ইতালির উত্তরের এলাকাগুলোয় মাছ ধরায় নিয়োজিত সম্প্রদায়গুলি নীল কাঁকড়ার আগ্রাসনের বিরুদ্ধে লড়াই করছে। এই নীল কাঁকড়ারা গোটা অঞ্চলটি অর্থনীতিকে হুমকির মুখে ফেলছে বলে জানিয়েছে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ।
ব্লু ক্র্যাব বা নীল কাঁকড়াদের মূল নিবাস উত্তর এবং দক্ষিণ আমেরিকার উপকূল। কিন্তু গত বছর ইতালির বেশ কয়েকটি উপহ্রদ বা ল্যাগুন এলাকায় এরা ছড়িয়ে পড়েছে। এখানকার জলে বিচরণ করা ঝিনুকসহ বিভিন্ন শেলফিস শিকার করছে এই কাঁকড়ারা। বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় ক্ল্যাম অর্থাৎ খাবার উপযোগী ঝিনুক জাতীয় প্রাণী উৎপাদনকারী হিসেবে দেশটির অবস্থান হুমকির মুখে পড়েছে এতে। এসব তথ্য জানা গেছে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম গার্ডিয়ানের এক প্রতিবেদনে।
‘আমাদের রোমের লোকদের বোঝাতে হবে এই বিপর্যয় হাজার হাজার পরিবারের জীবন এবং ব্যবসাকে ঝুঁকির মধ্যে ফেলছে।’ সোমবার এক সম্মেলনের পর বলেন এমিলিয়া-রোমাগনা অঞ্চলের গভর্নর স্টেফানো বোনাচ্চিনি, ‘এই আগ্রাসন এমন একটি অর্থনীতিকে ধ্বংসের মুখে ঠেলে দিচ্ছে যা শুধুমাত্র একটি সম্প্রদায়ের জন্য জীবিকার উৎস নয়, বরং এই অঞ্চলের অন্যান্য পরিচয়বাহী পণ্য যেমন পারমা হ্যাম বা পারমিগিয়ানোসহ ইতালীয় এবং ইউরোপীয় উৎকর্ষের প্রতীক।’
জেলেরা স্কারদোভারির ল্যাগুনে ক্ল্যাম অর্থাৎ খাবার উপযোগী ঝিনুক জাতীয় প্রাণী সংগ্রহ করছেন। এই হ্রদগুলোয় আগ্রাসী নীল কাঁকড়ারা ছড়িয়ে পড়ে ক্ল্যামদের জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে
এদিকে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকাগুলোর জেলে সম্প্রদায়কে এই নীল কাঁকড়াদের সংখ্যা নিয়ন্ত্রণে রাখতে যতটা সম্ভব এদের ধরার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। তবে পো নদীর ব-দ্বীপ অঞ্চলে এ ধরনের প্রচেষ্টা অকার্যকর বলে প্রমাণিত হয়েছে।
এ বছর ইতিমধ্যে ভেনেতো অঞ্চলে ৩২৬ টন এমন আগ্রাসী প্রজাতির নীল কাঁকড়া ধরা পড়েছে। এর মধ্যে আগস্ট মাসেই স্কারদোভারিতে ৮৪ টন এবং পিলায় ২৮ টন নীল কাঁকড়া ধরা হয়েছে।
মৎস্যজীবীদের সংগঠন ফেদাগ্রিপেসকা-কনফকোঅপারেটিভ বলছে ইতালিতে ১০ কোটি ইউরোর অর্থনৈতিক ক্ষতি করেছে নীল কাঁকড়ারা। শুধু তাই নয় পো ব-দ্বীপ অঞ্চলের শিশু ক্ল্যামদের শতকরা ৯০ শতাংশের মতো এরা খেয়ে ফেলেছে। এতে ভবিষ্যৎ উৎপাদনে বড় প্রভাব পড়বে।
ভেনেতোর গভর্নর লুকা জাইয়া গত সপ্তাহে একটি সংবাদ সম্মেলনের সময় সাংবাদিকদের দুটি জীবন্ত নীল কাঁকড়া দেখিয়ে বলেন, ‘এর সবকিছু ভেঙে দিচ্ছে ও বিপর্যয়ের সৃষ্টি করছে।’
নীল কাঁকড়া তার প্রাকৃতিক আবাসস্থলে হাঙর ও রে মাছের মতো প্রাকৃতিক শিকারিদের জন্য একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ খাদ্য উৎস। কিন্তু ইতালির উত্তরে একে শিকার করার মতো কোনো প্রাণী না থাকায় এদের সংখ্যা প্রচুর পরিমাণে বাড়ছে এবং স্থানীয় জীববৈচিত্র্যকে হুমকিতে ফেলছে।
মৎস্য খামারের জন্য কাজ করা প্রতিষ্ঠান কলদিরেত্তি এই কাঁকড়াদের উপস্থিতিকে উল্লেখ করেছে এমন এক ‘প্রাকৃতিক বিপর্যয়’ হিসেবে যা পো ব-দ্বীপে এখনো টিকে থাকা ৩০০ পারিবারিক খামারকে হুমকিতে ফেলে দিয়েছে। এ বিষয়ে সরকারের সাহায্য চেয়েছে প্রতিষ্ঠানটি।
তবে এ ক্ষেত্রে ইতালিয় সরকার কিছুটা দ্বৈত নীতি অনুসরণ করছে। যেমন কাঁকড়াদের সংখ্যা নিয়ন্ত্রণে জেলেদের বিভিন্ন সমবায়কে ২৯ লাখ ইউরো বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। কিন্তু একই সঙ্গে এ ধরনের কাঁকড়াকে খাবারের মেনুতে রাখার জন্য ইতালির মানুষদের উৎসাহিত করা হচ্ছে। এর মধ্যে ব্যক্তি পর্যায়ে ও বিভিন্ন সুপারমার্কেটে প্রতি কিলোগ্রাম কাঁকড়া ৮ ইউরোতে বিক্রি করছেন জেলেরা।
ইতালির প্রধানমন্ত্রী জর্জিয়া মেলোনি সম্প্রতি নিজের এবং বোন জামাই কৃষিমন্ত্রী ফ্রান্সেসকো ললোব্রিজিদার একটি ছবি পোস্ট করেন, যেখানে সাপ্তাহিক ছুটির দিনে পুগলিয়ায় নিজেদের গ্রীষ্মকালীন ফার্ম হাউসে নীল কাঁকড়া খেতে দেখা যায় তাঁদের।