২১ নভেম্বর ২০২৪, বৃহস্পতিবার, ০৮:০২:২৭ অপরাহ্ন
কর্মচারিদের জানোয়ার বলে রামেক হাসপাতালের ওয়ার্ড মাস্টার রাসেলের পোষ্ট, বাড়ছে ক্ষোভ
  • আপডেট করা হয়েছে : ১৮-১০-২০২৩
কর্মচারিদের জানোয়ার বলে রামেক হাসপাতালের ওয়ার্ড মাস্টার রাসেলের পোষ্ট, বাড়ছে ক্ষোভ

রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ওয়ার্ড মাস্টার রাসেল আলী তার ফেসবুক আইডিতে কর্মচারিদের অশ্লিল ভাষায় গালি দিয়ে করা একটি পোষ্টকে কেন্দ্র করে কর্মচারিদের মধ্যে চরম অসন্তোষ ও অস্থিরতা বিরাজ করছে। কর্মচারিদের অশ্লিল ভাষায় গালি দিয়ে পোষ্ট করায় রামেক হাসপাতালের কর্মচারিরা ফুঁসে উঠছে। একই সাথে ওয়ার্ড মাস্টার রাসেলের বিচার দাবিতে সোচ্ছার হয়ে উঠছে কর্মচারিরা।


অশ্লিল ভাষায় গালি দেয়ার বিষয়টি জানতে পরে রামেক হাসপাতালের তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারিরা রাসেল আরীর বিরুদ্ধে আজ বুধবার পরিচালক বরাবর অভিযোগ দিয়েছেন। এ অভিযোগের প্রেক্ষিতে ওয়ার্ড মাস্টার রাসেল আলীর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে নোটিশ করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন রামেক হাসপাতালের পরিচালক।


জানা গেছে, রামেক হাসপাতালের ওয়ার্ড মাস্টার রাসেল আলীর বিরুদ্ধে ব্যাপক অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগে গঠন করা তদন্ত কমিটির তদন্ত প্রতিবেদনের প্রেক্ষিতে তার দুটি ইক্রিমেন্ট বাতিলসহ তাকে সতর্ক করা হয়। অভিযোগ ছিল, ওয়ার্ড মাস্টার রাসেল আলী কারণে অকাণে রামেক হাসপাতালের দৈনিক মজুরী ভিত্তিক কর্মচারিদের বাদ দিয়ে টাকার বিনিময়ে নতুন লোক নিয়োগ দেয়া, কর্মচারিদের কাছ থেকে মাসিক, সাপ্তাহিক চাঁদা তোলা ও হাসপাতালে কর্মরত এক মুক্তিযোদ্ধার সন্তানকে হুমকি দেয়ার অভিযোগ। হুমকি, অনিয়ম ও দুর্নীতির কারণে ওয়ার্ড মাস্টার রাসেল আলীর বিরুদ্ধে স্থানীয় ও জাতীয় পত্রিকায় সংবাদ প্রকাশ হয়।


এর প্রেক্ষিতে রামেক হাসপাতালের সাবেক পরিচালক তার বিরুদ্ধে ৪ সদস্য বিশিষ্ঠ তদন্ত কমিটি গঠন করেন। যদিও সাবেক পরিচালক শামীম ইয়াজদানি দায়িত্বে থাকাকালীন সময় সেই তদন্ত কমিটির তদন্ত প্রতিবেদক আলোর মুখ দেখেনি। বর্তমান পরিচালক বিগ্রেডিয়ার জেনারেল শামীম আহাম্মদ দায়িত্ব নেয়ার পর রাসেলের বিরুদ্ধে গঠন করা তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন দাখিল করার জন্য নিদের্শ দেন। এইর প্রেক্ষিতে তদন্ত কমিটির সদস্যরা পুনরায় তদন্ত করে রাসেল আলীর বিরুদ্ধে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করেন। গত ২ আগষ্ট তদন্ত কমিটির সুপারিশে তাকে ও অেপর একজন শুধু সতর্ক  করে রামেক হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। আউট সোর্সিয়ের দুজনকে চাকরিচ্যুত করা হয়।


সূত্র মতে, তদন্ত কমিটির সদস্যরা রাসেল আলীর ব্যাপক অনিয়ম, দুর্নীতি, বিভিন্ন ওযুহাতে কর্মচারিদের বাদ দেয়া, আবার টাকার বিনিময়ে নতুন কর্মচারি নিয়োগ দেয়ার বিষয়ে সত্যতা পান। এরই প্রেক্ষিতে তদন্ত কমিটি রাসেল আলীকে দুরবর্তিস্থানে বদলী ও তার দুটি ইনক্রিমেন্ট বাতিলের সুপারিশ করেন। কিন্তু ওই তদন্ত কমিটির সদস্যদের মধ্যেই ছিল রাসেল আলীর লোক। তদন্ত কমিটির লোকের মাধ্যমে শাস্তির বিষয়টি জানতে পেরে রাসেল আলী সাবেক পরিচালকের সাথে যোগাযোগ করে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মাধ্যমে তিনি বদলী ঠেকান। বদলী ঠেকালেও তিনি ইনক্রিমেন্ট কর্তন ঠেকাতে পারেননি। দুর্নীতির বিষয়টি প্রমাণিত হওয়ার পর বর্তমান পরিচালক রাসেল আলীকে সব দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দেন।


