২৪ নভেম্বর ২০২৪, রবিবার, ১০:১৪:১৬ পূর্বাহ্ন
অপ্রচলিত শ্রমবাজারে যাচ্ছেন নারী শ্রমিক
  • আপডেট করা হয়েছে : ১৫-০৭-২০২৩
অপ্রচলিত শ্রমবাজারে যাচ্ছেন নারী শ্রমিক

 সৌদিসহ মধ্যপ্রাচ্যে কম যাচ্ছেন ♦ যাচ্ছেন মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর, দক্ষিণ কোরিয়া, সাইপ্রাস, জাপান, হংকংয়ে


দেশের নারী শ্রমিকদের অপ্রচলিত শ্রমবাজারে যাওয়ার হার বাড়ছে। জনশক্তি কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর (বিএমইটি) তথ্য বলছে, চলতি বছর জুন পর্যন্ত অপ্রচলিত শ্রমবাজার অর্থাৎ যেসব দেশে বাংলাদেশের নারী শ্রমিকরা সংখ্যায় কম যেতেন, সেখানে তাদের যাওয়ার হার বেড়েছে। মধ্যপ্রাচ্যের সৌদি আরব, ইউএই, কুয়েত, ওমান ও জর্ডানে গত বছর যাওয়া শ্রমিকের অর্ধেকও যাননি চলতি বছরের অর্ধেক সময় পর্যন্ত। অন্যদিকে ইউকে, ইতালি, জাপান, সাইপ্রাস ও হংকংয়ে চলতি বছরের প্রথম ছয় মাসে গত বছরের চেয়ে নারী শ্রমিকের যাওয়ার হার বেশি। এ তালিকায় আরও আছে মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর, দক্ষিণ কোরিয়া ও জাপানের নাম। নারী শ্রমিকদের নিয়ে কাজ করে এমন সংগঠনগুলো বলছে, অপ্রচলিত বাজারগুলোতে নারীদের কাজ করার পরিবেশ যেমন ভালো, তাদের মজুরিও ভালো।


