০২ মে ২০২৪, বৃহস্পতিবার, ০৭:২৯:৪৭ পূর্বাহ্ন
চার হাজার কোটির প্রকল্প ফুলে দ্বিগুণ
  • আপডেট করা হয়েছে : ১৯-০৯-২০২৩
চার হাজার কোটির প্রকল্প ফুলে দ্বিগুণ

চার হাজার কোটি টাকার প্রকল্প। গভীর সমুদ্র থেকে পাইপলাইনে তেল খালাসের জন্য নেওয়া এই প্রকল্পের নাম ‘ইনস্টলেশন অব সিঙ্গেল পয়েন্ট মুরিং’ (এসপিএম)। গত ৩ জুলাই প্রকল্পটি বাস্তবায়ন শেষে পরীক্ষামূলকভাবে জাহাজ থেকে তেল খালাস শুরু হয়।


কিন্তু ৫ ঘণ্টার মধ্যেই ত্রুটি দেখা দেওয়ায় খালাস বন্ধ হয়ে যায়। এরপর গত আড়াই মাসেও আলোচিত এ প্রকল্পের তেল খালাস কার্যক্রম চালু করা যায়নি; বরং প্রকল্পের আরও কিছু সংশোধনী যুক্ত করে মেয়াদ ও বরাদ্দ বাড়ানোর প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে।


গত জুনে প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হওয়া পর্যন্ত মোট ব্যয় হয়েছে ৭ হাজার ১২৫ কোটি টাকা। পরের মাসেই অতিরিক্ত ১ হাজার ৯৭ কোটি 

টাকা বরাদ্দ পেতে পরিকল্পনা কমিশনে চতুর্থ সংশোধিত প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে। এটি পাস হলে প্রকল্পের মোট ব্যয় দাঁড়াবে ৮ হাজার ২২২ কোটি টাকা।


চীনের এক্সিম ব্যাংকের অর্থায়নে পেট্রোবাংলার পক্ষে রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠান ইস্টার্ন রিফাইনারি লিমিটেড (ইআরএল) প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে। চতুর্থ প্রকল্প সংশোধনীতে কারিগরি নকশায় পরিবর্তন, বৈদেশিক মুদ্রা বিনিময় হার বৃদ্ধি এবং বিভিন্ন নির্মাণকাজ যুক্ত হওয়ার কথা উল্লেখ করে মেয়াদ ২০২৪ সালের জুলাই পর্যন্ত বাড়ানোর প্রস্তাব দিয়েছে সংস্থাটি।


ইআরএলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. লোকমান জানিয়েছেন, আগামী নভেম্বর মাসে আবার গভীর সমুদ্রে বড় জাহাজ থেকে পাইপের মাধ্যমে তেল খালাস শুরু হবে। সমুদ্রের তলদেশ দিয়ে ৪ নভেম্বর অপরিশোধিত জ্বালানি তেল (ক্রুড অয়েল) এবং ৯ নভেম্বর ডিজেল খালাস শুরু করবে। তবে ডিজেল কোন দেশ থেকে বা কোন জাহাজে কী পরিমাণ আসবে, এখনো চূড়ান্ত হয়নি।


গত জুলাইয়ে পরীক্ষামূলক খালাসের সময় ত্রুটি দেখা দেওয়ার বিষয়ে লোকমান বলেন, দুর্ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্ত অংশ ঠিকাদার নিজ খরচে মেরামত করে দেবে।


প্রকল্পটি পুরোদমে চালু হলে কক্সবাজারের মহেশখালী দ্বীপের পশ্চিম পাশে স্থাপিত সিঙ্গেল পয়েন্ট মুরিং বয়ায় এসে ভিড়বে তেলবাহী মাদার ট্যাংকারগুলো। জাহাজ থেকে ক্রুড অয়েল ও ফিনিশ প্রোডাক্ট পাম্প করা হবে, যা সরাসরি সিঙ্গেল পয়েন্ট মুরিং বয়া হয়ে দুটি পৃথক পাইপলাইনের মাধ্যমে মহেশখালীর ছয়টি স্টোরেজ ট্যাংকে জমা হবে। সেখান থেকে পাম্পিংয়ের মাধ্যমে যাবে চট্টগ্রামের পতেঙ্গায় ইস্টার্ন রিফাইনারিতে।


ইআরএল কর্তৃপক্ষ জানায়, প্রকল্পটি চালু হলে তেল পরিবহনে সময় লাগবে মাত্র ৪৮ ঘণ্টা। এতে বছরে সাশ্রয় হবে কমপক্ষে ৮০০ কোটি টাকা। একই সঙ্গে কমবে ‘সিস্টেম লস’। পাশাপাশি বাড়বে তেল মজুতের সক্ষমতা। প্রকল্পটির আওতায় ২২০ কিলোমিটার পাইপলাইনের পাশাপাশি মহেশখালীর কালারমার ছড়া এলাকায় তৈরি করা হয়েছে ছয়টি স্টোরেজ ট্যাংক। এগুলোর ধারণক্ষমতা ১৫০ হাজার ঘনমিটার।অপরিশোধিত তেলের জন্য তৈরি করা বাকি তিনটি স্টোরেজ ট্যাংকের ধারণ ক্ষমতা ৯০ হাজার ঘনমিটার।


এদিকে তেল পরিবহন খরচ সাশ্রয়ের কথা বলা হলেও এরই মধ্যে প্রকল্প বাস্তবায়নের পেছনেই খরচ বেড়েছে চার দফায়। ২০১৫ সালে প্রকল্পের কাজ শুরুর সময় মোট বরাদ্দ ছিল ৪ হাজার ৯৩৬ কোটি টাকা। তখন প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হওয়ার কথা ছিল ২০১৮ সালে।এরপর আরও তিন দফায় মেয়াদের পাশাপাশি ব্যয় বাড়ানো হয়েছে দ্বিগুণ।


ইআরএল সূত্র জানায়, বাংলাদেশ ও চীন জিটুজি ভিত্তিতে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে। জার্মানির আইএলএফ কনসালটিং ইঞ্জিনিয়ার্স নামের প্রতিষ্ঠান ইপিসি পরামর্শক হিসেবে কাজ করছে। প্রস্তাবিত ডিপিপি অনুসারে, প্রকল্পের ঠিকাদার চায়না পেট্রোলিয়াম পাইপলাইন ইঞ্জিনিয়ারিং কোম্পানি লিমিটেড (সিপিইসি) ও ইপিসি বিভিন্ন নির্মাণকাজ যুক্ত করায় ব্যয় বেড়ে গেছে।


এই অবস্থায় ঘুরেফিরে প্রকল্পটির সুবিধার কথাই বেশি করে সামনে আনছেন ইআরএলের কর্মকর্তারা। নাম প্রকাশ না করার শর্তে কয়েকজন কর্মকর্তা জানান, প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে দেশের ক্রুড অয়েল পরিশোধন সক্ষমতা বাড়বে ৩৩ শতাংশ। বর্তমানে দেশের ক্রুড অয়েল পরিশোধন সক্ষমতা বছরে ১৫ লাখ টন, যা ৪৫ লাখ টনে উন্নীত হবে। এ ছাড়া বর্তমানে লাইটার জাহাজ থেকে ১ লাখ টন তেল খালাসে ১০-১১ দিন লেগে যায়। পাইপলাইন চালু হলে তাতে দু-তিন দিন লাগবে। তখন লাইটার জাহাজের প্রয়োজন হবে না।


শেয়ার করুন