উত্তর সাগরে বিশ্বের বৃহত্তম ভাসমান বায়ু বিদ্যুৎ প্রকল্প উদ্বোধন করেছে নরওয়ে। বুধবার নরওয়ের ক্রাউন প্রিন্স হাকোন এবং প্রধানমন্ত্রী জোনাস গার স্টোর প্রকল্পটি উদ্বোধন করেছেন।
উত্তর সাগরের উপকূল থেকে ১৪০ কিলোমিটার দূরে একটি সমুদ্রের তলদেশে নোঙ্গর করা একটি বিশাল মঞ্চ বা ফিল্ডের নির্দিষ্ট দূরত্ব অনুসারে স্থাপন করা হয়েছে ১১ টি উইন্ডমিল।
প্রতিটি উইন্ডমিলের সঙ্গে যুক্ত রয়েছে একটি করে টারবাইন এবং এক একটি টারবাইন সর্বোচ্চ ৮ দশমিক ৬ মেগাওয়াট পর্যন্ত বিদ্যুৎ উৎপাদনে সক্ষম।
আশা করা হচ্ছে নরওয়ে এবং এই প্রকল্পের শরিক অন্য চারটি দেশের মোট বিদ্যুৎ চাহিদার ৩৫ শতাংশ আসবে এই ভাসমান বায়ুবিদ্যুৎ প্রকল্প থেকে।
সাগরের তলদেশে যেখান থেকে ফিল্ডটি শুরু হয়েছে, সেখানকার গভীরতা ৮৫৩ ফুট, আর যেখানে গিয়ে সেটি শেষ হয়েছে, সেখানকার গভীরতা ৯৮৪ ফুট। অর্থাৎ ১৩০ ফুট লম্বা এই ফিল্ডটির মাধ্যমে সগারের বিভিন্ন গভীর অবস্থানে স্থাপন করা হয়েছে উইন্ডমিল ও টারবাইনগুলো।
বিশ্বের অন্যান্য দেশের সমুদ্র উপকূলে যেসব উইন্ডমিল-টারবাইন রয়েছে, সেগুলো সমুদ্রের তলদেশের সঙ্গে সংযুক্ত। ফলে ওই টারবাইনগুলো যেখানে স্থাপন করা হয়েছে, সেখানেই স্থির থাকে।
কিন্তু নরওয়ের এই বিদ্যুৎ প্রকল্পের ফিল্ডটি ভাসমান এবং পানির নিচে নোঙ্গর করা। ফলে অপেক্ষাকৃত দূর ও গভীর সমুদ্রের জোর বাতাসও ধরতে সক্ষম হবে টারবাইনগুলো, যার ইতিবাচক প্রভাব পড়বে দৈনন্দিন বিদ্যুৎ উৎপাদনে।
বুধবারের উদ্বোধনী অনুষ্ঠান শেষে নরওয়ের সংবাদমাধ্যম এনটিবিকে দেশটির প্রধানমন্ত্রী জোনাস গার স্টোর বলেন, ‘নরওয়েসহ বিভিন্ন ইউরোপীয় দেশ এখন বিদ্যুৎ ঘাটতিতে ভুগছে। ইউক্রেনের যুদ্ধ এই পরিস্থিতির জন্য দায়ী।
তাছাড়া আমরা মনে করি, কার্বন নিঃস্বরণ শূন্যের কোঠায় নামিয়ে আনার যে লক্ষ্য ইউরোপ নিয়েছে, সেটি অর্জন করতে হলে নবায়নযোগ্য জ্বালানির ওপর নির্ভরতা বাড়ানো ছাড়া অন্য কোনো বিকল্প নেই।’
গত বছরের শেষ থেকে পরীক্ষামূলকভাবে উৎপাদন শুরু করেছিল প্রকল্পটি। বুধবার সেটির আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন হলো। প্রকল্পটি নির্মাণে ব্যায় হয়েছে ৬ কোটি ৯১ লাখ ডলার।
‘হ্যাঁ, এই প্রকল্প নির্মাণে অনেক অর্থ খরচ হয়েছে আমাদের, কিন্তু কাউকে না কাউকে তো শুরু করতেই হতো…তাই আমরাই প্রথম উদ্যোগ নিলাম,’ এনটিবিকে বলেন নরওয়ের প্রধানমন্ত্রী।
ভাসমান এই বায়ুবিদ্যুৎ প্রকল্পটির প্রধান মালিক নরওয়ের রাষ্ট্রায়ত্ত্ব জ্বালানি উত্তোলন ও সরবরাহ কোম্পানি ইকুইনর অ্যান্ড পেটেরো।
এছাড়া অন্যান্য অংশীদাররা হলো অস্ট্রীয় কোম্পানি ওএমভি, ইতালীয় কোম্পানি এনি ডাব্বড ভার এনার্জি, জার্মান কোম্পানি উইন্টারশিল্ড ডিইএ এবং জাপানি কোম্পানি ইনপেক্স।