২১ নভেম্বর ২০২৪, বৃহস্পতিবার, ১১:১১:২৮ অপরাহ্ন
সরকারের তিন মেয়াদে বিদ্যুতে ক্যাপাসিটি চার্জ ১ লাখ ৪৯২৭ কোটি টাকা
  • আপডেট করা হয়েছে : ০৫-০৯-২০২৩
সরকারের তিন মেয়াদে বিদ্যুতে ক্যাপাসিটি চার্জ ১ লাখ ৪৯২৭ কোটি টাকা

বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বলেছেন, বর্তমান সরকারের তিন মেয়াদে ৮২টি আইপিপি বিদ্যুৎ কেন্দ্র এবং ৩২টি রেন্টার বিদ্যুৎ কেন্দ্রের বিপরীতে চলতি বছরের ৩০ জুন পর্যন্ত ১ লাখ ৪ হাজার ৯২৬ কোটি ৮১ লাখ টাকা ক্যাপাসিটি চার্জ বা রেন্টাল পেমেন্ট পরিশোধ করা হয়েছে।


আজ মঙ্গলবার জাতীয় সংসদে সিলেট-২ আসনের সংসদ সদস্য মোকাব্বির খানের প্রশ্নের জবাবে বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী এসব কথা জানান। স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে প্রশ্নোত্তর টেবিলে উত্থাপন করা হয়। 


মন্ত্রীর তথ্য অনুযায়ী অনুযায়ী ৮২টি আইপিপি (ইনডিপেনডেন্ট পাওয়ার প্রডিউসার) বিদ্যুৎ কেন্দ্রের মধ্যে ৭০ টিকে ক্যাপাসিটি চার্জ প্রদান করতে হয়েছে। এসব বিদ্যুৎ কেন্দ্রকে ক্যাপাসিটি চার্জ বাবদ ২০০৯ সাল থেকে এ পর্যন্ত (৩০ জুন ২০২৩) ৭৬ হাজার ২৪২ কোটি ৮ লাখ টাকা পরিশোধ করা হয়েছে। এর মধ্যে সব চেয়ে বেশি ক্যাপাসিটি চার্জ পেয়েছে বাংলাদেশ-চায়না পাওয়ার কোম্পানি লি.। এ বিদ্যুৎ কেন্দ্রকে গত সাড়ে ১৪ বছরে সাত হাজার ৪৫৫ কোটি ৩১ লাখ টাকা ক্যাপাসিটি চার্জ পরিশোধ করা হয়েছে। সর্বোচ্চ পরিমাণ চার্জ প্রাপ্ত অন্যান্য আইপিপি বিদ্যুৎ কেন্দ্রের মধ্যে রয়েছে-মেঘনা পাওয়ার লি.-কে ৫ হাজার ৪৭৫ কোটি ১২ লাখ টাকা, রুরাল পাওয়র কো. লি-কে চার হাজার ৪ কোটি ৮ লাখ, সামিট মেঘনাঘাট পাওয়ার লি. কে তিন হাজার ৬৪৪ কোটি ৩৯ লাখ, সেমক্রপ এনডব্লিউপিসি লি. কে দুই হাজার ৮২৩ কোটি ৬৬ লাখ, এপিআর এনার্জিকে দুই হাজার ৭৮৮ কোটি ৪ লাখ, সিম্মিট বিবিয়ানা পাওয়ার কো. লি.-কে দুই হাজার ৬৮৩ কোটি ৩ লাখ, হরিপুর পাওয়ার লি. কে দুই হাজার ৫৫৭ কোটি ৬৩ লাখ, ইউনাইটেড আশুগঞ্জ এনার্জি লি. কে দুই হাজার ৩৭৬ কোটি ৬৪ লাখ ও বাংলা ট্র্যাক পাওয়ার ইউনিট-১ লি.-কে এক হাজর ৮৫৩ কোটি ২২ লাখ টাকা। 


