২১ নভেম্বর ২০২৪, বৃহস্পতিবার, ০৭:৩২:৪৭ অপরাহ্ন
দূষণ ও খরচ কমাতে চালু হবে বৈদ্যুতিক ট্রেন
  • আপডেট করা হয়েছে : ১৯-০৭-২০২৩
দূষণ ও খরচ কমাতে চালু হবে বৈদ্যুতিক ট্রেন

বর্তমানে ডিজেলচালিত ইঞ্জিনে চলে বাংলাদেশ রেলওয়ের যাত্রী ও মালবাহী ট্রেন। এতে রেল পরিচালনায় খরচ হয় অনেক বেশি। আবার ডিজেল ইঞ্জিনের কার্বন নিঃসরণের কারণে পরিবেশ দূষণও হচ্ছে। দূষণ ও খরচ কমাতে দেশে বৈদ্যুতিক ট্রেন চালুর পরিকল্পনা বাস্তবায়নে সমীক্ষা করা হচ্ছে। সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, ডিজেলচালিত ট্রেনের তুলনায় বৈদ্যুতিক ট্রেন ২০-৩০ শতাংশ বেশি পরিবেশবান্ধব।

১৮৬২ সালের ১৫ নভেম্বর বাংলাদেশে প্রথম রেলওয়ের কার্যক্রম শুরু হয়। স্থাপিত হয় প্রথম ব্রডগেজ লাইন। রেলযুগে প্রবেশের পরবর্তী দেড়শো বছরে দেশজুড়ে রেললাইনের বিস্তৃতি এবং বহুগুণে প্রসারিত হয়েছে। কিন্তু প্রযুক্তিগত দক্ষতা এবং সেবার আধুনিকীকরণের ক্ষেত্রে উন্নতি হয়েছে যৎসামান্য। এ অবস্থায় বৈদ্যুতিক ট্রেন চালুর উদ্যোগ নিয়েছে রেলপথ মন্ত্রণালয়। প্রাথমিকভাবে নারায়ণগঞ্জ, ঢাকা ও চট্টগ্রাম রেলপথকে বৈদ্যুতিক ট্রেনের আওতায় আনবে সরকার।

এ বিষয়ে রেলমন্ত্রী নূরুল ইসলাম সুজন বলেছেন, রেল যোগাযোগের আধুনিকায়নে ইলেকট্র্রিক ট্রাকশনের ব্যবহার করা হবে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রেলকে যুগোপযোগী করার উদ্যোগ নিয়েছেন। তিনি বলেন, ইউরোপসহ পৃথিবীর সব দেশ গ্যাস ও বিদ্যুৎ ব্যবহার করে ট্রেন চালাচ্ছে। পরিবেশবান্ধব এই পদ্ধতিতে ট্রেন চালাতে বাংলাদেশও উদ্যোগ নিয়েছে। এতে ভারতের সঙ্গে সরাসরি রেল যোগাযোগও বাড়বে।

জানা গেছে, উন্নত দেশগুলোর মতো বিদ্যুৎচালিত ট্রেন চালাতে সম্ভাব্যতা যাচাই সমীক্ষা করবে রেলওয়ে। এ লক্ষ্যে গত রবিবার তুরস্কের প্রতিষ্ঠান তুমাস তার্কিশ ইঞ্জিনিয়ারিং কনসাল্টিং অ্যান্ড কন্ট্রাক্টিংয়ের সঙ্গে চুক্তি সই করা হয়েছে। পরামর্শক প্রতিষ্ঠানটি আগামী এক বছরে নারায়ণগঞ্জ-ঢাকা-চট্টগ্রাম এবং টঙ্গী-জয়দেবপুর রেলপথে ইলেকট্র্রিক ট্রাকশন নির্মাণের সমীক্ষা এবং বিস্তারিত নকশা করবে। এর আগে ২০২১ সালের নভেম্বরে সম্ভাবতা যাচাই সমীক্ষার কাজ শুরুর পরিকল্পনা থাকলেও তা পারেনি রেলওয়ে। ওই সময়ে এ কাজে ব্যয় প্রাক্কলন করা হয়েছিল আট কোটি টাকা। ডলারের দাম বাড়ায় ব্যয় ১৩ কোটি টাকা ছাড়াতে পারে বলে চুক্তি সই অনুষ্ঠানে ধারণা দেওয়া হয়। সমীক্ষায় ওভারহেড ক্যাটেনারি (ট্রেনের ওপর বিদ্যুতিক তার) এবং সাবস্টেশনের নকশাও করা হবে। এ পদ্ধতিতে ওভারহেড ক্যাটেনারি থেকে পাওয়া বিদ্যুতে চলে ট্রেনের ইঞ্জিন।

