০৩ ডিসেম্বর ২০২৪, মঙ্গলবার, ১১:২৮:৪৯ অপরাহ্ন
বৃষ্টিতে বেড়েছে সব সবজির দাম
  • আপডেট করা হয়েছে : ১১-০৮-২০২৩
বৃষ্টিতে বেড়েছে সব সবজির দাম

‘পিঁয়াজ গত বছর এই সময়ে ৪৫-৫০ টাকায় বেচছি। আর এহন পাইকারিতেই কেনা লাগতেছে ৪৫-৫০ টাকায়। তাইলে কমে বিক্রি করমুডা কেমনে?’


বলছিলেন মোহাম্মদপুর কৃষি বাজারের বিক্রেতা রমিজ মিয়া। নিজে যে পণ্যগুলো বিক্রি করছেন, সেগুলোর সঙ্গে নিজের প্রয়োজনে যে পণ্য কেনেন, সেগুলোর দামও এক বছরের ব্যবধানে আকাশ ছুঁয়েছে বলে জানান এই ব্যবসায়ী।


ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) বাজারদরের প্রতিবেদনেও রমিজ মিয়ার কথার সত্যতা পাওয়া গেল। সরকারি এ সংস্থার তথ্য অনুযায়ী, এক বছরের ব্যবধানে নিত্যপ্রয়োজনীয় প্রায় সব পণ্যের দামই বেড়েছে।


গতকাল বৃহস্পতিবার প্রকাশিত টিসিবির বাজারদরের তালিকা বলছে, এদিন রাজধানীর বিভিন্ন বাজারে দেশি পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে ৭০-৮০ টাকা কেজি দরে। এক বছর আগে এর দাম ছিল ৪৮-৫০ টাকা। অর্থাৎ এক বছরে দাম বেড়েছে ৭৬ শতাংশ। দেশি রসুন বাজারে বিক্রি হচ্ছে ২০০-২২০ টাকায়। গত বছর এর দাম ছিল ৭০-৮০ টাকা। এক বছরের ব্যবধানে দাম বেড়েছে ১৯৩ দশমিক ৩৩ শতাংশ। একইভাবে দেশি আদার দাম বেড়েছে ১৮৮ দশমিক ৪৬ শতাংশ, শুকনা মরিচ ২৮ দশমিক ১৩ শতাংশ, হলুদ ২৬ দশমিক ৫৩ শতাংশ, ব্রয়লার মুরগি ৫ দশমিক ৮৮ শতাংশ, চিনি ৬১ দশমিক ৬৮ শতাংশ, প্যাকেটজাত লবণ ২১ দশমিক ২১ শতাংশ, ডিম ১৬ দশমিক ৬৭ শতাংশ, আলু ৩১ দশমিক শূন্য ৩ শতাংশ, প্যাকেটজাত আটা ১৭ দশমিক ৩৫ শতাংশ, পাম তেল ৪ শতাংশ, ছোলার ডাল ১০ দশমিক ৩৪ শতাংশ। 


জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক এ এইচ এম সফিকুজ্জামান আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘ডলারের মূল্যবৃদ্ধি এবং সুদের হারের কারণে অনেক পণ্যের দাম বেড়েছে। আমরা মনিটর করছি। অযৌক্তিকভাবে কোনো পণ্যের দাম বাড়ানো হয়েছে কি না, সেটা আমরা দেখছি।’


নিত্যপণ্যের উচ্চমূল্যের কারণে ভোগান্তি বাড়ছে ক্রেতাদের। রাজধানীর রামপুরা বাজারে গতকাল বাজার করতে গিয়েছিলেন গৃহিণী সামসুন্নাহার। তিনি বলেন, ‘এক বছর তো দূরের কথা, আমি তো তিন দিন আগের সঙ্গেই দাম মিলাইতে পারতেছি না। তিন দিন আগের চেয়ে প্রতিটি সবজির দাম ২০-৩০ টাকা বাড়ছে। আর মাছ-মাংস আজকাল কিনি না, দামও দেখি না।’


সবজির বিক্রেতারা বলছেন, বৃষ্টির কারণে প্রায় সব সবজির দাম বেড়েছে। সিপাহীবাগ বাজারের সবজি বিক্রেতা ফরিদ হোসেন বলেন, ‘চিচিঙ্গা পরশু পাইকারিতে ২৫ টাকায় কিনছি, আজকে ৪০ টাকায় কেনা লাগছে। পেঁপে ছাড়া প্রতিটি সবজির দাম পাইকারিতে ১৫ থেকে ২৫ টাকা পর্যন্ত বাড়ছে। খুচরা বাজারে তো দাম বাড়বই।’


এদিন রাজধানীর বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা যায়, দেশি আলু বিক্রি হচ্ছে কেজি প্রতি ৫০ টাকায়, হল্যান্ড আলু ৪০ টাকা, বেগুন জাতভেদে ৫০-৯০ টাকা, মিষ্টি কুমড়া ৩০-৪০ টাকা, টমেটো ২৬০-২৮০ টাকা, বরবটি ৬০-৭০ টাকা, কাঁকরোল ৪০-৬০ টাকা, পেঁপে ৩০-৩৫ টাকা, পটোল ৪০-৫০ টাকা। ফার্মের মুরগির ডিমের (লাল) ডজন ১৬০ থেকে ১৬৯ টাকা। ব্রয়লার মুরগির কেজি ১৮৫ থেকে ১৯০ টাকা।


হঠাৎ সবজির মূল্যবৃদ্ধির কারণ সম্পর্কে জানতে চাইলে কৃষি বিপণন অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক (বাজার সংযোগ-১) প্রণব কুমার সাহা বলেন, ‘বৃষ্টির কারণে কয়েকটি পণ্যের দাম বেড়েছে। তবে ঢালাওভাবে সব পণ্যের দাম বাড়ার কথা নয়। আমাদের পর্যবেক্ষণ বলছে, কিছু সবজির দাম কেজিতে ৫-১০ টাকা বেড়েছে। ২০-২৫ টাকা বাড়ার কথা নয়।’


পেঁয়াজ ও ডিমের মূল্যবৃদ্ধি সম্পর্কে প্রণব কুমার বলেন, স্থানীয় পর্যায়ে ডিমের সরবরাহ কমেছে। আর ভারতে গত মাসে বন্যা হওয়ায় অনেক পেঁয়াজ আসতে পারছে না। সে কারণে দেশের বাজারে পেঁয়াজের দাম কিছুটা বেড়েছে।  


টিসিবির হিসাবে এক বছরে মূল্যবৃদ্ধি

পণ্য                        ১০ আগস্ট ২০২২         ১০ আগস্ট ২০২৩             বৃদ্ধির হার

পেঁয়াজ (দেশি)               ৪০-৪৫                       ৭০-৮০                         ৭৬%

রসুন (দেশি)                 ৭০-৮০                        ২০০-২২০                    ১৯৩%

আদা (দেশি)              ১২০-১৪০                        ৩৫০-৪০০                   ১৮৮%

চিনি                         ৮২-৮৫                           ১৩০-১৪০                    ৬২%

আটা (প্যাকেট)          ৪৮-৫০                            ৫৫-৬০                     ১৭%

লবণ প্যাকেট             ৩০-৩৬                            ৩৮-৪২                     ২১% 

ডিম (হালি)                ৪৩-৪৭                           ৫০-৫৫                       ১৬% 

আলু                          ২৮-৮০                          ৩৬-৪০                      ৩১%


শেয়ার করুন