এইচএসসি পরীক্ষার্থী তাহসিন হোসাইনের মৃত্যুর ঘটনায় করা হত্যা মামলায় ল্যাবএইডের পাঁচ চিকিৎসকসহ ছয়জনকে জামিন দেওয়া হয়েছে। আজ সোমবার ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট রেজাউল করিম চৌধুরীর আদালতে আত্মসমর্পণ করার পর তাঁদের জামিন দেওয়া হয়। শুনানির সময় বিচারক চিকিৎসকদের প্রতি উষ্মা প্রকাশ করেন। এ সময় আদালতে চিকিৎসকেরা নির্লিপ্ত ছিলেন।
আজ যাদের জামিন দেওয়া হয়েছে তাঁরা হলেন স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজের সহকারী অধ্যাপক ও ল্যাবএইড স্পেশালাইজড হাসপাতালের সার্জন ডা. মো. সাইফুল্লাহ, সহকারী সার্জন ডা. সিকদার আল আমিন মাকসুদ, ডা. সাব্বির আহমেদ, ডা. মোশারফ হোসেন, ডা. এস এম মাশরাফি ইনসান কনক ও ল্যাব এইডের ব্রাঞ্চ ম্যানেজার (ধানমন্ডি) মো. শাহজাহান।
বাদী পক্ষের আইনজীবী তানভীর আহমেদ সজীব ছয়জনকে জামিন দেওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
ধানমন্ডির ল্যাবএইড স্পেশালাইজড হাসপাতালের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ডাক্তার এ এম শামীমসহ ছয় চিকিৎসকের বিরুদ্ধে গত ২৬ জুন হত্যা মামলা করা হয়। মামলাটি করেন নিহত কলেজশিক্ষার্থী তাহসিনের বাবা মনির হোসেন। মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালত ধানমন্ডি থানাকে মামলা রুজু করার নির্দেশ দেন।
ধানমন্ডি থানা মামলা নিবন্ধন করার পর ল্যাবএইডের পাঁচ চিকিৎসকসহ ছয়জন গত ৩ জুলাই হাইকোর্টে আগাম জামিন পান। হাইকোর্ট একই সঙ্গে ছয় সপ্তাহের মধ্যে নিম্ন আদালতে আত্মসমর্পণ করার নির্দেশ দেন।
হাইকোর্টের আদেশের পরিপ্রেক্ষিতে ছয়জন আজ সকালে আইনজীবীর মাধ্যমে আত্মসমর্পণ করেন। একই সঙ্গে জামিন আবেদন করেন। জামিন আবেদন শুনানি করেন অ্যাডভোকেট নজিবুল্লাহ হিরু, মিজানুর রহমান মামুন ও গোলাম কিবরিয়া জোবায়ের।
শুনানির একপর্যায়ে আদালত চিকিৎসকদের উদ্দেশে বলেন, একজন চিকিৎসকের বিরুদ্ধে কোনো মামলা হলে বা কোনো চিকিৎসককে কারাগারে নেওয়া হলে আপনারা আন্দোলন করেন কারণ কি? এ সময় চিকিৎসকেরা চুপ থাকেন। এ সময় আদালত আবার বলেন, ট্রেড ইউনিয়ন যেভাবে আন্দোলন করে আপনারাও সেভাবে আন্দোলন শুরু করেন। ধর্মঘট করেন।
চিকিৎসকেরা কথা না বললে আদালত আবার বলেন, যেখানে অনেক চিকিৎসক থাকেন তাঁদের মধ্যে কেউ কেউ তো অপরাধ করতে পারে। এ বিষয়ে কি বলেন? এ সময় একজন চিকিৎসক বলেন, জ্বী, করতে পারেন। আদালত তখন বলেন, তাহলে সেই অপরাধী চিকিৎসকের পক্ষ নিয়ে আপনারা যখন ধর্মঘট করেন তখন অনেক রোগীও মারা যান। ঠিক কিনা? এর উত্তরে চিকিৎসকদের কেউ বলেন, ঠিক। আদালত তখন বলেন, শত শত রোগী মারা যাওয়ার সেই দায়-দায়িত্ব আপনাদের। এ জন্যই তো আপনারা হত্যার দায়ে দায়ী। চিকিৎসকেরা এ সময় কোনো কথা বলেননি।
পরে বাদী ও আসামিপক্ষের শুনানি শেষে আদালত আগামী ২৬ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত অন্তর্বর্তীকালীন জামিন দেন। ওই তারিখে মামলার তদন্ত কর্মকর্তাকে আদালতে হাজির হয়ে এই ঘটনার তদন্তের অগ্রগতি সম্পর্কে জানাতে নির্দেশ দেন আদালত।
মামলার অভিযোগে বলা হয়, বাদী মনির হোসেনের ছেলে তাহসিন কিছুদিন থেকে অসুস্থ বোধ করায় গত ২৭ মার্চ তাকে ল্যাবএইডের চিকিৎসক সাইফুল্লাহকে দেখানো হয়। তিনি তাৎক্ষণিক তাঁর ছেলেকে হাসপাতালে ভর্তির পরামর্শ দেন। চিকিৎসক তাঁকে বলেন, তাঁর ছেলের অবস্ট্রাকটিভ স্মল গাঁট বা নাড়ির প্যাঁচ রয়েছে। যার কারণে তার পেটে ব্যথা ও সে মলত্যাগ করতে পারছে না। দ্রুত অস্ত্রোপচার করতে হবে। পরে গত ২৮ মার্চ অস্ত্রোপচার করা হয়। এরপর তাহসিনের অবস্থার অবনতি হতে থাকে। এ বিষয়ে জানতে চাইলে ডা. মাকসুদ বাদীকে জানান অস্ত্রোপচার সফল হয়নি। রোগীকে সুস্থ করতে হলে আবার অপারেশন করতে হবে।
এরপর গত ৬ এপ্রিল দ্বিতীয়বার অস্ত্রোপচার করেন ডা. সাইফুল্লাহ। দ্বিতীয়বার অপারেশনের পরও রোগীর অবস্থা খারাপ হতে থাকে। দীর্ঘ তিন মাস চিকিৎসা চলার পর গত ২৩ জুন তাহসিনের মৃত্যু হয়।
বাদী মামলার অভিযোগে আরও বলেন, ছেলের কি রোগ হয়েছে সেটাই ডাক্তাররা জানাতে পারেননি। অথচ তার দুইবার অপারেশন করা হয়েছে। এ সময় ছেলেকে ১৪৪ ব্যাগ রক্ত দিতে হয়েছে। খরচ হিসেবে বিল দিতে হয়েছে প্রায় ২৭ লাখ টাকা। প্রথম অপারেশনের পর এখান থেকে রিলিজ নিয়ে ভারতে চিকিৎসা করাতে চেয়েছিলেন বাদী। কিন্তু ল্যাবএইড কর্তৃপক্ষ রোগীকে ছাড়পত্রও প্রদান করেনি।