২৬ এপ্রিল ২০২৪, শুক্রবার, ০৩:১৭:১০ অপরাহ্ন
অর্থ ছাড়া মেলে না চিকিৎসা সনদ
  • আপডেট করা হয়েছে : ২০-১২-২০২২
অর্থ ছাড়া মেলে না চিকিৎসা সনদ

চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতাল থেকে সঠিক সময়ে চিকিৎসা সনদ অথবা মেডিকেল সার্টিফিকেট না দেওয়ায় আড়াই হাজারের বেশি মামলা ঝুলে আছে। হাসপাতালের সংশ্লিষ্ট শাখায় তদন্ত কর্মকর্তারা প্রায় প্রতিদিনই ভিড় করেন। কিন্তু তাদের খালি হাতে ফিরতে হয়। কারণ চিকিৎসা সনদ পেতে ছয় মাস থেকে এক বছরের বেশি সময় পর্যন্ত লেগে যাচ্ছে। অভিযোগ- আর্থিক লেনদেন ছাড়া চিকিৎসা সনদ মেলে না। আবার অনেক সময় টাকার বিনিময়ে সাধারণ আঘাতের পরিবর্তে গুরুতর আঘাতের সনদও দেওয়া হয়।

ভুক্তভোগীরা জানান, আদালতের নির্দেশনাও কাজে আসে না। ফলে তারা ন্যায়বিচার থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। অপরদিকে, সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ বলছে পর্যাপ্ত চিকিৎসক না থাকায় এবং সনদের আবেদনের সঙ্গে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র না থাকায় সঠিক সময়ে সনদ দেওয়া সম্ভব হয় না। এ কারণেই সনদের জট তৈরি হয়েছে। চমেক হাসপাতাল সূত্র জানায়, হামলার ঘটনায় চিকিৎসা নেওয়া বা মারা যাওয়া, বিষ খেয়ে আত্মহত্যা, সড়ক দুর্ঘটনা, ধর্ষণ, ডিএনএ পরীক্ষা এবং বয়স নির্ধারণের জন্য চিকিৎসা সনদ পেতে চমেক হাসপাতাল পরিচালকের কাছে আবেদন করা হয়। এরমধ্যে ৯০ শতাংশ আবেদন মারামারির ঘটনায় মামলা হয়ে থাকে।

বিভাগীয় হাসপাতালটিতে ৫৪টি থানা ও সংস্থা থেকে চিকিৎসা সনদের আবেদন করা হয়। থানা পুলিশ ছাড়াও ইন্ডাস্ট্রিয়াল পুলিশ, ট্যুরিস্ট পুলিশ, পিবিআই, গোয়েন্দা পুলিশ ও সিআইডির পক্ষ থেকে আবেদন করা হয়। সনদের জন্য প্রতিদিন গড়ে ৫০ থেকে ৬০টি আবেদন জমা পড়ে হাসপাতালের সংশ্লিষ্ট বিভাগে। আবেদনগুলো সনদ প্রদানের জন্য হাসপাতালের সংশ্লিষ্ট ওয়ার্ডে পাঠানো হয়। চলতি বছর চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের বিভিন্ন থানা থেকে সনদের জন্য ২ হাজার ৮৭৪টি আবেদন করা হয়। একই সময়ে ১ হাজার ৪৪৮টি সনদ দেওয়া হয়। এছাড়া জেলা থেকে ২ হাজার ৬৮২টি আবেদন করা হয়। এরমধ্যে ১ হাজার ৩৮০টি সনদ দেওয়া হয়। এর বাইরে মহানগর ও জেলায় আরও ১৫৬টি সনদ দেওয়া হয়। সনদের অভাবে মামলার তদন্ত, অভিযোগ গঠন বা নিষ্পত্তি কোনোটিই করা যাচ্ছে না।

বিএনএনআরসির তত্ত্বাবধানে প্রস্তুত প্রতিবেদনে বলা যায়, ৭ এপ্রিল চট্টগ্রামের পটিয়া উপজেলার হিলচিয়া গ্রামে ইটের আঘাতে ব্যথা পান স্থানীয় জফিকুল ইসলাম। কিন্তু প্রতিপক্ষকে ফাঁসাতে সেই আঘাতকে বুলেট ইনজুরি উল্লেখ করে চমেক হাসপাতালে ভর্তি হন। যথারীতি ৯ এপ্রিল সেই রোগীকে হাসপাতাল থেকে ছাড়পত্র দেওয়া হয়। নুরুল ইসলামের অভিযোগ, টাকার বিনিময়ে রোগীর ছাড়পত্রে গুরুতর আঘাত পাওয়া হিসাবে ‘বুলেট ইনজুরি’ উল্লেখ করা হয়েছে। এ কারণে তার ভাই নুরুল আবছারকে দুই মাস ১০ দিন জেল খাটতে হয়েছে। অথচ একজন বুলেটবিদ্ধ রোগীকে কোনোভাবেই একদিনের মাথায় হাসপাতাল থেকে ছাড়পত্র দেওয়ার কথা নয়। পরে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের তদন্তে বুলেট ইনজুরি হওয়ার বিষয়টি ভুল প্রমাণিত হয়।

হাসপাতালের ক্যাজুয়ালটি বিভাগের সহকারী রেজিস্ট্রার ডা. ইয়াসিন আরাফাতের বিরুদ্ধে চিকিৎসা সনদ নিয়ে বাণিজ্যের অভিযোগ উঠেছে। এরপর ২৯ নভেম্বর হাসপাতালের কার্ডিয়াক সার্জারি বিভাগের বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক ডা. নাজমুল হাসানকে প্রধান করে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। কমিটিতে সাত কর্ম দিবসের মধ্যে প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দেওয়া হলেও শনিবার পর্যন্ত তদন্তই শেষ হয়নি। পাহাড়তলী জোনের সহকারী পুলিশ কমিশনার একেএম মহিউদ্দিন সেলিম বলেন, ‘মেডিকেল সনদ না পাওয়ার কারণে পাহাড়তলী ও আকবরশাহ থানায় বেশ কিছু মামলা শেষ করা যাচ্ছে না। সংশ্লিষ্ট অফিসাররা একাধিকবার মেডিকেলে আবেদন করেছেন। পরবর্তী সময়ে আদালতের মাধ্যমেও নির্দেশনা গেছে। এরপরও মেডিকেল সনদ পাওয়া না গেলে আমাদের কিছুই করার থাকে না।

এ প্রসঙ্গে চমেক হাসপাতাল পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল শামীম আহসান যুগান্তরকে বলেন, ‘চিকিৎসা সনদ প্রদানের জন্য আবেদনের একটি অংশ যেমন হাসপাতালে আসছে, তিমনি সরবরাহ করা হচ্ছে। এজন্য একজন সহকারী পরিচালক দায়িত্ব পালন করছেন। তবে যেসব আবেদন জমা পড়ে থাকছে তার একটি অংশ ভুয়া মামলার আবেদন। প্রতিপক্ষকে ফাঁসাতে জাল কাগজপত্রের মাধ্যমে মামলা করা হয়। পরে তার সত্যতা পাওয়া যায় না। তিনি আরও বলেন, চিকিৎসা সনদ বাণিজ্যের অভিযোগে এক চিকিৎসকের বিরুদ্ধে তদন্ত চলছে। অভিযোগ প্রমাণিত হলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

শেয়ার করুন