৩০ এপ্রিল ২০২৪, মঙ্গলবার, ০৪:১৯:১৪ অপরাহ্ন
প্রযুক্তিগত বিপ্লবের যুগেও উৎপাদনশীলতা বাড়ছে না কেন
  • আপডেট করা হয়েছে : ২৫-০৭-২০২৩
প্রযুক্তিগত বিপ্লবের যুগেও উৎপাদনশীলতা বাড়ছে না কেন

আমরা প্রায়ই বলি, আমরা ‘প্রযুক্তিগত বিপ্লবের’ যুগে বাস করছি। এখানে ব্যবসা আর কর্মক্ষেত্র বদলে গেছে কম্পিউটার, ইন্টারনেট, দ্রুত যোগাযোগ, ডেটা প্রসেসিং, রোবোটিকস ও সর্বশেষ কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার (এআই) ছোঁয়ায়। 


প্রযুক্তির ক্ষেত্রে এত উন্নতির পরও অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিতে এর প্রভাব চোখে পড়ছে না। এসব প্রযুক্তি যদি সত্যিই আমাদের জীবনে ও কর্মক্ষেত্রে গতি এনে থাকে, তবে উৎপাদনেও তার প্রভাব থাকার কথা। কিন্তু সেটা নেই কেন? 


উৎপাদনশীলতার প্রবৃদ্ধি কমছে

১৯৭৪ ও ২০০৮ সালের মধ্যে যুক্তরাজ্যে কর্মীর মাথাপিছু বার্ষিক উৎপাদনশীলতার হার ছিল ২ দশমিক ৩ শতাংশ। কিন্তু ২০০৮ থেকে ২০২০ সালের মধ্যে উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধির হার কমে প্রায় ০ দশমিক ৫ শতাংশে এ নেমে এসেছে। চলতি বছরের প্রথম তিন মাসে যুক্তরাজ্যে উৎপাদনশীলতা আগের বছরের একই সময়ের চেয়ে ০ দশমিক ৬ শতাংশ কম ছিল। 


বেশিরভাগ পশ্চিমা দেশগুলোর চিত্র প্রায় এক। ১৯৯৫ ও ২০০৫ সালের মধ্যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধির হার ছিল ৩ দশমিক ১ শতাংশ। কিন্তু ২০০৫ থেকে ২০১৯ মেয়াদে এটি ১ দশমিক ৪ শতাংশে এ নেমে এসেছে। 


আমরা উদ্ভাবন ও প্রযুক্তিগত অগ্রগতির বড় সময়ের মধ্য দিয়ে যাচ্ছি। কিন্তু একই সময়ে উৎপাদনশীলতার গতি স্থবির হতে হতে এখন হামাগুড়ি দিচ্ছে। আপাত এই প্যারাডক্সকে আপনি কীভাবে ব্যাখ্যা করবেন? 


হতে পারে, আমরা সবাই কাজ এড়াতে প্রযুক্তি ব্যবহার করছি। অবিরাম হোয়াটসঅ্যাপে বন্ধুদের মেসেজ করা, ইউটিউবে ভিডিও দেখা, টুইটারে অযথা তর্ক করা, বা বিনা কারণে ইন্টারনেট সার্ফ করা। অথবা বড় অন্তর্নিহিত কোনো কারণও থাকতে পারে। 


উৎপাদনশীলতা নিয়ে যা বলছেন অর্থনীতিবিদরা

উৎপাদনশীলতার বিষয়টিকে নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করেন অর্থনীতিবিদরা। ২০০৮ সালের আর্থিক সংকট এবং চলমান উচ্চ মূল্যস্ফীতির নেতিবাচক প্রভাবসহ বেশ কিছু জটিল বিষয় এখানে ভূমিকা রাখে। প্রযুক্তির উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধি করতে না পারার পেছনে দুটি প্রধান কারণকে দায়ী করেন তাঁরা। 


প্রথমটি হলো- আমরা প্রযুক্তির প্রভাব সঠিকভাবে পরিমাপ করছি না। দ্বিতীয়টি হলো- অর্থনৈতিক বিপ্লব ধীর গতিতে হয়ে থাকে। সে জন্য প্রযুক্তিগত বিপ্লবের সম্পূর্ণ সুবিধা পেতে কয়েক দশক লাগতে পারে। 


ডেম ডায়ান কোয়েল কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের পাবলিক পলিসির বেনেট প্রফেসর উৎপাদনশীলতা পরিমাপ বিষয়ে স্বীকৃত বিশেষজ্ঞ। তিনি বলেছেন, ‘এমন কিছু নেই যা এখন ডিজিটাল মাধ্যম ব্যবহার করে না, তবে কী ঘটছে তা এখনই দেখা কঠিন। কারণ এর কিছুই পরিসংখ্যানে দৃশ্যমান নয়। আমদের ডেটা সংগ্রহের পদ্ধতিই এর পেছনে রয়েছে।’ 


ডেম ডায়ান কোয়েল যুক্তি দেন, ‘আমরা প্রযুক্তির প্রভাব সঠিকভাবে পরিমাপ করছি না। উদাহরণস্বরূপ, একটি কোম্পানি আগে নিজস্ব কম্পিউটার সার্ভার এবং আইটি বিভাগে বিনিয়োগ করত। তাঁরা এখন বিদেশি ক্লাউড-ভিত্তিক আউটসোর্স করতে পারে। কোম্পাটি আউটসোর্সিংয়ের মাধ্যমে কম টাকায় সেরা সফটওয়্যার পাচ্ছে, যা নির্ভরযোগ্য ও সর্বদা হালনাগাদ থাকছে। 


আমরা যেভাবে অর্থনীতির স্বরূপ পরিমাপ করি তা একটি কোম্পানিকে বড় নয় বরং ছোট দেখায়। এটি আইটি অবকাঠামোর বিনিয়োগ দেখায় না, যা আগে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির অংশ হিসাবে পরিমাপ করা হতো। 


শেয়ার করুন