২৭ এপ্রিল ২০২৪, শনিবার, ০৬:০২:১৯ অপরাহ্ন
টুইটকারীদের তথ্য পেতে চায় সরকার
  • আপডেট করা হয়েছে : ০২-০৯-২০২৩
টুইটকারীদের তথ্য পেতে চায় সরকার

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে (আগের নাম টুইটার) বাংলাদেশিদের রাজনৈতিক ও মানবাধিকার বিষয়ে টুইট বা মন্তব্য বেড়ে যাওয়ায় অ্যাকাউন্টধারী ব্যক্তিদের তথ্য পাওয়ার উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। এ ক্ষেত্রে সরকারের দাবি, ফেসবুকের মতো টুইটারেও বাংলাদেশ সম্পর্কে নেতিবাচক প্রচার ও গুজব ছড়ানোয় এমন উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। টুইটার থেকে তথ্য পাওয়ার উপায় জানিয়ে এরই মধ্যে বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি) পুলিশের বিভিন্ন ইউনিটকে একটি নির্দেশনা দিয়েছে। পুলিশ ও বিটিআরসি সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।


সূত্রমতে, এক্স বা টুইটারে যারা সরকার, মানবাধিকার ও গণতন্ত্রের বিষয়ে গুজব ছড়াবে, তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নিতে এই উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। প্রথমে গুজব রটনাকারীর বিরুদ্ধে মামলা হবে। এরপর তদন্ত সংস্থা তাদের বিষয়ে টুইটারের কাছে তথ্য চাইবে। বিটিআরসি থেকে গত ৩০ জুন পুলিশের বিভিন্ন ইউনিটকে দেওয়া এক চিঠিতে তথ্য পাওয়ার উপায় বাতলে দিয়েছে। চিঠিতে সই করেছেন বিটিআরসির সিস্টেম অ্যান্ড সার্ভিস বিভাগের উপপরিচালক এস এম তাইফুর রহমান।


এই উদ্যোগের বিষয়ে জানতে চাইলে ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগের মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আইনবিরোধী কোনো কিছু হলে প্রথমে সেটি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী নজরদারি করে। এরপর তারা কোনো রিপোর্ট দিলে সে অনুযায়ী সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের প্রতিষ্ঠানগুলোকে বিটিআরসি অনুরোধ করে। ফেসবুক, টিকটক, ইউটিউবের বিষয়ে আমরা বেশি অভিযোগ পাই। এরপর টুইটার। টুইটারের বিষয়েও একই ব্যবস্থা নেওয়া হয়। তবে টুইটার তথ্য দেয় কম।’

তথ্যপ্রযুক্তিবিদেরা অবশ্য বলছেন, ব্যবহারকারীদের বড় অংশই নির্বাচনকেন্দ্রিক মৌসুমি ট্রাফিকার। সরকার উদ্যোগ নিলেও টুইটকারীর তথ্য পাওয়া সহজ হবে না।


বিটিআরসির একাধিক কর্মকর্তা জানান, গত জানুয়ারি থেকে টুইটারে বাংলাদেশিদের অ্যাকাউন্ট দ্রুত বাড়ছে। ওই সব অ্যাকাউন্ট থেকে রাজনৈতিক কর্মসূচি, আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচন, গণতন্ত্র, মানবাধিকার প্রসঙ্গ ছাড়াও সরকারপ্রধানসহ রাজনীতিকদের বিরুদ্ধে মন্তব্য বেড়েছে জ্যামিতিক হারে। ব্যবহারকারীরা বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থা, বিদেশি কূটনীতিক ও পশ্চিমা আইনপ্রণেতাদের ট্যাগ করেন। অনেক সময় রিটুইট বা পাল্টাপাল্টি মন্তব্যও করা হয়। গুজবও ছড়ানো হয়। অনেক টুইট করা হয় দেশের বাইরে থেকেও। গুজব রটনাকারীদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নিতে চায় সরকার। এ জন্য বিটিআরসি ও পুলিশকে উদ্যোগ নিতে বলা হয়েছে।


বিটিআরসির চিঠিতে বলা হয়েছে, বিভিন্ন মামলার তদন্তের স্বার্থে আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোর টুইটার ব্যবহারকারীদের তথ্য জানার প্রয়োজন হয়। এ জন্য টুইটার কর্তৃপক্ষের কাছে তথ্যের চাহিদা জানানো এবং তথ্যের গোপনীয়তা রক্ষার লক্ষ্যে নির্দিষ্ট দাপ্তরিক ই-মেইল থেকে যোগাযোগ করতে অনুরোধ করা হয়েছে। চিঠিতে আরও বলা হয়েছে, তদন্তের স্বার্থে টুইটার ব্যবহারকারীদের তথ্য চাওয়ার জন্য টুইটারের সিস্টেমে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের ই-মেইলসংক্রান্ত তথ্য তালিকাভুক্ত থাকা প্রয়োজন।


এক্স বা টুইটার সিস্টেমে পুলিশ ইউনিটগুলোকে কী কী তথ্য দিতে হবে, সে বিষয়ে বিটিআরসি একটি ছক বানিয়ে দিয়েছে, সেই অনুযায়ী তথ্য চাওয়া হয়েছে ওই চিঠিতে। ছকে সংস্থার নাম, যোগাযোগকারী কর্মকর্তার পদবি, মোবাইল ফোন নম্বর ও ই-মেইল আইডি চাওয়া হয়েছে। এরপর সেগুলো টুইটার সিস্টেমে দেওয়া হবে।


বিটিআরসির তথ্যমতে, বাংলাদেশে ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সংখ্যা ৬ কোটি ৬৯ লাখ ৪০ হাজার। এর মধ্যে ফেসবুক ব্যবহারকারী ৫ কোটি ৯২ লাখ, ইনস্টাগ্রাম ৬৫ লাখ, লিংকডইন ৭০ লাখ এবং টুইটার ব্যবহারকারী ১০ লাখ ৫০ হাজার।


প্রযুক্তিবিদ তানভীর হাসান জোহা আজকের পত্রিকাকে বলেন, টুইটারে বাংলাদেশিদের তৎপরতা সব সময় কম। তবে নির্বাচন সামনে রেখে এখানে বাংলাদেশের ট্রাফিক বেড়েছে। কারণ, বিএনপি চায় পশ্চিমাদের দৃষ্টি বাংলাদেশের দিকে টানতে। আর পশ্চিমা বিশ্বের বিভিন্ন সংস্থা, সরকার ও সরকারি দপ্তর টুইটার ব্যবহার করে। ফলে টুইটারে বিএনপির নেতা-কর্মীরা সহজে তাঁদের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে পারেন। বিএনপির নেতা-কর্মীরা বাংলাদেশের বিভিন্ন ইস্যু তাঁদের নজরে আনার চেষ্টা করছেন। অপরদিকে বিএনপির টুইটের কাউন্টার দিতে আওয়ামী লীগও টুইটারে তৎপর হয়েছে। তাই বাংলাদেশ থেকে টুইটার অ্যাকাউন্ট ও ট্রাফিক বেড়েছে। সত্য-মিথ্যা সবাই সবকিছু এখানে দিচ্ছেন। কেউ কেউ হয়তো গুজবও ছড়াচ্ছেন।


শেয়ার করুন