্রিকভাবে মূল্যায়ন করলে আগামীতে বাংলাদেশের অর্থনীতির সম্ভাবনা বিশাল। কিন্তু আমাদের অর্থনীতি যে অর্জন ও সম্ভাবনা আছে, উন্নত দেশগুলোর বিনিয়োগকারীদের কাছে তা তুলে ধরা হয়নি। যে কারণে আমাদের দেশে সেভাবে বিদেশি বিনিয়োগ আসেনি। এ কারণে বিদেশি বিনিয়োগ আর্কষণে আমরা এ ধরনের রোডশোর উদ্যোগ নিয়েছি। তিনি বলেন, এর আগেও আমরা বিভিন্ন দেশে রোডশো করেছি। সেখানে ব্যাপক সাড়া মিলেছে। আগামীতে দক্ষিণ কোরিয়া ও কানাডায় রোডশোর পরিকল্পনা রয়েছে। পর্যায়ক্রমে আরও অনেক দেশে এ ধরনের আয়োজন থাকবে। মূলত উদ্দেশ্য দেশের ব্র্যান্ডিং এবং বিনিয়োগ আকর্ষণ।

আয়োজকরা জানান, এ অনুষ্ঠানে বাংলাদেশের অর্থনীতির বিভিন্ন দিক তুলে ধরে জাপানি উদ্যোক্তা ও প্রবাসীদের বিনিয়োগ বাড়ানোই তাদের লক্ষ। এ কারণে মূল উপস্থাপনায় বাংলাদেশ ও জাপানের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের বিষয়টি উলে­খ থাকবে। মূল উপস্থাপনায় থাকছে-বিশ্বব্যাংকের পূর্বাভাস অনুসারে ২০৫০ সালে বিশ্বের ২৩তম অর্থনীতির দেশ হবে বাংলাদেশ। সংস্থাটির তথ্য অনুসারে দক্ষিণ এশিয়ায় দ্রুত বর্ধনশীল অর্থনীতির দেশও এটি। একই পূর্বাভাস দিয়েছে আরেক আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠান হংকং সাংহাই ব্যাংকিং করপোরেশন (এইচএসবিসি)।

এছাড়াও আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলও (আইএমএফ) বাংলাদেশের অর্থনীতির ইতিবাচক পূর্বাভাস দিচ্ছে। বিশ্বের বড় বড় গণমাধ্যমও এসব সংবাদ তুলে ধরছে। বাংলাদেশের অর্থনীতির এসব ইতিবাচক দিক তুলে ধরা হবে। উপস্থাপনায় আরও বলা হবে, ১৯৭২ সালের ১০ ফেব্র“য়ারি জাপানের সঙ্গে বাংলাদেশের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক শুরু হয়। আর ২০২২ সালে উদ্যাপন করা হয় দেশটির সঙ্গে ক‚টনৈতিক সম্পর্কের ৫০ বছর পূর্তি। বাংলাদেশের সঙ্গে জাপানের সম্পর্ক ঐতিহাসিক।

বর্তমানে ৩২৪টি জাপানি কোম্পানি বাংলাদেশে কাজ করছে। সর্বশেষ ২০২০-২১ অর্থবছরে দেশটি থেকে বাংলাদেশে ৪১ কোটি ১৫ লাখ ডলারের সরাসরি বিদেশি বিনিয়োগ (এফডিআই) এসেছে। আলোচ্য সময়ে জাপানে বাংলাদেশি পণ্যের রপ্তানির পরিমাণ ১১৮ কোটি ৩৬ লাখ ডলার। একই সময়ে দেশটি থেকে রেমিট্যান্স এসেছে ৭ কোটি ৯৫ লাখ ডলার। অন্যদিকে ৪ বছরে জাপান থেকে বাংলাদেশে ৬ বিলিয়ন ডলারের উন্নয়ন সহায়তা এসেছে। এই অর্থ দুটি পদ্মা সেতুর ব্যয়ের সমান। এর মধ্যে ২০২০ সালে জাপানের সঙ্গে ৩ দশমিক ২ বিলিয়ন ডলারের চুক্তি হয়। এর আওতায় বর্তমানে ৫টি প্রকল্প চলমান। বর্তমানে জাপানের সহায়তা বাংলাদেশের মেট্রোরেলের কাজ চলছে। এছাড়াও দেশটির সহায়তায় ১৯৯১ সালে মেঘনা সেতু এবং ১৯৯৮ সালে যমুনা নদীর উপর বঙ্গবন্ধু সেতু নিমার্ণ হয়।

বাংলাদেশের অবকাঠামো উন্নয়নে ইতোমধ্যে ৪৫ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করেছে সরকার। করোনার সময়ে বাংলাদেশে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ সর্বোচ্চ অবস্থানে ছিল। অর্থনৈতিক সমস্যা মোকাবিলায় ওই সময়ে জিডিপির ৪ শতাংশ প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করেছিল সরকার। যা দক্ষিণ এশিয়ায় সর্বোচ্চ। বাংলাদেশের অর্থনৈতিক সম্ভাবনার কথা তুলে ধরে জাপানের উদ্যোক্তাদের বলা হয়, বঙ্গোপসাগরে বাংলাদেশের নীল অর্থনীতির বিশাল সম্ভাবনা রয়েছে। যা পুরো অঞ্চলের জন্য অগ্রদূতের ভ‚মিকা পালন করবে।

