০২ মে ২০২৪, বৃহস্পতিবার, ০৭:০৫:২৬ পূর্বাহ্ন
ভৌগোলিক নির্দেশক পণ্য এখন ল্যাংড়া আশ্বিনা
  • আপডেট করা হয়েছে : ০৯-০৭-২০২৩
ভৌগোলিক নির্দেশক পণ্য এখন ল্যাংড়া আশ্বিনা

দুইশ বছর আগের ল্যাংড়া ও আশ্বিনা আম স্বীকৃতি পেল চাঁপাইনবাবগঞ্জের ভৌগোলিক নির্দেশক পণ্য হিসেবে। জিআই স্বীকৃতি পেতে ২০১৭ সালে আবেদন করে চাঁপাইনবাবগঞ্জ আঞ্চলিক উদ্যানতত্ত্ব গবেষণা কেন্দ্র।


বিভিন্ন ধাপ পেরিয়ে বাংলাদেশ শিল্প মন্ত্রণালয়ের পেটেন্ট, ডিজাইন ও ট্রেডমার্কস অধিদপ্তর গত ২৫ জুন তাদের ওয়েবসাইটে এ সংক্রান্ত জার্নাল প্রকাশ করেছে।


ক্ষিরসাপাত ও ফজলি আমসহ এ নিয়ে চাঁপাইনবাবগঞ্জের চারটি জাতের আম এই স্বীকৃতি অর্জন করল। ২০১৯ সালে এককভাবে ক্ষিরসাপাত ও ২০২২ সালে রাজশাহী জেলার সঙ্গে যৌথভাবে জিআই পণ্যের স্বীকৃতি পায় ফজলি আম।


জিআই স্বীকৃতি প্রাপ্তিতে আনন্দিত এবং উচ্ছ্বসিত জেলার আম চাষি ও ব্যবসায়ীরা। আমে জিআই ট্যাগ ব্যবহারে দ্রুত পদক্ষেপ গ্রহণের দাবি তাদের। এটি সম্পন্ন হলে দেশে বাজারের পাশাপাশি বিদেশে বাজারে আম রপ্তানি করে বিপুল পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের পথ উন্মোচিত হওয়ার সম্ভাবনা দেখছেন তারা।


পেটেন্ট, ডিজাইন ও ট্রেডমার্কস অধিদপ্তর প্রকাশিত জার্নালে জানা গেছে, চাঁপাইনবাবগঞ্জের কানসাটে মহারাজা সুতাংশু কুমার আচার্য ব্রিটিশ আমলে গড়ে তোলেন আম বাগান। এছাড়া মনাকষা ইউনিয়নে রয়েছে দেড়শ বছরের পুরাতন আরও একটি বাগান। এটি চৌধুরীর আমবাগান নামে পরিচিত। যার স্বত্বাধিকারী ছিলেন তৎকালীন মনাকষার জমিদার শাহ মোহাম্মদ চৌধুরী।


প্রাচীন আলকাপ গান আর ছড়ায় মিলেছে এর প্রমাণ। ১৯৫৫ সালে আলকাপ সরকার তার একটি বন্দনা ছড়া পরিবেশন করেন। এই ছাড়াটিতে তিনি আশ্বিনা আমের বর্ণনা করেন। শুধু তাই নয় বাংলাদেশ জেলা গেজেটিয়ারেও উল্লেখ করা হয়েছে তৎকালীন নওয়াবগঞ্জের অধিবাসীদের প্রধান অর্থকরী ফসল হিসেবে আমের কথা। লেখক মাহবুব সিদ্দিকী তার আম গ্রন্থে এবং সাব্বির আহমেদ তার প্রকাশিত জাতীয় বৃক্ষ আম গাছ গ্রন্থে এসব তথ্য তুলে ধরেছেন।


চাঁপাইনবাবগঞ্জ আঞ্চলিক উদ্যানতত্ত্ব গবেষণা কেন্দ্রের মুখ্য বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. মোখলেসুর রহমান জানান, দুইশ বছর আগে থেকে চাঁপাইনবাবগঞ্জে আমের আবাদ হচ্ছে। যখন দেশের কোথাও তেমন আম বাগান ছিল না তখন চাঁপাইনবাবগঞ্জে অনেক বড় বড় আম বাগান তৈরি হয়েছে। চাঁপাইনবাবগঞ্জের ক্ষিরসাপাত ফজলিসহ ল্যাংড়া ও আশ্বিনা মোট চারটি জাতের আম এ পর্যন্ত জিআই পণ্যের তালিকাভুক্ত হলো। এই এলাকার আম অত্যন্ত সুমিষ্ট, স্বাদ ও গন্ধে অন্যান্য জেলার চাইতে উপরে অবস্থান করছে। একজন আম গবেষক হিসেবে আমি বলতে পারি চাঁপাইনবাবগঞ্জ আমের রাজধানী।


চাঁপাইনবাবগঞ্জ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক ড. পলাশ সরকার বলেন, আমরা ঢাকাসহ দেশের অন্যান্য স্থানে আম কিনতে গেলে যেকোনো আম বিক্রেতা, দোকান, আম বাজার, চেইন শপ বা সুপার শপের বিক্রেতা প্রথমেই আমাদের জানায় এটি চাঁপাইনবাবগঞ্জের আম। অর্থাৎ চাঁপাইনবাবগঞ্জের আম হচ্ছে একটি ব্র্যান্ড। আসলে আমের উৎপত্তি বা অরিজিন যদি বলি তাহলে সেটি চাঁপাইনবাবগঞ্জ এবং এখানে বিভিন্ন প্রজাতির আম রয়েছে। এখানকার আবহাওয়া মাটি এবং পানির গভীরতা ওপর ভিত্তি করে এখানে আমের চাষ গড়ে উঠেছে। এই এলাকার মাটি আম চাষের জন্য অত্যন্ত উপযোগী। এখানে প্রাকৃতিকভাবে হাইব্রিডেশনের ফলে নতুন নতুন জাতের আমের উৎপত্তি ঘটেছে।

তিনি বলেন, পেটেন্ট, ডিজাইন ও ট্রেডমার্কস আইন অনুযায়ী উৎপত্তিস্থলের পণ্যই জিআই স্বীকৃতি লাভ করে। এ কারণে এই জেলার চারটি প্রজাতির আম এই স্বীকৃতি অর্জন করেছে।

তিনি জানান, গোপালভোগ, গৌড়মতি, ইলামতি আমসহ বেশ কয়েকটি জাতের আম চাঁপাইনবাবগঞ্জের জিআই পণ্য হিসেবে স্বীকৃতি লাভ করবে।

এমন প্রাপ্তিতে খুশি স্থানীয় জেলা প্রশাসন। চাঁপাইনবাবগঞ্জের জেলা প্রশাসক একেএম গালিভ খান জানান, আমাদের আবেদন করা ল্যাংড়া ও আশ্বিনা জিআই পণ্য হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে। এর আগে ক্ষিরসাপাত ও ফজলি আম স্বীকৃতি পেয়েছে। এ নিয়ে চাঁপাইনবাবগঞ্জের চারটি জাতের আম ভৌগোলিক পণ্য হিসেবে স্বীকৃতি পেল; যা অত্যন্ত আনন্দের এবং গৌরবের। শুধু দেশে নয় সারা বিশ্বে চাঁপাইনবাবগঞ্জ আমের জন্য সুপরিচিত। আর এ কারণেই চাঁপাইনবাবগঞ্জ আমের রাজধানী।


শেয়ার করুন