০৫ অক্টোবর ২০২৫, রবিবার, ০৯:২১:৪১ অপরাহ্ন
দখল হয়ে যাচ্ছে রাজশাহী শহরের ফুটপাত
  • আপডেট করা হয়েছে : ০৫-১০-২০২৫
দখল হয়ে যাচ্ছে রাজশাহী শহরের ফুটপাত

দখল, দূষণ ও যানজটে প্রতিদিন নাকাল হচ্ছে রাজশাহীর লাখো মানুষ। অথচ দেশে গণ্ডি পেরিয়ে বিদেশেও সবচেয়ে পরিচ্ছন্ন ও স্বাস্থ্যকর নগরীর 'স্বীকৃতি' পেয়েছিল এই রাজশাহী। ভুক্তভোগী মানুষ বলছে, অভিভাবকহীন রাজশাহী সিটি করপোরেশন (রাসিক) বর্তমানে মহানগরবাসীর প্রয়োজনীয় সেবা নিশ্চিত করতে পারছে না। নগরীকে দূষণ ও যানজটমুক্ত এবং পরিচ্ছন্ন রাখতেও ব্যর্থ হচ্ছে রাসিক। নগরীর ছোট থেকে বড় সড়ক, গলিপথ থেকে হাঁটাপথ—সব জায়গা বেদখল হয়ে আছে।


ভুক্তভোগীরা জানায়, 'এক বছর আগেও রাজশাহী মহানগরীর এমন বিবর্ণ ও মলিন ছিল না। রাসিকের মেয়র এবং ৩০টি ওয়ার্ডে কাউন্সিলর নেই এক বছর পেরিয়েছে। বিভিন্ন দপ্তরের সরকারি কর্মকর্তাদের মেয়র ও কাউন্সিলরদের অতিরিক্ত দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। কিন্তু তারা মাসে এক বারও কাউন্সিলর অফিসে যান না। নগরবাসীর কোনো সমস্যা সরাসরি শোনেন না। মহানগরীর ৩০টি ওয়ার্ডের কোথায় কী সমস্যা, তা জানারও চেষ্টাও করছেন না দায়িত্বপ্রাপ্ত সরকারি কর্মকর্তারা। ওয়ার্ড কার্যালয়ে মাস ঘুরেও কোনো কর্মকর্তার দেখা মেলে না। ওয়ার্ড কাউন্সিলর অফিসের পিয়ন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তার অফিসে গিয়ে ফাইলে স্বাক্ষর নিয়ে আসেন।


ভুক্তভোগীরা জানায়, মহানগরীর কেন্দ্রস্থল সাহেববাজার, গণকপাড়া, কুমারপাড়া, নিউ মার্কেট, শিরোইল, ঘোষপাড়া, সিপাইপাড়া, সিঅ্যান্ডবি, লক্ষ্মীপুর, কোর্টবাজার ও কোর্ট স্টেশন, তালাইমারী, কাজলা, বিনোদপুর, শালবাগান ও ভদ্রাসহ সর্বত্র টাইলস বসানো পুরো ফুটপাত দখল করে বসছে দোকান। এসব দোকানের জিনিসপত্র সাজিয়ে রাখা হচ্ছে মূল সড়কের একাংশ দখল করে। তারপর থাকছে বিভিন্ন যানবাহন পার্কিং। ফলে গাড়ি চলাচলের জন্য থাকছে মূল সড়কের এক তৃতীয়াংশ।



