বরগুনার বামনা উপজেলায় সরকারের আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘর পেলেও সেখানে বসবাস করছেন না অনেক মালিক। এ সুযোগে তালাবদ্ধ এসব ঘরের বারান্দায় গরু-ছাগল পালন করছেন স্থানীয় বাসিন্দারা। তালাবদ্ধ এসব ঘর নতুন করে অন্য ভূমিহীনদের নামে বরাদ্দ দেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা।
বামনা উপজেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, জেলার সবচেয়ে ছোট এই উপজেলায় ভূমি ও গৃহহীনের সংখ্যা ২৫৯। প্রত্যেককে প্রকল্পের আওতায় প্রধানমন্ত্রীর উপহারের ঘর দেওয়া হয়। গত ২২ মার্চ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে এই উপজেলাকে গৃহহীনমুক্ত ঘোষণা করেন।
বামনা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয়ের তথ্যমতে, প্রকল্পের আওতায় উপজেলার বুকাবুনিয়া ইউনিয়নের লক্ষ্মীপুরা আশ্রয়ণ প্রকল্পে ৪১টি ঘর গৃহহীনদের কাছে হস্তান্তর করা হয়।
সম্প্রতি লক্ষ্মীপুরা আশ্রয়ণ প্রকল্পে দেখা যায়, ৪১টি ঘরের ২৫টিতে সুবিধাভোগীরা বসবাস করছেন। ১৬টি ঘর তালাবদ্ধ অবস্থায় পড়ে আছে। তালাবদ্ধ ঘরগুলোর মালিক অনেকেই এখানে বসবাস করছেন না বলে জানান প্রকল্পের বাসিন্দারা।
স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) সদস্য মোস্তাফিজুর রহমান মাসুম বলেন, রুবি বেগম নামের একজন বরাদ্দ পাওয়ার পর এক দিনও ওই ঘরে যাননি। এক বছর খালি থাকার পর ওই ঘরে স্থানীয় বাসিন্দারা গরু-ছাগল লালনপালন করছেন। এ ছাড়া ওই এলাকার জহির নামের এক বাসিন্দা ঘর পেয়েছেন। কিন্তু তাঁর বসতভিটা ও ফসলি জমি থাকায় তিনিও সেখানে বসবাস করছেন না। এমনই আরেকজন মালেক মিস্ত্রি। জমি এবং ঘর থাকতেও তিনি প্রকল্পের ঘর নিয়েছেন। তাঁর ঘরটিও তালাবদ্ধ পড়ে আছে। কয়েকজন ঘর পেলেও কর্মসংস্থানের তাগিদে চলে গেছে বিভিন্ন শহরে।
মোস্তাফিজুর রহমান মাসুম নানা সংকটের কথা তুলে ধরে বলেন, আশ্রয়ণ প্রকল্পটিতে যাঁরা বসবাস করছেন, তাঁদের দুর্ভোগের শেষ নেই। পাশের হলতা নদীতে জোয়ারের পানি একটু বাড়লেই ঘরগুলো প্লাবিত হয়ে যায়। নদীর পাড়ে উপযুক্ত বেড়িবাঁধ না থাকায় সব সময় আতঙ্কে থাকেন এখানকার বাসিন্দারা। অনেক কষ্টে বসবাস করতে হয় তাঁদের। খাবারের পানির গভীর নলকূপটিও এক বছর ধরে নষ্ট। কোনো কর্মসংস্থান না থাকায় অনেকে ঘর পেয়েও তাতে তালা দিয়ে বিভিন্ন শহরে চলে গেছেন।
বামনার উপজেলার বুকাবুনিয়া ইউপি চেয়ারম্যান সাইদুর রহমান সবুজ বলেন, ‘আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘর বরাদ্দ দিয়েছে উপজেলা প্রশাসন। আমরা শুধু প্রকৃত ভূমিহীনদের সুপারিশ করেছি। শুনেছি লক্ষ্মীপুরা আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘরে অনেকে বসবাস করছেন না। যদি কেউ বসবাস না করেন, তাহলে তাঁকে বাদ দিয়ে প্রকৃত ভূমিহীনদের ঘর বরাদ্দ দেওয়া উচিত।’
বামনার ইউএনও অন্তরা হাওলাদার বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর দেওয়া উপহারের ঘর নিয়ে সুবিধাভোগীরা কোনো অনিয়ম করতে পারবেন না। যাঁরা ঘর পেয়েও বসবাস করছেন না, সেই ঘরগুলো অন্য ভূমিহীনদের বরাদ্দ দেওয়া হবে।’