২০ এপ্রিল ২০২৪, শনিবার, ০৬:৩০:৫১ পূর্বাহ্ন
অপরিকল্পিত বালু উত্তোলনে ঝুঁকিতে পদ্মা সেতু
  • আপডেট করা হয়েছে : ২২-০৯-২০২২
অপরিকল্পিত বালু উত্তোলনে ঝুঁকিতে পদ্মা সেতু

সরকারি নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে অপরিকল্পিতভাবে বালু তোলায় মারাত্মক ঝুঁকিতে রয়েছে দেশের সবচেয়ে বড় প্রকল্প পদ্মা সেতু। বিলীন হওয়ার আশঙ্কায় রয়েছে ৪টি গ্রাম, শত শত একর ফসলি জমি, স্কুল, মসজিদ, মাদ্রাসা ও বসতভিটা। শরীয়তপুরের জাজিরা উপজেলার পদ্মা সেতু এলাকায় পদ্মা নদীতে অসংখ্য অবৈধ ড্রেজার দিয়ে বালু তুলছে অবৈধ ড্রেজার ব্যবসায়ী ও প্রভাবশালীদের সমন্বয়ে গড়ে উঠা একটি চক্র। মঙ্গলবার বিকালে অবৈধ বালু তোলা বন্ধ ও নদীশাসনের দাবিতে মানববন্ধন করেছেন এলাকাবাসী। জাজিরা উপজেলার নাওডোবা এলাকার পাইনপাড়া গ্রামের মাঝিরহাট এলাকার নদীর পারে এ মানববন্ধন করেন তারা।

জাজিরা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা কামরুল আহসান সোহেল বলছেন, পদ্মা সেতুর পিলারের সুরক্ষায় কয়েকটি ড্রেজারের অনুমতি রয়েছে। যদিও অনেক অবৈধ ড্রেজার দিয়ে মাটি কাটা হচ্ছে। আমরা কয়েকদিন আগে ২১ জনকে বিভিন্ন মেয়াদে সাজা দিয়েছি। জাজিরা সীমান্তে অবৈধ ড্রেজার চললে আইনি ব্যবস্থা নেব।

পাইনপাড়া এলাকার আব্দুল লতিফ বেপারী, আব্দুল মালেক মোস্তাক, হাকিম মজুমদার ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, জেলার জাজিরা উপজেলার নাওডোবা এলাকায় পদ্মা সেতুর পি আর ৩৩ থেকে পি আর ২২, ২৩ পর্যন্ত বিস্তীর্ণ এলাকাজুড়ে চলছে অবৈধ ড্রেজার। এ যেন বালু তোলার মহোৎসব চালাচ্ছে একটি প্রভাবশালী চক্র। যেখানে দিন-রাত ড্রেজার (খনন যন্ত্র) দিয়ে অপরিকল্পিতভাবে কোটি কোটি ঘনফুট বালু তোলা হচ্ছে। অপরদিকে জাজিরা উপজেলার নাওডোবা ইউনিয়নের পাইনপাড়া, আহাম্মদ মাঝির কান্দি, আলিম উদ্দিন বেপারী কান্দি, আলমখার কান্দি গ্রামের ৩টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, ৭-৮টি মসজিদ, ২টি মাদ্রাসা, ১টি কমিউনিটি ক্লিনিক ও একটি গুচ্ছগ্রামসহ অন্তত এক হাজার পরিবার মারাত্মক ভাঙন ঝুঁকিতে রয়েছে। অবৈধভাবে পদ্মা সেতুকে ঝুঁকির মধ্যে ফেলে বালু কেটে নিচ্ছে মুন্সীগঞ্জ জেলার সেলিম দেওয়ান, মতি মাদবর ও জহের ফকিরসহ একাধিক ড্রেজার ব্যবসায়ী।

জাজিরা এলাকার ড্রেজার ব্যবসায়ী তুহিন ফরাজী, চুন্নু মাদবর, বাচ্চু মাদবর ওরফে কালা বাচ্চু, দবির মোল্লা, সুলতান মোল্লাসহ ১০-১৫ জন ড্রেজার ব্যবসায়ীর চক্র। প্রতিদিন প্রতিটি ড্রেজার দিয়ে কাটা হচ্ছে ১ লাখ থেকে ২ লাখ ঘনফুট বালু। শতাধিক ড্রেজার দিয়ে কেটে নেওয়া হচ্ছে কোটি কোটি ঘনফুট বালু। এসব বালু বিক্রি করা হচ্ছে ঢাকা, নারায়ণগঞ্জসহ দেশের বিভিন্ন জায়গায়। সম্প্রতি জাজিরা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ২১ জন ড্রেজার শ্রমিককে বিভিন্ন মেয়াদে সাজা দিয়েছেন। তারপরও থামানো যাচ্ছে না এসব অবৈধ ড্রেজার ব্যবসায়ীদের।

মঙ্গলবার দুপুরে সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, পদ্মা সেতুসংলগ্ন এলাকায় শত শত ড্রেজার দিয়ে অপরিকল্পিতভাবে বালু কেটে নেওয়া হচ্ছে। সাংবাদিকদের দেখে দ্রুত সটকে পড়ে এসব অবৈধ ড্রেজার ও ভলগেট নিয়ে। আব্দুর রাজ্জাক মাঝি, মনির হোসেন খান, মালেক মোস্তাক বলেন, আমরা বাপ-দাদার ভিটেমাটি পদ্মা সেতুর জন্য দিয়েছি। আজকে পদ্মা সেতু হয়েছে। আমরা অনেক খুশি। এখন অপরিকল্পিতভাবে পদ্মা সেতুর নিচ থেকে বালু কেটে নিচ্ছে। তাতে আমরা মারাত্মক ঝুঁকির মধ্যে আছি। আমাদের এলাকা নদীতে বিলীন হয়ে যাবে। জাজিরা এলাকার বাচ্চু মাদবর ওরফে কালা বাচ্চু, দবির মোল্লা, সুলতান মোল্লাসহ ১০-১৫ জন ড্রেজার বাবসায়ীর চক্র ও মুন্সীগঞ্জের অসাধু ড্রেজার ব্যবসায়ী এখান থেকে অবৈধভাবে বালু তুলে নিচ্ছে। নিজেদের ভিটা রক্ষার জন্য আমরা প্রধানমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করার জন্য মানববন্ধন করেছি। এ ব্যাপারে জাজিরা এলাকার ড্রেজার ব্যবসায়ী বাচ্চু মাদবর বলেন, আমরা সেতু বিভাগের অনুমতি নিয়ে বালু কাটি।

মানববন্ধনে বক্তব্য রাখেন-আব্দুর রাজ্জাক মাঝি, আব্দুল লতিফ বেপারী, মালেক মোস্তাক, আব্দুল হাকিম মজুমদার, আলী মৃধা, আবুল কালাম মাঝি, মতিউর রহমান টেপা, আনোয়ার হোসেন মাঝি, ফজলুল হকসহ অনেকে।

শেয়ার করুন