রোগীর প্রস্রাব আটকে গেলে তা বের করতে কিংবা অস্ত্রোপচারের কাজে ব্যবহৃত ক্যাথেটারের দাম বেড়ে দ্বিগুণ হয়ে গেছে। ৭০-১৩০ টাকা দামের প্রতিটি ফোলি ক্যাথেটার ১৮০-২৬০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এতে ভোগান্তিতে পড়েছে রোগী ও স্বজনেরা। ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরও এই দাম নিয়ন্ত্রণে তেমন ভূমিকা রাখছে না।
ক্যাথেটার হচ্ছে চিকিৎসায় ব্যবহৃত একধরনের সরু টিউব বা পাইপ। চিকিৎসার প্রয়োজনে বিশেষ করে শরীর থেকে প্রস্রাব বা অন্য কোনো তরল নিষ্কাশন, শরীরে তরল বা গ্যাস প্রয়োগ করা এবং শল্যচিকিৎসার প্রয়োজনে কোনো যন্ত্র বা সরঞ্জাম দেহের ভেতরে ঢোকানোসহ বিভিন্ন কাজে এই ক্যাথেটার ব্যবহৃত হয়।
স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগের সাবেক প্রধান অধ্যাপক আবু আজহার বলেন, আইসিইউ কিংবা পোস্ট অপারেটিভে থাকা রোগী এবং সংজ্ঞাহীন রোগীরা টয়লেটে গিয়ে প্রস্রাব করতে পারে না। ফলে তাদের জন্য ক্যাথেটার খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
জানা গেছে, বার্ডিয়া ব্র্যান্ডের প্রতিটি টু-ওয়ে ফোলি ক্যাথেটারের কোম্পানি-নির্ধারিত দাম ১৩০ টাকা। অথচ বাজারে সেটি ২৫০-২৬০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। কোথাও কোথাও এর দাম ২৮০-৩০০ টাকায়। আর ৭০-৮০ টাকা দামের চীনা কোম্পানির সিলিকন ক্যাথেটার খুচরা পর্যায়ে ১৮০-২০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
জানা গেছে, মানের দিক থেকে ভালো হওয়ায় সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত হয় বার্ডিয়া ব্র্যান্ডের ক্যাথেটার। প্রতিষ্ঠানটি আমদানির জন্য ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরে আবেদন করলেও অনুমোদনে সমস্যা তৈরি হচ্ছে। চাহিদা ১ লাখ দেওয়া হলে অনুমোদন দেওয়া হয় ১০ হাজার। ফলে বাজারে ক্যাথেটারের সংকট তৈরি হয়েছে। সেই সুযোগে চোরাই পথে আনা ক্যাথেটার বাজারে ঢুকছে।
ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগসংলগ্ন মেসার্স শাহজালাল ড্রাগ হাউসে গতকাল মঙ্গলবার ১৪-১৬ সাইজের একটি চীনা ফোলি ক্যাথেটারের দাম চাওয়া হয় ১৮০ টাকা। পাশে মেসার্স অপু মেডিকেল হলের বিক্রেতা সাহাদাত ১২-১৪-১৬ সাইজের বার্ডিয়া ব্র্যান্ডের একটি ক্যাথেটারের দাম ২৫০ টাকা হাঁকান। অথচ কোম্পানির বেঁধে দেওয়া দাম ১৩০ টাকা। এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে সাহাদাত হোসেন বলেন, ‘এটি আমি বলতে পারব না। আমরা কেনা দামের চেয়ে কিছুটা বাড়তি লাভে বিক্রি করি।’
পুরান ঢাকার সার্জিক্যাল সামগ্রীর ব্যবসায়ী জসিম উদ্দিন বলেন, ‘বার্ডিয়া ব্র্যান্ডের টু-ওয়ে ক্যাথেটারের দাম ১৬০ টাকা। তবে খুচরা বাজারে কী দামে বিক্রি হচ্ছে সে বিষয়ে কিছু বলার নেই। সরবরাহের সংকটে দাম বেড়েছে। আগামী শনি বা রোববারের মধ্যে বাজারে সরবরাহ হবে বলে আমদানিকারকদের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে।’
আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান লাইল্যাক প্রাইভেট লিমিটেডের ব্যবস্থাপক ফারুক আহমেদ বলেন, ডলার সংকটে আমদানি ব্যাহত হয়। কয়েকটি ব্যাংক ঘুরে ঋণপত্র খোলা হয়। কিন্তু ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তর থেকে অনুমোদন দেওয়া হচ্ছে না। ফলে বাজারে সরবরাহের সংকট তৈরি হয়েছে। অনুমোদন পাওয়া গেলে এক সপ্তাহের মধ্যে বাজারে সরবরাহ দেওয়া সম্ভব হবে।
সার্বিক বিষয়ে জানতে চাইলে ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরের উপপরিচালক মো. নূরুল আলম আজকের পত্রিকাকে বলেন, বাড়তি দামে ক্যাথেটার বিক্রির সুযোগ নেই। প্রতিটি ক্যাথেটারের গায়ে মূল্য লেখা থাকার নিয়ম রয়েছে। কেউ ব্যত্যয় করলে সার্ভে করে দোষী প্রমাণ পেলে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।