২১ নভেম্বর ২০২৪, বৃহস্পতিবার, ০৮:৪২:৫৭ অপরাহ্ন
বাংলাদেশের প্রশংসায় আইএমএফ
  • আপডেট করা হয়েছে : ০১-০৫-২০২৩
বাংলাদেশের প্রশংসায় আইএমএফ

আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ)-এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক ক্রিস্টেলিনা জর্জিয়েভা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিচক্ষণতাপূর্ণ নেতৃত্বের ভূয়সী প্রশংসা করে বলেন, পৃথিবীর মধ্যে বাংলাদেশ হচ্ছে একটি মডেল। করোনার পরও বাংলাদেশের অর্থনীতি স্থিতাবস্থায় রয়েছে। এ ছাড়া আরও বহু ক্ষেত্রে বাংলাদেশ অবিশ্বাস্য রকমের উন্নতি করেছে। আইএমএফ প্রধান বলেন, সব প্রতিবন্ধকতা মোকাবিলা করে সমৃদ্ধির পথে এগিয়ে যেতে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মতো নেতৃত্ব প্রয়োজন। তিনি বলেন, অবকাঠামোগত ব্যাপক উন্নয়ন ও দক্ষ যোগাযোগ এবং আইনশৃঙ্খলা বজায় রাখার মাধ্যমে বাংলাদেশ উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি অর্জন করেছে। শনিবার স্থানীয় সময় বিকালে ওয়াশিংটন ডিসি সংলগ্ন ভার্জিনিয়ার রিজ কার্লটন হোটেলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন আইএমএফের ব্যবস্থাপনা পরিচালকসহ পদস্থ কর্মকর্তারা। অত্যন্ত হৃদ্যতাপূর্ণ পরিবেশে এ সাক্ষাতের আলোকে সন্ধ্যায় প্রেস ব্রিফিংকালে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে এ মোমেন আরও জানান, গোটা বিশ্ব যখন অস্থিরতায় নিপতিত, তার মধ্যেও বাংলাদেশের বহু সেক্টরের উন্নয়ন-অগ্রগতি অব্যাহত থাকার জন্য শেখ হাসিনার প্রশংসা করেছে আইএমএফ মিশন। বৈঠকে ছিলেন প্রধানমন্ত্রীর সফরসঙ্গী বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আবদুর রউফ তালুকদার, অর্থ সচিব ফাতিমা ইয়াসমিন এবং ইআরডি সচিব শরিফা খান।

গভর্নর রউফ তালুকদার ব্রিফিংকালে বলেন, গত ১৪ বছর বাংলাদেশে সবচেয়ে বড় অ্যাচিভমেন্ট হচ্ছে ম্যাক্রো ইকোনমিক স্ট্যাবিলিটি। এ জন্য অবশ্য আইএমএফ সবসময় বাংলাদেশের পাশে ছিল, তারা আমাদের পরামর্শ দিয়েছে। এ জন্য প্রধানমন্ত্রী তাদের ধন্যবাদ জানিয়েছেন। তিনি বলেন, বর্তমানে আমরা ৪ দশমিক ৭ বিলিয়ন ডলারের একটি প্রোগ্রামে আছি। গত নভেম্বরে মাত্র দুই সপ্তাহের নেগোসিয়েশনের পরই আমরা এটি পেয়েছি। অথচ অনেক দেশ অনেক বেশি সময় ধরে দেনদরবার চালিয়েও তা পায় না। এ জন্যও আইএমএফকে বিশেষভাবে ধন্যবাদ জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। গভর্নর উল্লেখ করেন, আইএমএফের এমডি অঙ্গীকার করেছেন, তাদের এমন সহযোগিতা ভবিষ্যতেও অব্যাহত থাকবে। তিনি জানিয়েছেন, দিন-রাত ২৪ ঘণ্টা বাংলাদেশের জন্য আইএমএফের দরজা খোলা রয়েছে।

বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, বাংলাদেশ কিছুটা স্বস্তির জন্য আইএমএফের কাছ থেকে ঋণ নিয়েছে। পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আবদুল মোমেন সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য উদ্ধৃত করে বলেন, ‘আমরা কিছুটা স্বস্তির জন্য আইএমএফের কাছ থেকে ঋণ নিয়েছি।’ অর্থ সচিব ফাতিমা ইয়াসমিন বলেন, বাংলাদেশের উন্নয়ন-অগ্রগতিতে আইএমএফ পাশে থাকায় অন্যান্য ডেভেলপমেন্ট পার্টনারও স্বস্তিতে আছে। এমডি আরেকটি বিষয় বিশেষভাবে উল্লেখ করেছেন, জলবায়ু পরিবর্তনের ভয়ংকর আশঙ্কা থেকে জনগোষ্ঠীকে রক্ষার্থে প্রধানমন্ত্রীর উদ্ভাবনী চিন্তাভাবনা সুফল আনছে। স্কুলগুলোকে প্রাকৃতিক দুর্যোগের সময় নিরাপদ আশ্রয়স্থল হিসেবে ব্যবহারের ব্যাপারটিকে শুধু মানুষের জন্যই নয়, গৃহপালিত পশুপাখির সুরক্ষার্থেও কাজে আসছে। এ ছাড়া, ঝড়-জলোচ্ছ্বাসের পূর্বাভাসের সিস্টেমও খুবই কার্যকর হচ্ছে। প্রাকৃতিক দুর্যোগের সঙ্গে সংগতি রেখে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে বেশ কিছু পদক্ষেপেরও প্রশংসা করেছেন আইএমএফের এই শীর্ষ কর্মকর্তা। বলেছেন, মুরগির স্থলে হাঁস পালনের বিষয়টি তার অন্যতম। প্রাকৃতিক দুর্যোগে সবকিছু সয়লাব হলেও হাঁস বেঁচে থাকে।

ইআরডি সচিব শরিফা খান বলেন, ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধজনিত পরিস্থিতির পরিপ্রেক্ষিতে আইএমএফ দ্রুত বাংলাদেশের বিভিন্ন আহ্বানে সাড়া দেওয়ায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আইএমএফকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন। এ সময় বাংলাদেশের উন্নয়ন-অগ্রগতিগুলোকে গ্লোবাল মডেল হিসেবে মনে করেন বলে আইএমএফ এমডি উল্লেখ করেন। জলবায়ু পরিবর্তন, বন্যা-জলোচ্ছ্বাস-ঘূর্ণিঝড় পরবর্তী পরিস্থিতি মোকাবিলায় বাংলাদেশের কাছে অনেক দেশ শিখতে পারছে বলেও এমডি জানান। উন্নয়নের ক্ষেত্রেও বাংলাদেশ অনুকরণীয় হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে বিশ্বের অনেক অংশে- এ কথাও বলেছেন এমডি। বাংলাদেশে নারীর ক্ষমতায়নের ক্ষেত্রে কী কী গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে তা সবিস্তারে উল্লেখ করেন শেখ হাসিনা।

এ সময় শেখ হাসিনা জানান, আজকের যে উন্নতি সেটি হঠাৎ করে আসেনি। তাঁকে যখন গ্রেফতার করে কারাগারে রাখা হয়েছিল, সে সময়েই তিনি পরিকল্পনা করেছিলেন, ভবিষ্যতে যদি তিনি ক্ষমতায় আসেন তাহলে কীভাবে বাংলাদেশকে গরিবের অপবাদ ঘুচিয়ে উন্নয়নের তিলক পরানো যাবে। এখন সে অনুযায়ী তিনি কাজ করছেন বলে বাংলাদেশের মানুষ তার সুফল পাচ্ছেন। 

বিশ্বব্যাংকের আমন্ত্রণে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২৮ এপ্রিল ওয়াশিংটন ডিসিতে এসেছেন। আজ (সোমবার) বিশ্বব্যাংকের সদর দফতরে অনুষ্ঠিত হবে বিশ্বব্যাংক-বাংলাদেশের উন্নয়ন অংশীদারিত্বের ৫০ বছর পূর্তি অনুষ্ঠান। সেখানে উপস্থিত থাকবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এ ছাড়া দ্বিপক্ষীয় এবং বিনিয়োগ সম্পর্কিত কয়েকটি কর্মসূচিতেও অংশ নেবেন প্রধানমন্ত্রী। ২ মে প্রবাসীদের এক সমাবেশেও ভাষণ দেওয়ার কথা শেখ হাসিনার। ৪ মে তাঁর লন্ডনের উদ্দেশে ওয়াশিংটন ডিসি ত্যাগের কথা।

গতকাল (রবিবার) স্থানীয় সময় সারা দিন তিনি কাটিয়েছেন পুত্র সজীব ওয়াজেদ জয়, পুত্রবধূ এবং নাতনিদের সান্নিধ্যে। এদিকে শনিবার তিনি সমবেত নেতা-কর্মীগণকে সাক্ষাৎ দিয়েছেন এবং সামনের নির্বাচনে দলীয় প্রার্থীদের বিজয়ী করতে আত্মীয়স্বজন, প্রিয় পরিচিতজনের সঙ্গে এখন থেকেই যোগাযোগের নির্দেশ দিয়েছেন দলীয় প্রধান শেখ হাসিনা।

শেয়ার করুন