রামেক হাসপাতালের সূত্র মতে, দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি পাওয়ার পর থেকে রাসেল আলী হয়ে উঠেন বেপরোয়া। তিনি যেসব কর্মচারি নিয়োগ করেছেন তাদের তিনি নিয়ন্ত্রণে রাখার চেষ্টা অব্যাহত রাখেছেন। একই সাথে কর্মচারিদের মধ্যে বিভেদ তৈরিতেও তিনি কাজ করছেন এমন অভিযোগ কর্মচারিদের।


অপরদিকে গত ২২ সেপ্টেম্বর রাসেল আলী তার ফেসবুক আইডিতে লিখেন, রামেক হাসপাতালে কিছু জানোয়ারের বাচ্চার জন্ম হয়েছে, যারা বিভিন্ন সময় বিভিন্নভাবে আমাকে হেনস্তা করে যাচ্ছে। কখনো ফেইক ফেসবুক আইডি খুলে, কখনো মাস্তান দিয়ে, কখনো বা লোকাল পত্রিকা বা অনলাইন নিউজ মিথ্যা তথ্য দিয়ে দীর্ঘদিন থেকে হেনস্তা করে যাচ্ছে। এদের বিরুদ্ধে কঠোরভাবে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে ইনশাআল্লাহ।


ওয়ার্ড মাস্টার রাসেল আলী তার ফেসবুক আইডিতে এ পোস্ট করার পর ১২টি কমেন্ট পড়েছে। এরমধ্যে ‘নীল খাম’ নামে একটি আইডি থেকে রাসেল আলীকে উদ্দেশ্য করে কমেন্ট করা হয়েছে, স্যার, ঠিক বলেছেন, তবে এদের বাবা হলো দুজন, ১. ছোট ভাই। ২. বড় ভাই। এদের দুই ভাইয়ের বীর্যে এদের জন্ম, স্যার।


‘আশরাফুল ইসলাম’ নামে আইডি থেকে কমেন্ট করা হয়েছে, স্যার নিরাশ হবেন না। এদের বিচার করার মতো কেউ নেই। আশা করি আল্লাহ একদিন এদের বিচার করবেন ইনশাআল্লাহ।


‘কথা কথা’ নামে আইডি থেকে কমেন্ট করা হয়েছে, কঠোর ব্যবস্থা নিচ্ছেন না কেন নেন স্যার। ওয়ার্ড মাস্টার রাসেল সেখানে রিপ্লে দিয়েছেন, প্রসেসিং এ আছে সব কিছু। বের হয়ে আসবে সব। ইনশাআল্লাহ।


‘রাকিবুল হাসান’ নামে আইডি থেকে কমেন্ট করা হয়েছে, হুম এই আইডি কার খুঁজে বাহির করতেই হবে। মিথ্যা তথ্য কেনো দিতাছে তাও জিজ্ঞেস করতে হবে। আর এর যেনো কঠোর বিচার হয়। রিপ্লেতে ওয়ার্ড মাস্টার রাসেল বলেছেন, সময় কথা বলবে ইনশাআল্লাহ।


কমেন্ট করা রাকিবুল হাসান, রামেক হাসপাতালের আউটসোর্সিং পদে চাকরি করতেন। দুর্নীতির দায়ে তাকে চাকরিচ্যুত করেছে রামেক হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। তিনি ওয়ার্ড মাস্টার রাসেলের ডান হাত নামে পরিচিত ছিলো।


এদিকে ওয়ার্ড মাস্টার রাসেলের পোষ্টের বিষয়টি রামেক হাসপাতালের কর্মচারিদের মধ্যে ছড়িয়ে পড়লে তাদের মধ্যে চরম অসন্তোষ সৃষ্টি হয়। যার প্রেক্ষিতে তৃতীয় শ্রেণি ও চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারিরা বিষয়টি দেখার জন্য পরিচালককে অভিযোগ দিয়েছেন। এছাড়াও রাসেল আলী ক্ষমতা হারিয়ে কর্মচারিদের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টিতে মরিয়া হয়ে উঠেছে বলেও পরিচালকের কাছে নালিশ করা হয়েছে।


এব্যাপারে রামেক হাসপাতালের ওয়ার্ড মাস্টার রাসেল আলীর সাথে যোগাযোগ করা হলে তার ব্যবহৃত মোবাইল ফোন বন্ধ থাকায় মন্তব্য পাওয়া যায়নি।


এব্যাপারে রামেক হাসপাতালের পরিচালক বিগ্রেডিয়ার জেনারেল এফএম শামীম আহাম্মদ বলেন, বিষয়টি আমি জানি। এব্যাপারে কর্মচারিরা আমার কাছে অভিযোগ করেছেন। আমি বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে দেখছি। ইতিমধ্যে রাসেলের বিরুদ্ধে নোটিশ করা হয়েছে। কেনো হাসপাতালের কর্মচারিদেও তিনি জানোয়ার বলে আখ্যা দিলেন সে ব্যাপারে প্রয়োজনে ওয়ার্ড মাস্টার রাসেল আলীর বিরুদ্ধে আইসিটি আইনে ব্যবস্থা নেয়া হবে।


শেয়ার করুন