ভুক্তভোগীরা বলেন, প্রায় ২৫০ বছরের পুরাতন শহর রাজশাহীর নগর পরিবহনে বাস নেই। অথচ শহরের ১২টির বেশি পয়েন্টে গড়ে উঠেছে আন্তঃজেলা ও দূলপাল্লার বাস কাউন্টার। নগরীর ভদ্রা মোড়ের পূর্বাংশের পুরো ফুটপাতসহ অর্ধেকের বেশি সড়ক দখল করে বানানো হয়েছে আন্তঃজেলা বাসের কাউন্টার ও স্ট্যান্ড। পথচারীরা এই পথে চলাচল করতে পারেন না। এছাড়া ভদ্রা মোড় থেকে রাজশাহী রেল স্টেশন পর্যন্ত প্রায় দেড় কিলোমিটার ফুটপাত দখল করেছেন ভাঙারি ব্যবসায়ীরা। এই সড়কের রেশম ভবনের দেওয়াল ঘেঁষে বিস্তৃত ফুটপাত দখলে নিয়ে বসানো হয়েছে ২০টির বেশি অস্থায়ী দোকান। শিরোইল বাস টার্মিনালের সামনের বড় সড়কটির ওপর সারিবদ্ধভাবে দাঁড়িয়ে যাত্রী নিচ্ছে বাস। এখানে রেলওয়ে স্টেশনের দক্ষিণ পার্শ্বের দেওয়াল ঘেঁষে ফুটপাতের একাংশে গড়ে উঠেছে প্রস্রাবখানা। বাকি অংশ দখল করে বসানো হয়েছে বিভিন্ন পণ্যের দোকান। শিরোইলের ঢাকা বাস কাউন্টার থেকে রেশম কারখানার দেওয়াল ঘেঁষে পুরো ফুটপাতের ওপর টিনের ছাউনি দিয়ে বসেছে ৫০টির বেশি স্থায়ী দোকানপাট। এই সড়কের উত্তরাংশে সারি সারি বাস রেখে দুই-তৃতীয়াংশ সড়ক ব্লক করে রাখা হয়।


অন্যদিকে নগরীর প্রাণকেন্দ্র সাহেববাজারের এক ইঞ্চি ফুটপাতও দখলের হাত থেকে রক্ষা পায়নি। জিরো পয়েন্ট থেকে সোনাদিঘির মোড় ছাড়াও মালোপাড়া থেকে সোনাদিঘি পর্যন্ত ফুটপাতের ওপর বসছে শত শত দোকান। সাহেব্বাজারের সড়কের অর্ধেকের বেশি জায়গায় অবৈধ দোকানে গিজগিজ করছে। এ এলাকায় ফুটপাত দিয়ে পথচারীর দুই কদমও হেঁটে চলার উপায় নেই।


এদিকে গোটা মহানগরীর সর্বত্র মূল সড়কের পাশেই ময়লা-আবর্জনার স্তূপ জমে থাকছে দিনের পর দিন। মহানগরীর সিটি বাইপাসের বহরমপুর, হড়গ্রাম, বুলনপুর, বড়কুঠি, শালবাগান, সাগরপাড়া, লক্ষ্মীপুর, উপশহর, সপুরা, তেরখাদিয়া প্রভৃতি এলাকায় মোড়ে ময়লা-আবর্জনার স্তূপ জমে থাকছে কয়েক দিন পর্যন্ত। এ বিষয়ে জানতে চাইলে রাসিকের প্রধান পরিচ্ছন্ন কর্মকর্তা শেখ মো. মামুন বলেন, 'ময়লা ও বর্জ্য অপসারণের কাজগুলো নিয়মতান্ত্রিকভাবেই হচ্ছে। কোথাও বর্জ্য পড়ে থাকলে এবং আমরা খবর পেলে তাৎক্ষণিক অপসারণের উদ্যোগ নেওয়া হয়।'


রাসিকের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা রেজাউল করিম জানান, 'ফুটপাত অবৈধ দখলমুক্ত করতে আমাদের অভিযান অব্যাহত রয়েছে। উচ্ছেদের আগে আমরা মাইকিং করে ফুটপাত থেকে দোকানপাট সরিয়ে নিতে অনুরোধ করছি। কেউ নিজেরা সরিয়ে না নিলে আমরা উচ্ছেদে অভিযান পরিচালনা করছি।'


শেয়ার করুন