রাজশাহী বড় বনগ্রাম মডেল সরকারি স্কুল নির্মাণের টেন্ডারে ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। রাজশাহী শিক্ষা প্রকৌশল দপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী শেখ নাসিম রেজার বিরুদ্ধে এ নিয়ে উচ্চ আদালতে মামলা দায়ের করা হয়েছে। আদালত মামলাটি গ্রহণ করে ২৩ কোটি টাকার ওই স্কুল ভবন নির্মাণকাজের টেন্ডার কার্যক্রম স্থগিত করে নাসিম রেজাকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দিয়েছেন।
অভিযোগ উঠেছে, মোটা অংকের অর্থের বিনিময়ে একটি অযোগ্য প্রতিষ্ঠানকে ওই কাজটি দেওয়ার সার্বিক কার্যক্রম গ্রহণ করেছেন শেখ নাসিম রেজা। অথচ তিনিই ওই টেন্ডার দাখিলকারী প্রথম নিম্ম দরদাতার টেন্ডার ডকুমেন্ট সঠিক নয় বলে মূল্যায়ন করে পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের সেন্ট্রাল প্রকিউরম্যান্ট (সিপিটিইউ) বিভাগের মহাপরিচালকের কাছে প্রতিবেদন দিয়েছিলেন। কিন্তু অর্থের বিনিময়ে পরবর্তিতে আবার টিবিএল-এমই-আর অ্যান্ড জেভি নামের যৌথ ওই ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানকে কার্যাদেশ সম্পাদনের চিঠি দিয়েছেন।
এ নিয়ে গত ৮ জুলাই উচ্চ আদালতে মামলা করা হয়েছে। আদালত মামলাটি গ্রহণ করে ওই স্কুল ভবন নির্মাণের টেন্ডার প্রক্রিয়ার সকল কার্যক্রম স্থগিতের পাশাপাশি নির্বাহী প্রকৌশলী শেখ নাসিম রেজাকে কারণ দর্শাতে নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, রাজশাহী নগরীর বড় বনগ্রাম এলাকায় সরকারি মডেল স্কুল নির্মাণের জন্য ২৩ কোটি ৩৩ লাখ ২০ হাজার ৩১১ টাকা ব্যয় ধরে গত বছরের মে মাসে রাজশাহী শিক্ষা প্রকৌশল দপ্তর থেকে প্রথম টেন্ডার আহবান করা হয়। তবে পছন্দের ঠিকাদারকে কাজ দিতে না পেরে ওই বিজ্ঞপ্তিটি বাতিল করে পরবর্তিতে আবারও টেন্ডার বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়। এর পর সেই বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী পাঁচজন ঠিকাদার সিডিউল সংগ্রহ করে তাঁদের মধ্যে চারজন ঠিকাদার টেন্ডারে অংশ নেন।
গত বছরের ২৭ ডিসেম্বর টেন্ডার খোলা হয়। এর পর মূল্যায়ন করে ওই টেন্ডার কমিটির আহ্বায়ক ও রাজশাহী শিক্ষা প্রকৌশল দপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী শেখ নাসিম রেজা সর্বনিম্ন দরদাতা প্রতিষ্ঠান টিবিএল-এমই-আর অ্যান্ড জেভি পাবলিক প্রকিউরম্যান্ট (পিপিআর) ২০০৮ এর অনুচ্ছেদ ১ ও ২ অনুযায়ী টেন্ডার ডকুমন্টেটি সঠিকভাবে দাখিল করা হয়নি বলে পরবর্তি সিদ্ধান্ত পেতে সিপিটিইউ-এর মহাপরিচালকের মতামত জানতে চেয়ে গত ১৭ জানুয়ারি চিঠি দেন। সেই চিঠি পেয়ে পিপিআর অনুযায়ী কার্যাদেশ দেওয়ার জন্য সিপিটিইউ থেকে নির্দেশনা দেওয়া হয়। কিন্তু রহস্যজনকভাবে ওই সিদ্ধান্ত না মেনে পরবর্তিতে নির্বাহী প্রকৌশলী শেখ নাসিম রেজা তাঁর একক সিদ্ধান্তে টিবিএল-এমই-আর অ্যান্ড জেভিকেই কার্যাদেশ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন।
