২১ নভেম্বর ২০২৪, বৃহস্পতিবার, ০৬:৩৭:০৭ অপরাহ্ন
চোখের জলে বিদায় নিলেন রাণীনগরের সাদা মনের ইউএনও শাহাদাত হুসেইন
  • আপডেট করা হয়েছে : ১১-০৯-২০২৩
চোখের জলে বিদায় নিলেন রাণীনগরের সাদা মনের ইউএনও শাহাদাত হুসেইন

নওগাঁর রাণীনগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শাহাদাত হুসেইনের বদলিজনিত বিদায়ী সংবর্ধনা প্রদান করা হয়েছে। সাদা মনের মানুষ, সৎ ও সততার উদাহরণ হিসেবে উপজেলাবাসীর কাছে পরিচিত ছিলেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শাহাদাত হুসেইন। বদলিজনিত কারণে তিনি টাঙ্গাইল জেলার কালিহাতি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা হিসেবে যোগদান করেছেন।


উপজেলার যে কোন শ্রেণিপেশার মানুষের জন্য নির্বাহী কর্মকর্তার দুয়ার ছিলো সব সময়ের জন্য খোলা। কেউ তার কাছে সহযোগিতা নিতে এসে কখনোও তার দপ্তর থেকে সরকারিভাবে কিংবা ব্যক্তিগতভাবে সহযোগিতা না পেয়ে খালি হাতে ফিরে গেছেন এমন নজির নেই। বরং তার অনুপস্থিতিতে কেউ যদি তার দপ্তরে এসে সেবা না পেয়ে চলে যাওয়ার খবরে তিনি ব্যথিত হয়েছেন। এভাবেই তিনি উপজেলার সাধারণ মানুষসহ সকল শ্রেণিপেশার মানুষের হৃদয়ে স্থান করে নিয়েছিলেন।


এই উপজেলায় অনেক ভালো কাজের দৃষ্টান্তর রেখে গেলেন রাজশাহীর বাগমারা উপজেলার সন্তান শাহাদাত হুসেইন। তিনি নিজ উদ্যোগে উপজেলা প্রশাসনের সহযোগিতা নিয়ে বছরের পর বছর পরিত্যক্ত পড়ে থাকা উপজেলা পরিষদ প্রাঙ্গনের একমাত্র শিশু পার্কটিকে আধুনিকায়নের মাধ্যমে একটি সুন্দর ও ছিমছাম পরিবেশের মধ্য সময় কাটানোর জন্য পার্কটি সকলের উন্মুক্ত করেছেন। আধুনিকায়ন করেছেন উপজেলা পরিষদ সেমিনার কক্ষ। যে কোনো বিষয়ে পাওয়া অভিযোগগুলোর অধিকাংশ সমস্যার ঘটনাস্থলে পরির্দশন সাপেক্ষে সেবা গ্রহিতাদের হয়রানির শিকার না করেই শুনানির মাধ্যমে দ্রুত সমাধান করার চেষ্টা করেছেন।


গোপনে সংবাদ পেয়ে মাদকের আখড়ায় নিজে অভিযান পরিচালনা করে জড়িতদের আইনের আওতায় আনা, মধ্যরাতে বাল্যবিয়ের খবর পেয়ে সেখানে গিয়ে বিয়ে বন্ধ করে বাল্য বিয়ের শিকার হওয়া মেয়ের ইচ্ছে মাফিক পড়ালেখার সকল ব্যবস্থা গ্রহণ করাসহ শত শত ভালো কাজের মাধ্যমে তিনি উপজেলার প্রায় প্রতিটি মানুষের মনে একজন সাদা মনের মানুষ হিসেবে জায়গা করে নিয়েছেন। সহযোগিতার বার্তা নিয়ে গরিব ও অসহায় শিক্ষার্থীদের পাশে থেকেছেন সব সময়।


