রাষ্ট্রায়ত্ত অগ্রণী ব্যাংকে অর্থ তছরুপ করা হয়েছে ভল্ট ও লকারের নিরাপত্তাবলয় ভেঙে। এমন গুরুতর অপরাধের দায়ে চাকরি থেকে বরখাস্ত করার বিধান থাকলেও ব্যাংক কর্তৃপক্ষ দায়সারা শাস্তি হিসেবে অপরাধীদের কেবল তিরস্কার করেছে। পাশাপাশি অভিযুক্ত দুজনকে পদোন্নতি ও কাঙ্ক্ষিত পদায়নও দেওয়া হয়েছে। তাঁদের একজন হলেন সিনিয়র প্রিন্সপাল অফিসার (এসপিও) মো. হান্নান পাটওয়ারী।
তাঁকে কুমিল্লার দাউদকান্দি শাখার সহকারী মহাব্যবস্থাপক (এজিএম) হিসেবে পদোন্নতি দিয়ে শাখা ব্যবস্থাপক হিসেবে পদায়ন করা হয়েছে। পাশাপাশি ব্যাংকটির নিরীক্ষা আপত্তি সত্ত্বেও একজন ডিজিএমকে জিএম হিসেবে পদোন্নতি দেওয়ার পর এখন ডিএমডি বানানোর তোড়জোড় চলছে বলে জানা গেছে।
অগ্রণী ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদের চেয়ারম্যান ড. জায়েদ বখ্ত অবশ্য আজকের পত্রিকাকে বলেন, যোগ্যতা অনুযায়ী ডিএমডি পদে পদোন্নতির তালিকা প্রস্তুত করা হয়। অপরাধীর দায়সারা শাস্তির সুযোগ নেই। অপরাধের ধরন অনুযায়ী শাস্তি দেয় কর্তৃপক্ষ।
বাংলাদেশ ব্যাংকের হালনাগাদ তথ্য অনুযায়ী, অগ্রণী ব্যাংকের এজিএম হান্নান পাটওয়ারী ব্যাংকটির প্রধান শাখার নিয়ন্ত্রণাধীন শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে বুথে এসপিও এবং ইনচার্জ ছিলেন। তিনি ২০১৭ সালের ২১ মার্চ থেকে ২০২০ সালের ১৪ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ৩ বছর ৫ মাস ২৩ দিন কর্মরত থাকাকালে অনিয়ম করেন। যদিও এক কর্মস্থলে ৩ বছরের বেশি থাকার সুযোগ নেই। ওই সময় তিনি ৪-৫ লাখ টাকা খরচের স্থলে ভুয়া বিল বানিয়ে ৬৫ লাখ টাকা খরচ দেখান। কিছু বড় অঙ্কের বিলে তারিখ ও সই নেই। পাশাপাশি বুথের ইনচার্জ থাকাকালে দেশি লোকজনকে বিদেশি দেখিয়ে ডলারসহ বৈদেশিক মুদ্রা পাচার করেন। অপরাধ ঢাকতে বৈদেশিক মুদ্রা লেনদেনের রেকর্ড কম্পিউটারের সফটওয়্যার থেকে মুছে ফেলেন। তিনি ব্যাংকের বুথের ভল্ট ও লকার থেকে ৮ লাখ ৫৬ হাজার ৫৭৫ টাকা তছরুপ করেছেন। পরে তিনি টাকা সমন্বয় করে দায় থেকে মুক্তি পান। শুধু তাই নয়, তাঁকে এজিএম হিসেবে পদোন্নতি দিয়ে কুমিল্লার দাউদকান্দি শাখার প্রধান করা হয়েছে।
অগ্রণী ব্যাংকের তদন্ত প্রতিবেদন অনুযায়ী, হান্নান পাটওয়ারীর বিমানবন্দরে অবস্থিত ব্যাংকটির বুথে এসপিও হিসেবে তিন বছরের বেশি সময় কর্মরত থাকা, স্বাক্ষর ও তারিখবিহীন ভুয়া বিল-ভাউচার এবং বৈদেশিক মুদ্রার ক্রয়-বিক্রয়ের লেনদেনের রেকর্ড মুছে ফেলার প্রমাণ পেয়েছে তদন্ত দল।
অপরাধের বিষয়ে জানতে চাইলে মো. হান্নান পাটওয়ারী আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘অগ্রণী ব্যাংকের এয়ারপোর্ট বুথে সংঘটিত অনিয়মে সম্পৃক্ততা অস্বীকার করছি না। তবে ব্যাংক কর্তৃপক্ষ অপরাধকে বড় করে না দেখায় বড় শাস্তি হয়নি। পারফরমেন্স বিবেচনায় পদোন্নতি পেয়েছি।’
অগ্রণী ব্যাংকের কর্মচারী বিধিমালায় ভল্ট ও লকারের অর্থ আত্মসাতের দায়ে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের চাকরিচ্যুত করার বিধান আছে। গত জুলাইয়ে অগ্রণী ব্যাংকের কামরাঙ্গীরচর শাখার এসপিও মো. নূর-এ-আলম মুক্তাদির ও প্রিন্সিপাল অফিসার মো. হাবিব সরকার মিলে ভল্ট থেকে ৪ লাখ টাকা আত্মসাৎ করেন। সেই টাকা পরে আদায় করা হয়েছে।
অগ্রণী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. মুরশেদুল কবীর বলেন, ‘জাল-জালিয়াতি বা অর্থ আত্মসাতের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতি ঘোষণা করেছে অগ্রণী ব্যাংক। আমরা অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিয়েছি।’