২১ নভেম্বর ২০২৪, বৃহস্পতিবার, ০৪:৫৪:৩৪ অপরাহ্ন
আপাতত লোডশেডিং ‘মুক্ত’ বিদ্যুৎ
  • আপডেট করা হয়েছে : ২৭-১১-২০২২
আপাতত লোডশেডিং ‘মুক্ত’ বিদ্যুৎ

চলতি বছরের জুলাই থেকে শুরু হওয়া বিদ্যুতের লোডশেডিং অবশেষে কমতে শুরু করেছে। সারাদেশে যখন শীতের আমেজ শুরু হয়েছে তখন নভেম্বরের শেষে এসে বিদ্যুৎ প্রায় স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে এসেছে। রাজধানীতে লোডশেডিং প্রায় নাই বললেই চলে। রাজধানীর বাইরে সারাদেশেও বিদ্যুৎ প্রায় স্বাভাবিক। যদিও শীতের পর আবারও লোডশেডিং ফিরে আসা নিয়ে শঙ্কায় সাধারণ গ্রাহকরা।

পোশাক কারখানাগুলোতেও বিদ্যুতের সংকট অনেকটা কেটেছে বলে জানিয়েছেন ব্যবসায়ী নেতারা। শনিবার সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশ পোশাক প্রস্ততকারক ও রফতানিকারক সমিতির (বিজিএমইএ) সভাপতি ফারুক হাসান বলেন, পোশাক কারখানায় সাম্প্রতিক সময়ে যে বিদ্যুৎ সমস্যা তৈরি হয়েছিল তার সমাধান হয়েছে। উৎপাদন অব্যাহত রয়েছে কারখানায়। আশা করছি বিদ্যুতের মতো গ্যাস সংকটেরও সমাধান হবে।

জ্বালানির দাম বৃদ্ধির কারণে গত ১৮ জুলাই প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত এক বৈঠকে এলাকাভিত্তিক লোডশেডিং, তেল দিয়ে বিদ্যুৎ উৎপাদন স্থগিত ও সরকারি-বেসরকারি অফিসের কিছু কার্যক্রম ভার্চুয়ালি এবং সপ্তাহে একদিন পেট্রোল পাম্প বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।

সেদিন বৈঠক শেষে প্রধানমন্ত্রীর বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিষয়ক উপদেষ্টা তৌফিক-ই-ইলাহী চৌধুরী সংবাদিকদের বলেন, ধৈর্য্য সহকারে এই সংকট মোকাবেলা করতে হবে। সবাইকে নিজ উদ্যোগে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি ব্যবহারে সাশ্রয়ী হতে হবে। পৃথিবীর অনেক উন্নত রাষ্ট্র, যাদের অনেক টাকা পয়সা আছে, তাদেরও লোডশেডিং হচ্ছে। ব্রিটেনে হচ্ছে, অস্ট্রেলিয়ায় হচ্ছে, জাপানে হচ্ছে।

এরপর থেকেই রাজধানীতে শিডিউল করে লোডশেডিং শুরু হয়। প্রথম দিকে রাজধানীতে দিনে দু-এক ঘণ্টা করে লোডশেডিং দেওয়া হয়। কিন্তু দিন দিন লোডশেডিংয়ের সময় বাড়তে থাকে। গত অক্টোবরের শুরুর দিকেও লোডশেডিংয়ের অবস্থা ছিল ভয়াবহ। তীব্র লোডশেডিংয়ের কবলে পড়েন রাজধানীবাসী। রাজধানীর কোথাও কোথাও তিন ঘণ্টা আবার কোথাও চার ঘণ্টা করেও লোডশেডিং ছিল। এমনকি রাতের বেলাতেও লোডিশেডিং দেওয়া হয় অনেক এলাকায়। এ নিয়ে সব মহলেই ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া দেখা যায়।

লোডশেডিং পরিস্থিতি নিয়ে উত্তপ্ত হয় জাতীয় সংসদও। গেল সংসদ অধিবেশনে প্রশ্নোত্তর পর্বে বিএনপির সংসদীয় দলের নেতা হারুনুর রশীদ অভিযোগ করেন, এই খাতে হরিলুট চলছে। বিষয়টি নিয়ে একদিন সংসদে সাধারণ আলোচনা হওয়া দরকার। জবাবে সাধারণ আলোচনার পক্ষে একমত প্রকাশ করে বিদ্যুৎ জ্বালানি ও খনিজসম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বলেন, জোট সরকারের আমলে দিনে ১৭ ঘণ্টা দেশ অন্ধকারে ছিল। বিদ্যুৎ চাওয়ায় গুলি করে মানুষ হত্যা করা হয়েছে। রেন্টাল-কুইক রেন্টাল কোম্পানিকে ৮৬ হাজার টাকা দেওয়ার সত্যতা জানতে চান বিরোধী দল জাতীয় পার্টির মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নু।

তবে নভেম্বর থেকে নতুন করে কোনো লোডশেডিং শিডিউল দিচ্ছে না বিদ্যুৎ কোম্পানিগুলো। গত কয়েকদিন ঢাকা পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেডের (ডিপিডিসি) ওয়েবসাইটে কোনো লোডশেডিং শিডিউল পাওয়া যায়নি।

লোডশেডিং না থাকায় খুশি গ্রাহকরাও। রাজধানীর মগবাজার এলাকার বাসিন্দা মাহফুজ ঢাকা মেইলকে বলেন, কিছুদিন আগেও দিনে ৪-৫ ঘণ্টা বিদ্যুৎ থাকত না। এমনকি রাতেও লোডশেডিং হতো। কয়েকদিন ধরে লোডশেডিং নাই বললেই চলে। এখন শীত আসছে। না জানি শীত চলে গেলে কি অবস্থা হয়!

মুগদা এলাকার এক বাসিন্দা বলেন, কয়েকদিন আগে বিদ্যুৎ যাওয়া-আসার মধ্যে থাকত। এক সপ্তাহ ধরে যাচ্ছে না। আমরা চাই এই অবস্থা যেন সারা বছর থাকে।

এদিকে বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (বিপিডিবি) ওয়েবসাইটে দেওয়া তথ্যানুযায়ী, ২৬ নভেম্বর (শনিবার) সারাদেশে বিদ্যুতের চাহিদা ছিল দিনে ৮৫০০ মেগাওয়াট, সন্ধ্যায় ১০০০০ মেগাওয়াট। অন্যদিকে ২৫ নভেম্বর (শুক্রবার) বিদ্যুতের উৎপাদন ছিল দিনে ৮২১৪, সন্ধ্যায় ৯১১৭ মেগাওয়াট।

এ বিষয়ে বিপিডিবি উপ-পরিচালক শামিম হাসান ঢাকা মেইলকে বলেন, শীতের কারণে বিদ্যুতের চাহিদা কমছে। ফলে উৎপাদনে ঘাটতি পড়ছে না। আশা করছি আগামী তিন মাস এ ধারাবাহিকতা থাকবে। তবে তিন মাস পর কি হবে বলা যাচ্ছে না। সরকার চেষ্টা করা যাচ্ছে যেন লোডশেডিং না দিতে হয়। ডিসেম্বরে একটি কয়লা-ভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র উৎপাদনে যাওয়ার কথা। সেটা উৎপাদনে গেলে আরও ৫০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ যোগ হবে। ফলে অনেকটা চাহিদা পূরণ হবে।

শেয়ার করুন