২১ নভেম্বর ২০২৪, বৃহস্পতিবার, ০৭:২৬:১৯ অপরাহ্ন
ঘটা করে চালু ই-টিকিটিং ১০ মাসেই অকার্যকর
  • আপডেট করা হয়েছে : ২০-০৮-২০২৩
ঘটা করে চালু ই-টিকিটিং ১০ মাসেই অকার্যকর

রাজধানীর গণপরিবহনে ভাড়া নিয়ে বিশৃঙ্খলা দূর করতে গত বছরের সেপ্টেম্বরে বেশ ঘটা করে ই-টিকিটিং পদ্ধতি চালু করা হয়েছিল। কিন্তু এক বছর না পেরোতেই মুখ থুবড়ে পড়েছে এই পদ্ধতি। সব বাসেই আগের মতো ভাড়া কাটা হচ্ছে। বিষয়টি নিয়ে নির্বিকার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ)।


গত বছরের ৩১ আগস্ট বনানীতে বিআরটিএ কার্যালয়ে বাস-মিনিবাসের ভাড়া পুনর্নির্ধারণসংক্রান্ত সভা শেষে ই-টিকিটিং ব্যবস্থা চালুর ঘোষণা দিয়েছিলেন ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক খন্দকার এনায়েত উল্ল্যাহ। এরপর বাসমালিকদের সঙ্গে আলোচনা করে গত বছরের ২২ সেপ্টেম্বর পরীক্ষামূলকভাবে চারটি পরিবহন কোম্পানিতে ই-টিকিটিং চালু হয়। বর্তমানে কাগজে-কলমে মোট ৫৯ কোম্পানির ৩ হাজার ৩০৭ বাসে ই-টিকিটিং চালু রয়েছে। কিন্তু বাস্তবে একটিতেও নেই।


ই-টিকিটিং চালুর সময় খন্দকার এনায়েত উল্ল্যাহ বলেছিলেন, ঢাকা শহর ও শহরতলি রুটের বাসে অতিরিক্ত ভাড়া আদায়সহ বিভিন্ন অনিয়ম দূর করার জন্য ই-টিকিটিং পদ্ধতি চালু করা হয়েছে। এ বিষয়ে কথা বলতে গত শুক্রবার তাঁকে ফোন দিলে মিটিংয়ে আছেন জানিয়ে ফোন কেটে দেন তিনি।


দেশে সড়ক পরিবহন খাতের নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিআরটিএ। ৭ আগস্ট রাজধানীর বনানীতে বিআরটিএর চেয়ারম্যানের কার্যালয়ে গিয়ে কথা হয় সংস্থাটির চেয়ারম্যান নুর মোহাম্মদ মজুমদারের সঙ্গে। নতুন ই-টিকিটিং সার্ভিস কাজে আসছে না—এমনটা শোনার পর তিনি সঙ্গে সঙ্গে ম্যাজিস্ট্রেটকে কল দিতে গেলেন। উদ্যোগ নেন ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনার। সেই সঙ্গে নিজেদের অসহায়ত্বের কথাও প্রকাশ করেন নুর মোহাম্মদ মজুমদার। আজকের পত্রিকাকে তিনি বলেন, ‘আমরা সব সময় এই বিষয়গুলো মনিটরিং করতে পারি না। ঢাকায় আমাদের যে লোকবল আছে, তা দিয়ে এটি করা সম্ভব হয়ে ওঠে না। যদি কেউ অভিযোগ করেন তবে সে বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’ 

কীভাবে অভিযোগ করবে, তা জানতে চাইলে নুর মোহাম্মদ মজুমদার বলেন, কোনো যাত্রী যদি গাড়ির নম্বরপ্লেট বা নাম বা কোনো পরিচয় দিয়ে বিআরটিএকে জানান, তাহলে সেই গাড়ি ও মালিকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।


রাজধানী ঢাকার গণপরিবহনে প্রধান সমস্যা হলো অতিরিক্ত ভাড়া আদায় ও ফিটনেসবিহীন গাড়ি। অতিরিক্ত ভাড়া আদায় রোধে ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতি রাজধানীর সব রুটে তিন ধাপে চালু করে ই-টিকিটিং সার্ভিস।


পরিবহনসংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, ঢাকা মহানগরী ও আশপাশের এলাকায় ৯৭টি কোম্পানির ৫ হাজার ৬৫০টি বাস চলে। ২০২২ সালের ১৩ নভেম্বর ৩০টি কোম্পানির ১ হাজার ৬৪৩টি বাস দিয়ে শুরু হয় ই-টিকিটিং সার্ভিস। এরপর চলতি বছরের ১০ জানুয়ারি দ্বিতীয় পর্বে ১৮টি কোম্পানির ৭১৭টি বাসে ই-টিকিটিং চালু করা হয়। সবশেষ ১ মার্চ তৃতীয় পর্যায়ে ১৩টি পরিবহনের ৯৪৭টি বাসে ই-টিকিটিং চালু হয়। 

কিন্তু গত বুধ ও বৃহস্পতিবার ই-টিকিটিং চালু হওয়া কয়েকটি বাসে উঠে দেখা যায়, তরঙ্গ পরিবহন, ভিক্টর পরিবহন, রাইদা পরিবহন, মিডলাইন, মালঞ্চ, বিকাশ, ভিআইপি, মিরপুর মেট্রো—কোনো বাসেই ই-টিকিটিং চলছে না। কয়েকটি বাসে এখনো আগের মতো ওয়েবিল পদ্ধতিতে ভাড়া নিতে দেখা গেছে। অর্থাৎ কাগজে-কলমে ই-টিকিটিং ব্যবস্থা থাকলেও বাস্তব চিত্র পুরোপুরি ভিন্ন।


এ বিষয়ে সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির সাংগঠনিক সম্পাদক মাহবুবুর রহমান বলেন, রাজধানীর বাসগুলোতে ই-টিকিটিং চালুর জন্য তাঁরা চেষ্টা চালাচ্ছেন। যেভাবেই হোক কার্যকর করা হবে। তাঁরা মনিটরিং করছেন।


জানা গেছে, ই-টিকিটিং ব্যবস্থা অকার্যকর হয়ে পড়ার পেছনে বড় কারণ শ্রমিকদের মজুরি না বাড়ানো। যাত্রী কল্যাণ সমিতির মহাসচিব মোজাম্মেল হক বলেন, ই-টিকিটিং ব্যর্থ হয়েছে শ্রমঘণ্টা হিসেবে শ্রমিকদের বেতন না দিয়ে শ্রমিকদের কাছে দৈনিক চুক্তিতে বাস দিচ্ছেন মালিকেরা। ফলে মালিক নির্দিষ্ট টাকা বুঝে নিচ্ছেন বাসের হেলপার-ড্রাইভারের কাছ থেকে।


শেয়ার করুন