সংশ্লিষ্টরা বলেন, সাধারণভাবে ধারণা করা হয় যে ট্রেন চালাতে বিদ্যুতের চাহিদা পূরণ করা কঠিন। আসলে এটি একটি ভুল ধারণা। ট্রেন চালনায় যে পরিমাণ বিদ্যুৎ দরকার, তা খুবই সামান্য। এজন্য দেশে বিদ্যমান বিদ্যুৎ সরবরাহের কোনো ব্যাঘাত ঘটবে না। ডিজেলের তুলনায় বিদ্যুতে খরচ অনেক কম। বরং ট্রেনের গতি থাকে বেশি। পরিবেশবান্ধব এই ট্রেনে ২০০ কিলোমিটার গতিতে এক সঙ্গে ১০টি ট্রেন চললে ১০০ মেগাওয়াটের একটি নিশ্চিত নিরচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ প্রয়োজন।

বিভিন্ন গবেষণার মধ্য দিয়ে এটি নিশ্চিত হওয়া গেছে যে, বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশের জন্য বৈদ্যুতিক ট্রেন হতে পারে উন্নয়নের অন্যতম হাতিয়ার। বাংলাদেশ পাওয়ার সিস্টেমের (বিপিএস) পরিসংখ্যান অনুযায়ী, বিপিএসের উৎপাদন ক্ষমতা বাংলাদেশে বৈদ্যুতিক ট্র্যাকশন সিস্টেম প্রবর্তনের জন্য যথেষ্ট। এ ট্রেন ব্যবস্থা দেশের জনগণের যাতায়াতের সময়কে কমিয়ে আনবে। প্রতিবেশী দেশ ভারত ১৯২৫ সালে ছত্রপতি শিবাজি টার্মিনাস এবং কুরলার মধ্যে তাদের প্রথম বৈদ্যুতিক ট্রেন চালু করেছিল। দেরিতে হলেও বাংলাদেশে এখন তা চালুর দিকে হাঁটছে সরকার।

গত শতাব্দীতে চীন, রাশিয়া, জাপান, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং ভারতের মতো অনেক দেশ বৈদ্যুতিক ট্রেন চালু করেছে। বৈদ্যুতিক ট্রেনের শুরুটা হয়েছিল ১৮৩৬ সালে স্কটল্যান্ডে প্রথমবারের মতো ‘বৈদ্যুতিক রেলকার’ পরীক্ষার মধ্য দিয়ে। ব্যাপক পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষে ১৮৯৫ সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বাল্টিমোর অ্যান্ড ওহায়ো আরআর প্রথম বৈদ্যুতিক রেলওয়ে চালু করে। পর্যায়ক্রমে এ ট্রেন যাত্রীদের কাছে জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। বেশকিছু কারণে বৈদ্যুতিক ট্রেন গণপরিবহনের ভবিষ্যৎ হিসেবে বিবেচিত হয়। যার মধ্যে রয়েছে- ১. সীমিত শক্তি ব্যয়, ২. প্রাকৃতিক শক্তি সম্পদ সংরক্ষণ, ৩. স্বল্প শব্দ ও পরিবেশবান্ধব কার্যপ্রণালি, ৪. কম যান্ত্রিক অবক্ষয়, ৫. সমমানের ওজনের জন্য অধিক শক্তি, ৬. অধিক গতি এবং ৭. রক্ষণাবেক্ষণে স্বল্প ব্যয়সহ অন্যান্য সুবিধা।

রেলসূত্র জানায়, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশনা রয়েছে পর্যায়ক্রমে বৈদ্যুতিক ট্রেন চালু করতে। প্রাথমিকভাবে নারায়ণগঞ্জ-ঢাকা-চট্টগ্রামকে এবং টঙ্গী-জয়দেবপুরকে বৈদ্যুতিক ট্রেনের আওতাভুক্ত করতে চায় সরকার। নারায়ণগঞ্জ-ঢাকা-চট্টগ্রাম ৩৩৬.৮৯ কিলোমিটার এবং টঙ্গী থেকে জয়দেবপুর ১১.২৭ কিলোমিটার রেলপথ হবে। সব মিলে ৩৪৮ কিলোমিটারজুড়ে থাকবে ৭০টি রেলস্টেশন। এই অংশটিকে বৈদ্যুতিক ট্রেনের আওতাভুক্ত করা হবে। চট্টগ্রাম ও মোংলা বন্দরকে কেন্দ্র করে এ রেলপথকে বৈদ্যুতিক সুবিধার আওতায় আনতে চাইছে সরকার। এতে করে যাত্রী ও পণ্য পরিবহনে খরচ কমবে।

জানা গেছে, বৈদ্যুতিক রেলপথ চালু করতে নারায়ণগঞ্জ-ঢাকা-জয়দেবপুর, টঙ্গী-চট্টগ্রাম, জয়দেবপুর-ঈশ্বরদী-খুলনা, আখাউড়া-সিলেট এবং ঈশ্বরদী-পার্বতীপুরের ব্যাপারে রেল পরিকল্পনা করেছে।

শেয়ার করুন