জনশক্তি কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর তথ্যে, নব্বই দশক থেকে মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোর বাইরে মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর, ইউকে, ইতালি, হংকং, মরিশাসে বাংলাদেশি নারী শ্রমিকরা কাজের জন্য যাচ্ছেন। ২০২১ সাল থেকে দক্ষিণ কোরিয়া এবং ২০২২ থেকে জাপানে নারী শ্রমিকরা যেতে শুরু করেছেন। পরিসংখ্যান বলছে, ২০২১ সালে মালয়েশিয়ায় ৩, সিঙ্গাপুরে ২৫, দক্ষিণ কোরিয়ায় ৩, ইউকেতে ৮, ইতালিতে ৭, হংকংয়ে ২৪, সাইপ্রাসে ১৪, মরিশাসে ৮ নারী শ্রমিক কাজ করতে যান। এর পরের বছর জাপানে যান ৪৩ নারী শ্রমিক। এ বছর মালয়েশিয়ায় ২৫, সিঙ্গাপুরে ৭৪, দক্ষিণ কোরিয়ায় ১৮, ইউকেতে ২৮৩, ইতালিতে ৬১, হংকংয়ে ৩৬, সাইপ্রাসে ২১ এবং মরিশাসে ৮৯৪ নারী শ্রমিক গেছেন। এসব দেশে ২০২২ সালে নারী শ্রমিক যাওয়ার হার কয়েকগুণ বেড়েছে। চলতি বছরের প্রথম ছয় মাসে এসব অপ্রচলিত শ্রমবাজারে নারী শ্রমিক যাওয়ার হার অনেক বেশি। এর মধ্যে মালয়েশিয়ায় ১৯, সিঙ্গাপুরে ৪৩, দক্ষিণ কোরিয়ায় ১৬, ইউকেতে ১২৯১, ইতালিতে ৬২, জাপানে ৫৬, হংকংয়ে ৬৯, সাইপ্রাসে ২৭ এবং মরিশাসে ৩৫৮ নারী শ্রমিক কাজ করতে গেছেন। অন্যদিকে মধ্যপ্রাচ্যের সৌদি আরবে চলতি বছরে ছয় মাসে গেছেন ৩০,১৮১ জন। গত বছর এই সংখ্যা ছিল ৭০,২৭৯ জন। ইউএইতে গত বছর গিয়েছিলেন ১,৭৬১ জন, চলতি বছর গেছেন ৮৮৩ জন। ওমানে গত বছর গিয়েছিলেন ১৬,৫৪৪ জন, চলতি বছর গেছেন ৩,৬৫২ জন। জর্ডানে গত বছর গিয়েছিলেন ১১,৮৭৯ জন, চলতি বছর গেছেন ৩,৮৫৮ জন।  খোঁজ নিয়ে জানা যায়, অপ্রচলিত শ্রমবাজারগুলোর মধ্যে দক্ষিণ কোরিয়ায় কৃষি ও মৎস্য খাতে মৌসুমি শ্রমিক হিসেবে ১০০ বাংলাদেশি (চট্টগ্রামের ১১ জেলার ক্ষুদ্র জাতি গোষ্ঠীভুক্ত) নারী শ্রমিক নেওয়ার কথা। ‘বাংলাদেশ ওভারসিজ এমপ্লয়মেন্ট অ্যান্ড সার্ভিসেস’র (বোয়েসেল) মাধ্যমে এই শ্রমিক নেওয়া হবে। সম্প্রতি কোরিয়ার গিয়াংগি প্রদেশের একটি কারখানায় কাজ করার উদ্দেশ্যে দেশ ছেড়েছেন নারী শ্রমিক চম্পা। তিনি বিমানবন্দরে সাংবাদিকদের বলেন, কোম্পানি থেকে তাকে এবং তার মেয়েকে খাবার ও থাকার জায়গা দেওয়া হবে। সংশ্লিষ্টরা জানান, সৌদি আরবগামী নারী শ্রমিকদের বহির্গমন ছাড়পত্র নেওয়ার আগে ট্রেনিং সার্টিফিকেট বাধ্যতামূলক হওয়া, অন্য দেশের তুলনায় বাংলাদেশ থেকে যাওয়া কর্মীদের অতিরিক্ত অভিবাসন খরচ আদায় এবং বিএমইটির বহির্গমন ছাড়পত্র গ্রহণের সময় কর্মকর্তাদের ‘অতিরিক্ত চাহিদা’র কারণে ওই দেশে সাম্প্রতিক সময়ে নারী শ্রমিক যাওয়ার হার কমে যাচ্ছে। এ ছাড়া ইন্দোনেশিয়া ও আফ্রিকার কয়েকটি দেশ সৌদি আরবে নারী কর্মী পাঠানো শুরু করায় বাংলাদেশ থেকে নারী কর্মীর চাহিদা কিছুটা কমেছে। ইতালি স্পনসর ভিসায় বিভিন্ন দেশ থেকে সাড়ে ৪ লাখ শ্রমিক নেবে ২০২৫ সালের মধ্যে। সমান সুযোগ দেওয়া হবে বাংলাদেশিদেরও। বিদেশি শ্রমিকদের নিতে নতুন করে কৃষি ও পর্যটন খাতের পাশাপাশি নার্স ও বৃদ্ধদের দেখাশোনার জন্য কোটা নির্ধারণ করা হয়েছে। এসব খাতে বাংলাদেশি নারীদের কাজ করার সুযোগ রয়েছে। এ ছাড়া হংকংয়ে এখন কয়েক শ বাংলাদেশি নারী শ্রমিক কাজ করছেন। প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা যায়, কেয়ার গিভিং খাতে বাংলাদেশি নারী কর্মীদের চাহিদা ব্যাপক বেড়েছে। বাংলাদেশ নারী শ্রমিক কেন্দ্রের নির্বাহী পরিচালক সুমাইয়া ইসলাম গতকাল বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, গত পাঁচ বছরের নারী শ্রমিকদের বিদেশে যাওয়ার তথ্য পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, নারী শ্রমিকদের বিদেশে যাওয়ার ক্ষেত্রে শ্রমবাজারে বৈচিত্র্য এসেছে। এটি খুবই ইতিবাচক বিষয়। আমরা সরকারের কাছেও নারী শ্রমিকদের নতুন শ্রমবাজারে পাঠানোর জন্য বলে এসেছি। সৌদি আরবে নারী শ্রমিকরা অনেকটা নিরুপায় হয়ে যাচ্ছেন। সৌদিতে যাওয়া নারী শ্রমিকদের দক্ষতা তুলনামূলক কম। হংকং, সিঙ্গাপুর বা মালয়েশিয়া যাওয়া নারী শ্রমিকরা শিক্ষিত এবং ভালো প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত। তিনি বলেন, ইউরোপের বাজার খুলছে। নারী শ্রমিকদের জন্য এটি ভালো দিক। আমরা সরকারকে নারীদের প্রশিক্ষণ দিয়ে নতুন শ্রমবাজারে পাঠানোর জন্য বলেছি।

শেয়ার করুন