মাত্র ৬ কিলোমিটার সড়কপথ। পাহাড়ের বুক চিরে এই রাস্তা নির্মাণে প্রকল্পটি হাতে নেওয়া হয়েছিল ২৭ বছর আগে। এর বহুদিন পরে এসে বদলে যায় প্রকল্প। দুবার বদলায় নকশা, বারবার বাড়ে ব্যয়, কিন্তু শেষ হয় না প্রকল্পের কাজ। দুই যুগের বেশি সময় পার করে দেওয়া এই প্রকল্পের নাম ‘বায়েজিদ লিংক রোড প্রকল্প’।
চট্টগ্রাম শহরের অভ্যন্তরে যানজট নিরসন এবং ঢাকা অভিমুখী যানবাহনগুলোকে শহর থেকে বের হওয়ার জন্য সহজ রাস্তা করে দেওয়ার লক্ষ্যে হাতে নেওয়া এই প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (সিডিএ)। সংস্থাটির নির্বাহী প্রকৌশলী রাজিব দাশ জানান, প্রকল্পের মেয়াদ বাড়িয়ে ২০২৩ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত ধরা হয়েছিল। কিন্তু কাজ শেষ না হওয়ায় আগামী বছরের জুন পর্যন্ত মেয়াদ বাড়ানোর প্রস্তাব করা হয়েছে। প্রকল্পের ৯৫ শতাংশ কাজ সম্পন্ন হয়েছে বলেও জানান এই প্রকৌশলী।
প্রকল্পের কাজ পুরোপুরি শেষ না হলেও বায়েজিদ লিংক রোড দিয়ে গাড়ি চলাচল শুরু হয়েছে বেশ আগেই। যদিও এখনো আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করা হয়নি সড়কটির। সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা জানান, যে ৫ শতাংশ কাজ বাকি আছে, তা মূলত রাস্তার দুই পাশে থাকা পাহাড় ব্যবস্থাপনাকেন্দ্রিক। বর্ষায় পাহাড়ধস ঠেকাতেই এই ব্যবস্থাপনা দরকার।
এ বিষয়ে সিডিএর প্রধান প্রকৌশলী কাজী হাসান বিন শামস বলেন, এই প্রকল্পের কাজ একেবারে শেষ পর্যায়ে। শুধু পাহাড় ব্যবস্থাপনা-সংক্রান্ত সামান্য কাজ বাকি রয়েছে। নানা কারণে এই প্রকল্পের কাজ সম্পন্ন করা সময়সাপেক্ষ হয়েছে।
তথ্যমতে, এই সড়ক নির্মাণের প্রকল্প নেওয়া হাতে নেওয়া হয়েছিল ১৯৯৬ সালে। ব্যয় নির্ধারণ করা হয়েছিল ৪০ কোটি টাকা। কিন্তু প্রকল্পটি বাস্তবায়নে বারবার হোঁচট খায় সিডিএ। নানা চড়াই-উতরাই পেরিয়ে পরবর্তী সময়ে ২০১৩ সালের ৫ নভেম্বর নতুন করে প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়। সড়কের নকশায় পরিবর্তনও আনা হয়। দুই লেনের সেই প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয় ১৭২ কোটি ৪৮ লাখ টাকা। ২০১৬ সালে এসে আবারও নকশায় পরিবর্তন হয়। এবার দুই লেনের পরিবর্তে চার লেনে উন্নীত করা হয়। ব্যয় বেড়ে দাঁড়ায় ৩২০ টাকা। গত বছরের আগস্ট মাসে আরেক দফায় প্রকল্প ব্যয় বাড়িয়ে ৩৫৩ কোটি টাকা করা হয়। এর মধ্যে ৩৩ কোটি টাকা সিডিএর নিজস্ব তহবিল থেকে দিতে নির্দেশ দেয় অর্থ মন্ত্রণালয়, যার পরিপ্রেক্ষিতে সড়কটিতে টোল নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় সিডিএ।
সিডিএ থেকে প্রাপ্ত তথ্যমতে, এই সড়ক দিয়ে চলতে মোটরসাইকেলকে টোল দিতে হবে ১০ টাকা। টোল হার তিন চাকার গাড়ির ক্ষেত্রে ১৫ টাকা, প্রাইভেট কার, জিপ ও মাইক্রোবাসের ক্ষেত্রে ৫০ টাকা, পিকআপ ও মিনিবাসের ক্ষেত্রে ৮০ টাকা। তা ছাড়া এই রোডে বড় বাস চলাচলে ১০০ টাকা, চার চাকার ট্রাকের ক্ষেত্রে ১২০ টাকা এবং ছয় চাকার ট্রাকের ক্ষেত্রে ১৫০ টাকা টোল দিতে হবে। কাভার্ড ভ্যান চলাচলে সবচেয়ে বেশি ২০০ টাকা টোল দিতে হবে।
নগরীর বায়েজিদ সংযোগ সড়ক প্রকল্প বাস্তবায়নের এই হাল সম্পর্কে সিডিএ-সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা জানান, পাহাড় কাটার কারণে পরিবেশের জরিমানা, পাহাড় ব্যবস্থাপনা ও রেললাইন-সংক্রান্ত জটিলতাসহ নানা কারণে এই প্রকল্প বাস্তবায়নে সময় ও খরচ দফায় দফায় বেড়ে যায়। বর্তমানে শুধু পাহাড় ব্যবস্থাপনাকেন্দ্রিক জটিলতা প্রকল্পের শতভাগ কাজ সম্পন্নে বাধা হয়ে রয়েছে। আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন না হলেও ওই সড়ক দিয়ে নিয়মিত যানবাহন চলাচল করছে।