২৮ এপ্রিল ২০২৪, রবিবার, ০১:০২:০৪ অপরাহ্ন
দুর্নীতি ভোগান্তি কমাতে অটো টোল
  • আপডেট করা হয়েছে : ২২-০৮-২০২৩
দুর্নীতি ভোগান্তি কমাতে অটো টোল

উন্নত বিশ্বের মতো গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা পদ্মা সেতু, কর্ণফুলী টানেল, ঢাকা-মাওয়া-ভাঙ্গা এক্সপ্রেসওয়ে, যমুনা সেতুসহ এ-জাতীয় সব স্থাপনায় অটো টোল সিস্টেম চালু করতে পারলে দেশের যোগাযোগ খাতে আসবে অভূতপূর্ব পরিবর্তন। এতে করে রাজস্ব আদায় বাড়বে। অন্যদিকে লম্বা সময় দাঁড়িয়ে থাকার প্রয়োজন হবে না টোলপ্লাজায়। এ খাতের অনিয়ম-দুর্নীতিসহ মধ্যস্বত্বভোগীদের দৌরাত্ম্যও কমে আসবে, যা দেশের অর্থনীতিতে ইতিবাচক পরিবর্তন আনবে বলে মনে করেন বিশ্লেষকরা। তারা মনে করেন, সরকার প্রতিবছর সড়ক, মহাসড়ক, সেতু থেকে যে পরিমাণ রাজস্ব আয় করে তা প্রায় দ্বিগুণ করা সম্ভব অটো টোল সিস্টেম চালু করতে পারলে। অনেক দেশে এটা ইজি পাস বা ই-জেড পাস নামেও পরিচিত। এটা মূলত একটা ইলেকট্রনিক টোল কালেকশন সিস্টেম, যা দক্ষিণ আমেরিকার দেশগুলোতে প্রচলিত রয়েছে। আবার কোথাও কোথাও এটা কুইস পাস নামেও পরিচিত।


সূত্র জানায়, ইউরোপ-আমেরিকার প্রায় সব দেশেই এই পদ্ধতির প্রচলন রয়েছে। এমনকি অটো টোল প্রক্রিয়া এশিয়ার দেশ জাপান, কোরিয়া, সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়াতেও রয়েছে। ফলে সেসব দেশের সড়ক, মহাসড়ক, সেতু অপেক্ষাকৃত অনেক বেশি নিরাপদ এবং যান চলাচল প্রক্রিয়াও সহজ।


জানা গেছে, বর্তমানে ম্যানুয়াল পদ্ধতিতে টোল আদায়ের কারণে পদ্মা সেতু, যমুনা সেতু, ঢাকা-মাওয়া এক্সপ্রেসওয়ে, ঢাকা-চট্টগ্রাম হাইওয়ে, ঢাকা-সিলেট হাইওয়েসহ এ-জাতীয় সব স্থাপনায় গাড়ির লাইন পড়ে যায়। এতে করে একদিকে অতিরিক্ত সময় নষ্ট হয়, অন্যদিকে দীর্ঘ সময় দাঁড়িয়ে থাকতে হয় টোলপ্লাজায়। আবার টোল আদায়ে অনিয়ম-দুর্নীতি সংঘটিত হওয়ার অভিযোগও রয়েছে। বিশেষ করে যেসব সড়কে কাগুজে রসিদ দিয়ে টোল আদায় করা হয় সেসব জায়গার টোলের অর্থ আত্মসাতেরও অভিযোগ রয়েছে। আবার টোল আদায়কারী বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান, যারা মধ্যস্বত্বভোগীর কাজ করে, তারাও অনিয়ম-দুর্নীতি করে বলে বিভিন্ন সময় অভিযোগ এসেছে। এ জন্য এ খাতকে এক ছাতার নিচে আনতে এবং দুর্নীতিমুক্ত ও প্রযুক্তিনির্ভর করতে অটোটোল পদ্ধতি চালু করা হচ্ছে।


 