গত তিন মেয়াদে ৩২টি ভাড়াভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র (রেন্টাল পাওয়ার প্ল্যান্ট) গুলোতে ভাড়া বাবদ প্রদান করা হয়েছে ২৮ হাজার ৬৮৪ কোটি ৭৩ লাখ টাকা। এর মধ্যে অ্যাগ্রেকো ইন্টারন্যাশনাল প্রজেক্টস তার ৫টি ইউনিটের মাধ্যমে ছয় হাজার ৪১১ কোটি ২২ লাখ টাকা পেয়েছে। এছাড়া অ্যাগ্রেকো ইন্টারন্যাশনাল প্রজেক্টস (১৪৫ মে. ও) দুই হাজার ৩৪১ কোটি ২৮ লাখ, কেপিসিএল (ইউনিট-২) কে এক হাজার ৯২৮ কোটি ৫৪ লাখ টাকা, সামিট নারায়ণগঞ্জ পাওয়ার লি.-কে এক হাজার ৫৬৮ কোটি ৬১ লাখ টাকা, অ্যাগ্রেকো ইন্টারন্যাশনাল প্রজেক্টস (৮৫ মে. ও) লি. কে এক হাজার ৫৫৮ কোটি ২৩ লাখ টাকা, ডাচ বাংলা পাওয়ার অ্যান্ড অ্যাসোসিয়েটস লি.-কে এক হাজার ৫৩০ কোটি ৯ লাখ টাকা, অ্যাক্রন ইনফ্রাস্ট্রাকচার সার্ভিসেস লি. এক হাজার ৪৮৪ কোটি ৩০ লাখ, অ্যাগ্রেকো ইন্টারন্যাশনাল প্রজেক্টস (৯৫ মে. ও) লি. কে এক হাজার ৪৩৯ কোটি ১৯ লাখ টাকা, দেশ এনার্জি সিদ্ধিরগঞ্জ এক হাজার ৩৯১ কোটি ২১ লাখ, ম্যাক্স পাওয়ার লি.-কে এক হাজার ৩০৬ কোটি ৩৪ লাখ টাকা ও পাওয়ার প্যাক মুতিয়ারা কেরানীগঞ্জ ১ হাজার ২৯১ কোটি ৬১ লাখ টাকা। 


চট্টগ্রাম-১১ আসনের সংসদ সদস্য এম আবদুল লতিফের প্রশ্নের জবাবে বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী বলেন, বর্তমানে দেশে মোট বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতা ২৮ হাজার ১৩৪ মেগাওয়াট। এর মধ্যে ১ হাজার ১৯৫ মেগাওয়াট নবায়নযোগ্য উৎপাদিত হচ্ছে। প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণা অনুযায়ী ২০৪১ সালের মধ্যে ৪০ শতাংশ বিদ্যুৎ নবায়নযোগ্য জ্বালানি হতে উৎপাদনের ব্যবস্থা করতে হবে। এ জন্য সরকারি ও বেসরকারি উদ্যোগে বিদ্যুৎ বিভাগ বিভিন্ন প্রকল্প গ্রহণ করেছে। 


এম আবদুল লতিফের আরেক প্রশ্নের জবাবে খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বলেন, দেশের ক্রমবর্ধমান গ্যাসের চাহিদা পূরণে ২০২৫ সালের মধ্যে ৪৬টি (অনুসন্ধান, উন্নয়ন ও ওয়ার্কওভার) কূপ খননের পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে।


নসরুল হামিদ বলেন, গ্যাসের সর্বোত্তম ব্যবহার নিশ্চতকল্পে আবাসিক শ্রেণির গ্রাহক পর্যায়ে ৪ লাখ ৩৪ হাজার গ্যাস প্রি-পেইড মিটার এবং শিল্প ও সিএনজি শ্রেণির গ্রাহক পর্যায়ে ৩ হাজার ২৩৯টি ইভিসি মিটার স্থাপন করা হয়েছে। পর্যায়ক্রমে সকল আবাসিক গ্রাহককে প্রি-পেইড মিটারের আওতায় আনার পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে। 


ঢাকা-৪ আসনের সংসদ সদস্য সৈয়দ আবু হোসেনের প্রশ্নের জবাবে জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী জানান, ২০০৯ সাল হতে চলতি বছরের আগস্ট পর্যন্ত ২১টি অনুসন্ধান কূপ খননের মাধ্যমে ৬টি গ্যাস ক্ষেত্র আবিষ্কৃত হয়েছে। এতে দৈনিক ৫০০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস উৎপাদন বৃদ্ধি পেয়েছে। ৬টি গ্যাস ক্ষেত্র হচ্ছে সুন্দলপুর, শ্রীকাইল, রূপগঞ্জ, ভোলা নর্থ, জকিগঞ্জ ও ইলিশা।


বগুড়া-৫ আসনের সংসদ সদস্য হাবিবর রহমানের প্রশ্নের জবাবে নসরুল হামিদ জানান, ২০২২-২৩ অর্থ বছরে পল্লী বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের নিট লোকসান দুই হাজার ৫৬৩ কোটি টাকা। এ সময়ে ডেকসোর নিট লোকসান ২২৬ কোটি ৬৯ লাখ টাকা, একই অর্থ বছরের ৯ মাসে ডিপিডিসির কর পরবর্তী লোকসান ৪৬ কোটি ৫৪ লাখ টাকা। 


কাজিম উদ্দিন আহম্মেদের প্রশ্নের জবাবে প্রতিমন্ত্রী জানান, প্রতিবেশী ভারত হতে ছয়টি চুক্তির মাধ্যমে দুই হাজার ৬৫৬ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমদানি করা হচ্ছে।


শেয়ার করুন