অভিযোগের ভিত্তিতে উপজেলায় চলমান মডেল মসজিদের নির্মাণ কাজে নিম্নমানের সামগ্রী ব্যবহার বন্ধ করে তিনি মানসম্মত উপকরণ দিয়ে নির্মাণ কাজ চলমান রেখেছেন। তিনি গত বছরের মে মাসে এই উপজেলায় নির্বাহী কর্মকর্তা হিসেবে যোগদানের পর থেকে উপজেলাবাসীর জীবনমান উন্নয়ন করার জন্য সরকারের চলমান বিভিন্ন প্রকল্পের কাজ সঠিক মানে শেষ করতে এবং উন্নত সেবা প্রদানের মাধ্যমে তিনি শতাধিক ভালো কাজের দৃষ্টান্তর স্থাপন করেছেন। এছাড়া উপজেলা প্রশাসনের সকল বিভাগের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের কাছে তিনি ছিলেন একজন ভালো বন্ধু ও অভিভাবক।


রোববার বিকেলে উপজেলা অফিসার্স ক্লাবের পক্ষ থেকে এক আবেগঘন অনুষ্ঠানের মাধ্যমে এই সাদা মনের মানুষটিকে বদলিজনিত বিদায়ী সংবর্ধনা প্রদান করা হয়। এসময় শাহাদাত হুসেইনের চোখের পানি অনুষ্ঠানে উপস্থিত প্রশাসনের অন্যান্য দপ্তরের কর্মকর্তা, সাংবাদিক, ইউপি চেয়ারম্যানসহ অন্যান্য সুধি ব্যক্তিদের হৃদয়ে নাড়া দেয়।


সবাই চোখে ছলছল জল নিয়ে প্রিয় মানুষটিকে বিদায় দেয়। পরে সন্ধ্যায় উপজেলা অফিসার্স ক্লাবে ইউএন’র পাঠচক্র নামের একটি ছোট লাইব্রেরি উদ্বোধন করা হয়। এসময় উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান বীরমুক্তিযোদ্ধা আব্দুর রউফ দুলু, ভাইস চেয়ারম্যান পরিদা বেগম, সহকারি কমিশনার (ভ’মি) মোহাম্মদ হাফিজুর রহমানসহ অন্যান্য সকল দপ্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারীবৃন্দ, সাংবাদিকবৃন্দ ও সুধীবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।


বিদায়বেলায় ইউএনও শাহাদাত হুসেইন বলেন এই উপজেলা আমার কাছে নিজের পরিবারের মতোই ছিলো। আমি যতদিন বেঁচে থাকবো ততদিন এই উপজেলার মানুষদের কাছ থেকে পাওয়া হৃদয় নিগড়ানো ভালোবাসকে ভুলতে পারবো না। এছাড়া বই মানুষের পরম বন্ধু। সঠিক জ্ঞান আহরণের মাধ্যমে একটি মেধাবী জাতি গড়তে বই পড়ার কোন বিকল্প নেই।


বর্তমানের মোবাইল ভিত্তিক জ্ঞান আহরণ থেকে দূরে রেখে উপজেলার মানুষদের মাঝে বই পড়ার অভ্যাস গড়ে তুলতে ও বইপ্রেমীদের মনের খোরাক যোগাতে বিদায় বেলায় আমি এই উপজেলাবাসীকে উপহার দিয়ে গেলাম এই ছোট্ট লাইব্রেরীটি। এখানে যে কোন শিক্ষার্থী কিংবা বইপ্রেমী মানুষরা এসে বই পড়তে পারবেন।


শত ব্যস্ততার ভিড়েও আমি সবাইকে এখানে এসে দিনের যে কোন সময় মাত্র দুই ঘন্টা নিজের পছন্দমাফিক বই পড়ার জন্য অনুরোধ জানিয়ে যাচ্ছি। সৃষ্টিকর্তার সৃষ্টি সম্পর্কে, পরকালের জীবন সম্পর্কে, নিজের সম্পর্কে ও বিশ্বকে জানতে বই পড়ার কোন বিকল্প নেই। আমি আশা রাখবো আমার এই ক্ষুদ্র প্রচেষ্টা এই উপজেলাবাসীর উপকারে আসবে এবং এই কার্যক্রমগুলো আগামীতেও অব্যাহত রাখা হবে।


শেয়ার করুন