সব টোল ব্যবস্থাপনা একই ছাতার নিচে আসবে


সেতু বিভাগের সচিব


মনজুর হোসেন


সেতু বিভাগ সূত্র জানায়, ইতোমধ্যে পদ্মা সেতুতে অটোটোল সিস্টেম ট্রায়াল শুরু হয়েছে। এরপর এই পদ্ধতি চালু হবে কর্ণফুলী টানেলে। তারপর পর্যায়ক্রমে চালু করা হবে সব স্থাপনায়। এ বিষয়ে জানতে চাইলে সেতু বিভাগের সচিব মনজুর হোসেন বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘আমরা টোল আদায়ের জন্য অত্যাধুনিক পদ্ধতি চালুর উদ্যোগ নিয়েছি। কিন্তু আমাদের সিস্টেমগুলো পুরনো হওয়ায় একটু সময় লাগছে। পদ্মা সেতুতে ট্রায়াল বেসিসে স্বয়ংক্রিয় পদ্ধতি চালুও হয়েছে। তবে এখন বন্ধ আছে। এটার একটা আইটি অডিটের প্রয়োজন হয়। সে প্রক্রিয়া চলমান। অডিট শেষ হলে দ্রুত পুরোদমে চালু হবে অটোটোল সিস্টেম। এতে করে সেতু ব্যবহারকারীদের সময় বাঁচবে। সরকারের রাজস্ব আদায় বাড়বে।’ এতে টোল প্রক্রিয়ার হয়রানি ও অনিয়ম বন্ধ হবে বলেও তিনি আশা প্রকাশ করেন।


সূত্র জানায়, পার হতে দেশের অন্যান্য বড় সেতুর মতো পদ্মা সেতুতেও টোল দিতে হবে। এরই মধ্যে সরকার পদ্মা সেতুর টোল চূড়ান্ত করে প্রজ্ঞাপন জারি করেছে। এই সেতুর টোল আদায়ে থাকবে আধুনিক স্বয়ংক্রিয় ব্যবস্থা। পদ্মা সেতুতে স্বয়ংক্রিয়ভাবে টোল দিতে চাইলে যানবাহনের মালিকদের একটি বিশেষ পদ্ধতি মানতে হবে। এটা হলো রেডিও ফ্রিকোয়েন্সি আইডেনটিফিকেশন (আরএফআইডি)। এটি থাকলে স্বয়ংক্রিয় পদ্ধতিতে ফাস্ট ট্র্যাকের মাধ্যমে কয়েক সেকেন্ডের মধ্যে টোল আদায় করা যাবে। পদ্মা সেতুর টোল আদায় করবে কোরিয়ান এক্সপ্রেসওয়ে করপোরেশন। তারা সেতুর দুই প্রান্তে মোট ১৪টি ইলেকট্রনিক টোল কালেকশন (ইটিসি) বুথ বসিয়েছে। প্রাথমিকভাবে সেতু চালু হলে দুই প্রান্তে একটি করে মোট দুটিতে চালু থাকবে ইটিসি। আর আটটি বুথে টোলপ্লাজায় টোল আদায় করা হবে ম্যানুয়াল পদ্ধতিতে। বাকি চারটি বুথ চালু করা হবে সেতু চালুর পর।


স্বয়ংক্রিয় এ ব্যবস্থা সম্পর্কে জানা গেছে, রেডিও ফ্রিকোয়েন্সি আইডেনটিফিকেশন (আরএফআইডি) সাদা রঙের একটি কার্ড, যা যানবাহনের সামনের অংশের ড্যাশবোর্ডে থাকবে। আরএফআইডি নম্বরটি সংযুক্ত থাকবে ব্যাংক অ্যাকাউন্টের সঙ্গে। অথবা এই আইডিতে অগ্রিম টাকা রিচার্জ করতে হবে। এটি সম্পূর্ণ প্রিপেইড কার্ড। টোলপ্লাজায় থাকবে একটি যন্ত্র। এতে থাকবে কার্ড রিডার। যানবাহন যতবার পদ্মা সেতুতে উঠে ইটিসি বুথ দিয়ে যাবে, ততবার নির্দিষ্ট পরিমাণ টোলের টাকা স্বয়ংক্রিয়ভাবে কেটে নেওয়া হবে। টোল আদায়ের পর গাড়ির মালিকের মোবাইল ফোনে এসএমএস করে জানিয়ে দেওয়া হবে কত টাকা কাটা হলো। এ ছাড়া আরএফআইডি ডিভাইসটি মূলত কাজ করে বেতার তরঙ্গ ব্যবহার করে। এটা অনেকটা পণ্যের বারকোড দেখার প্রযুক্তির মতো। তবে পার্থক্য হলো, আরএফআইডি ব্যবহার করে কিছুটা দূরের ট্যাগ বা কোডও পড়া যায়। এতে টোলপ্লাজায় যানবাহনকে অপেক্ষা করতে হবে না।


এদিকে এই রেডিও ফ্রিকোয়েন্সি আইডেনটিফিকেশন (আরএফআইডি) পদ্ধতি চালু করা হবে কর্ণফুলী টানেলে। এই টানেল চালুর প্রথম দিন থেকেই অটোটোল পদ্ধতি চালুর জোর প্রচেষ্টা চালাচ্ছে সেতু বিভাগ। ধারাবাহিকভাবে ঢাকা-চট্টগ্রাম, ঢাকা-সিলেট হাইওয়ের যমুনা সেতু ও ঢাকা-মাওয়া এক্সপ্রেসওয়েতেও আরএফআইডি মেশিন বসানো হবে বলে জানা গেছে।


শেয়ার করুন