এটি জানতে পেরে দ্বিতীয় সর্বনিম্ন দরদাতা মীম ডেভেলোপার লিমিটেড নামের আরেকটি ঠিকাদারী প্রতিষ্টান ৫ লাখ ৫০ হাজার টাকা জামানত দিয়ে সিপিটিইউতে মামলা দায়ের করেন। মামলার শুনানী শেষে সিপিটিউ-এর বিচার বিভাগের সভাপতি রনজিৎ কুমার চক্রবর্তি ও সদস্য সাদেক গোলাম সারোয়ারের সমন্বয়ে গঠিত বিচার বিভাগ গত ৮ মে টিবিএল-এমই-আর অ্যান্ড জেভি নামের ওই ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানকে অযোগ্য ঘোষণা করে মীম ডেভেলোপার লিমিটেডকে কার্যাদেশ দেওয়ার রায় দেন। পাশাপাশি জামানতের টাকাও ফেরত দেওয়া হয় অভিযোগকারী ঠিকাদারী প্রতিষ্টানকে।
কিন্তু এ রায় অমান্য করে নির্বাহী প্রকৌশলী শেখ নাসিম রেজা আবারও তাঁর মনগড়া সিদ্ধান্তে টিবিএল-এমই-আর অ্যান্ড জেভিকেই কার্যাদেশ দেওয়ার চিঠি ইস্যু করেন। গত ৪ জুলাই ওই চিঠি ইস্যু করেন তিনি। যা টেন্ডার পক্রিয়ায় নজিরবিহীন অনিয়ম বলে দাবি করেছেন মীম ডেভেলোপার লিমিটেড নামের ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের সত্বাধীকারী ফজলুর রহমান তারেক।
তিনি ওই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে গত ৮ জুলাই উচ্চ আদালতে আরেকটি মামলা করেন। এর পর উচ্চ আদালত মামলাটি গ্রহণ করে ওই স্কুল ভবন নির্মাণের টেন্ডার প্রক্রিয়ার সকল কার্যক্রম স্থগিতের পাশাপাশি নির্বাহী প্রকৌশলী শেখ নাসিম রেজাকে শোকজ করেছেন।
ঠিকাদার ফজলুর রহমান তারেক অভিযোগ করে বলেন, ‘যিনি প্রথমে যে ঠিকাদারী প্রতিষ্টানের টেন্ডারের ডকুমেন্ট সঠিক নয় বলে মূল্যায়ন করলেন, সেই কর্মকর্তা আবার কিভাবে ওই ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানকেই কার্যাদেশ দেওয়ার চিঠি দিতে পারেন? এর পেছনে মোটা অংকের অর্থের লেনদন হয়েছে। বিপুল পরিমাণ টাকার বিনিময়ে সিপিটিইউ এর বিচার বিভাগের রায়কেও না মেনে আবারও সেই অযোগ্য প্রতিষ্ঠানকেই কার্যাদেশ দেয়ার চিঠি দেয়া প্রমাণিত হয় যে, ওই প্রকৌশলী বিপুল অংকের র্অথ নিয়েছেন। তিনি রাজশাহীতে আসার পরে এভাবে আরও একাধিক ঠিকাদারের নিকট থেকে মোটা অংকের টাকা নিয়ে কাজ দিয়েছেন। আবার তাঁর চাহিদামতো টাকা দিতে না পারায় আমাকে কাজ দেননি। আমি এই পকৌশলীর বিচার দাবি করছি।’
রাজশাহী শিক্ষা প্রকৌশল দপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী শেখ নাসিম রেজা বলেন, ‘আমি কারো নিকট থেকে টাকা নেয়নি। সর্বনিম্ন দরদাতাকে কাজ দিলে সরকারের ৬৫ লাখ টাকা শাশ্রয় হবে তাই টেন্ডার কমিটির সুপারিশ অনুযায়ী তাঁকেই কার্যাদেশ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। সিপিটিইউ-এর রায়ে স্পষ্ট করা হয়নি কাকে কাজ দিতে হবে, তাতেই প্রথম নিম্ন দরদাতাকেই কাজ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।’