২৭ এপ্রিল ২০২৪, শনিবার, ০৫:৫২:১৮ অপরাহ্ন
এমটিএফইর প্রতারণা: পাঁচ হাজারের বেশি সিইওর খোঁজ চলছে
  • আপডেট করা হয়েছে : ২৯-০৮-২০২৩
এমটিএফইর প্রতারণা: পাঁচ হাজারের বেশি সিইওর খোঁজ চলছে

মেটাভার্স ফরেন এক্সচেঞ্জ বা এমটিএফইর প্রতারণায় পাঁচ হাজারের বেশি সিইও (প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা) জড়িত আছেন। সারা দেশে তাঁরাই লেনদেন পর্যবেক্ষণ ও হিসাব রাখতেন। প্রতারণার ঘটনায় দেশের বিভিন্ন স্থানে করা কয়েকটি মামলা বিশ্লেষণ করে এবং মানুষের কাছ থেকে আসা তথ্য থেকে এমনটিই ধারণা পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি)। এ কারণে এই সিইওদের খোঁজে মাঠে নেমেছে সিআইডি।


এমটিএফইর ফাঁদে পড়ে কত মানুষ বিনিয়োগ করে টাকা খুইয়েছেন, সেই সংখ্যা গত সাত দিনেও বের করতে পারেননি তদন্তকারীরা। সিআইডি জানায়, এমটিএফইর প্রতিষ্ঠাতা দুবাইপ্রবাসী কুমিল্লার মাসুদ আল ইসলাম।


বগুড়া, কুমিল্লা ও কুষ্টিয়ায় করা কয়েকটি মামলা বিশ্লেষণ করে সিআইডির কর্মকর্তারা বলছেন, দেড় থেকে দুই কোটি টাকা যাঁরা বিনিয়োগ করিয়েছিলেন, এমন ব্যক্তিদের সিইও ঘোষণা করেছিল এমটিএফই। বিনিয়োগকারীদের টাকার ওপর মোটা অঙ্কের কমিশনও ছিল তাঁদের জন্য। এই সিইওদের মধ্যে অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তারাও আছেন। তাঁদের অনেককে নজরদারিতে রাখা হয়েছে। তবে নজরদারিতে থাকা কয়েকজনের দাবি, তাঁরা নিজেরাও লাখ লাখ টাকা খুইয়েছেন।


জানতে চাইলে সিআইডির বিশেষ সুপার বাছির উদ্দিন আজকের পত্রিকাকে বলেন, সারা দেশে মোট বিনিয়োগকারীর সংখ্যা এবং তাঁরা মোট কত টাকা বিনিয়োগ করেছেন, তার সঠিক হিসাব এখনো করা যায়নি। এ নিয়ে সিআইডির একাধিক ইউনিট কাজ করছে।


‘ঘরে শুয়ে-বসে সহজে আয়’, ‘ছয় মাসেই কোটিপতি’—এমন প্রলোভন দিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুক ও ইউটিউবে ব্যাপক প্রচার চালিয়েছিল এমটিএফই। বিভিন্ন ভিডিও ও বিজ্ঞাপন দেখে সাধারণ মানুষ বিনিয়োগে আগ্রহী হয়েছিলেন। গুগল প্লে-স্টোর থেকে যে কেউ এমটিএফই অ্যাপ ডাউনলোড করে রেজিস্ট্রেশন করতে পারতেন। রেজিস্ট্রেশনের পর তাঁদের নিজস্ব ওয়ালেটে ট্রেড করার জন্য ডলার রেখে দিতেন। সেই ডলারের ওপর হিসাবে মুনাফা যোগ হতো।


বগুড়ার গাবতলী উপজেলার বেলায়েত হোসেন জানান, গত জানুয়ারিতে তিনি বিদেশি একটি কোম্পানিতে ডলারে বিনিয়োগ করলে প্রতি মাসে ভালো মুনাফা পাওয়া যাবে বলে জানতে পারেন। এলাকার এক দুবাইপ্রবাসী বিষয়টি গ্রামের কয়েকজনকে জানান। তাঁর একজন আত্মীয়কে এমটিএফইর প্রতিনিধি নিযুক্ত করেন। সেই প্রতিনিধির মাধ্যমে পরের কয়েক মাসে কয়েকটি গ্রামের আড়াই শতাধিক মানুষ এমটিএফইতে বিনিয়োগ করেন।


বেলায়েতের দাবি, বলা হয়েছিল, মুনাফা প্রতিদিন হিসাবে যোগ হবে। মোবাইলেই সেই টাকা জমা, লাভ বা ক্ষতি—সব দেখা যাবে। ২০ হাজার টাকা জমা দিয়ে কয়েক মাস তিনি টাকা পেয়েছেন। লাভের টাকাও এই স্কিমেই বিনিয়োগ করেছেন। তাঁর অনেক আত্মীয়, বন্ধুদেরও এখানে যোগ দিতে উৎসাহিত করেছেন। এখন সবাই সর্বস্বান্ত হয়েছেন।


সিআইডির কর্মকর্তারা বলছেন, এমটিএফই বহুস্তর বিপণন বা মাল্টিলেভেল মার্কেটিং পদ্ধতিতে কাজ করেছে। বেশি লাভের আশায় লাখ লাখ মানুষ অ্যাপটিতে বিনিয়োগ করেছেন। কিছু মানুষ অবশ্য লাভের অংশ পেয়েছেন। তবে চূড়ান্ত বিচারে বিনিয়োগের সব অর্থই খোয়াতে হয়েছে গ্রাহকদের। ঢাকা, বরিশাল, বগুড়া, নওগাঁ, কুষ্টিয়া, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, রাজশাহী, কুমিল্লা ও সাতক্ষীরায় প্রতারণা হয়েছে সবচেয়ে বেশি। ধারণা করা হচ্ছে, সারা দেশে চার থেকে পাঁচ লাখ গ্রাহক এমটিএফইর ফাঁদে কয়েক হাজার কোটি টাকা খুইয়েছেন।


তদন্তসংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলছেন, দুবাইভিত্তিক এমটিএফইর প্রতিষ্ঠাতা ও মালিক কুমিল্লার মাসুদ আল ইসলাম। তিনিও দুবাইয়ে এমন একটি প্রতিষ্ঠানে বিনিয়োগ করেছিলেন। পরে নিজেই দেশে এই ব্যবসা করতে এই অ্যাপ চালু করেন। মাসুদকে দেশে ফেরানো না গেলে এমটিএফইতে বিনিয়োগকারীদের টাকা ফেরত আনা সম্ভব নয়। তাই ইন্টারপোলের সহায়তায় তাঁকে ফেরানোর প্রক্রিয়া চলছে। অবশ্য টাকা পাচার করে বিদেশে চলে যাওয়া কোনো অভিযুক্তকেই এখনো ফেরাতে পারেনি পুলিশ।


এমটিএফইর প্রতারণার অভিযোগের তদন্তের অগ্রগতি ও মাসুদের বিষয়ে জানতে চাইলে সিআইডির সাইবার পুলিশ শাখার বিশেষ পুলিশ সুপার রেজাউল মাসুদ বলেন, এমটিএফই নিয়ে প্রতিদিন দেশের কোনো না কোনো থানায় মামলা হচ্ছে। এ ঘটনায় এখনো তথ্য সংগ্রহের কাজ চলছে। মাসুদকে ফিরিয়ে আনার চেষ্টা চলছে। দেশে যাঁরা নেপথ্যে থেকে কাজ করেছেন, তাঁদেরও খোঁজা হচ্ছে। 


শেয়ার করুন