বাংলাদেশের রয়েছে বিশাল শ্রমশক্তি। যুব জনশক্তি সাড়ে ৫ কোটি। তবে শুধু সংখ্যার বিবেচনায় নয়, অনলাইনে জনবল সরবরাহের ক্ষেত্রেও দ্বিতীয় অবস্থানে এ দেশ। এছাড়াও বিশ্বের সবচেয়ে বড় সৌরবিদ্যুৎ প্রকল্প হাতে নিয়েছে বাংলাদেশ। অর্থনৈতিক উদ্যোক্তাদের সব ধরনের সহায়তা দেওয়া হবে।

উদ্যোক্তাদের আরও বলা হবে, বাংলাদেশ বিশ্বে টেকসই উন্নয়নের অনুকরণীয় মডেল। গত এক দশকে জিডিপি প্রবৃদ্ধি ৭ শতাংশের বেশি।

মাথাপিছু আয় ২ হাজার ৮২৪ ডলার। দেশের উন্নয়নে উলে­খযোগ্য অবদান রাখছেন প্রবাসীরা। জিডিপিতে শিল্পের অবদান ৩১ শতাংশ, যার বড় অংশই আসছে ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প (এসএমই) থেকে। অন্যদিকে পিছিয়ে নেই কৃষিতেও। বর্তমানে ধান উৎপাদনে বিশ্বে তৃতীয় বাংলাদেশ। এছাড়াও সবজি উৎপাদনে তৃতীয় এবং চতুর্থ অবস্থানে রয়েছে মাছ উৎপাদনে। অন্যদিকে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও অগ্রগতি নিয়ে মার্কিন গণমাধ্যম সিএনএন এবং ব্লুমবার্গে প্রচারিত প্রতিবেদন তুলে ধরা হবে।

বাংলাদেশে বিনিয়োগের জন্য সম্ভাবনাময় বেশকিছু খাতকে তুলে ধরা হয়। এরমধ্যে রয়েছে-চামড়া ও চামড়াজাত শিল্প, হালকা প্রকৌশল খাত, ইলেকট্রনিক সামগ্রী, প্লাস্টিক, অটোমোবাইল, মোটরসাইকেল অ্যান্ড পার্টস, জাহাজ নির্মাণ শিল্প, নির্মাণসামগ্রী, অবকাঠামো খাত, স্বাস্থ্যসেবা, তথ্যপ্রযুক্তি, তৈরি পোশাক, ওষুধ শিল্প, মেডিকেল ইক্যুইপমেন্ট, কৃষিভিত্তিক শিল্প এবং পাট ও পাটজাত পণ্য। এ সময়ে বাংলাদেশের একশ বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল এবং বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের ওয়ান স্টপ সার্ভিসসহ বিভিন্ন সংস্কার কার্যক্রম তুলে ধরা হবে।

যেসব সংস্থার প্রতিনিধিরা অংশ নেবেন এরমধ্যে রয়েছে-ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই), চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জ (সিএসই), জাপান কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি অ্যাসোসিয়েশন ইন ঢাকা, চট্টগ্রাম চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজসহ আরও কিছু প্রতিষ্ঠান।

অন্যদিকে অর্থনীতির বিবেচনায় বিশ্বের তৃতীয় সর্বোচ্চ দেশ জাপান। সম্পূর্ণ একটি শিল্পোন্নত অর্থনীতির দেশ এটি। মোটর গাড়ি, ইলেকট্রনিক্সসামগ্রী, মেশিন, ইস্পাত, জাহাজের রাসায়নিক এবং প্রক্রিয়াজাত খাবারের জন্য বিখ্যাত দেশ। এশিয়ার এই দেশটির বর্তমান জনসংখ্যা ১২ কোটি ৪৩ লাখ। এরমধ্যে শ্রমশক্তি ৬ কোটি ৭০ লাখ। তবে শ্রমিকরা দক্ষ। অন্যদিকে মোট শ্রমশক্তির ৪০ শতাংশই নারী। প্রযুক্তি ও পুঁজিতে এগিয়ে থাকা দেশটির মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) ৪ দশমিক ৩ ট্রিলিয়ন ডলার। যা বাংলাদেশের তুলনায় ১১ গুণ বেশি।

এরমধ্যে সেবা খাতের অবদান ৭২ শতাংশ, শিল্পের ২৫ শতাংশ এবং কৃষির অবদান মাত্র ৩ শতাংশ। জিডিপি প্রবৃদ্ধি ১ দশমিক ৭ শতাংশ। প্রতিটি নাগরিকের মাথাপিছু আয় ৩৪ হাজার ৩৫৭ ডলার। ফলে সামগ্রিক বিষয় বিবেচনায় নিয়ে দেশটির উদ্যোক্তারা এখানে বিনিয়োগে এগিয়ে এলে তা বাংলাদেশের অর্থনীতির জন্য লাভজনক হবে।

শেয়ার করুন